অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীরা সাধারণ স্কুলে পড়বে : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিবন্ধী এবং অটিস্টিক ছেলে মেয়েদেরকে আলাদা স্কুলে নয়, সাধারণ স্কুলে ভর্তির তাগাদা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

যুক্তরাষ্ট্রে হুইল চেয়ার ও ট্রলিতে করে সুস্থদের মতো করেই স্কুলে শিক্ষার্থীদের যাওয়ার দৃশ্য নিজের চোখে দেখেছেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

১১ তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে বরিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

এর আগে অটিস্টিক বালিকা ইসাবা হাফিজ জানায়, সে অটিস্টিক বলে তাকে স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি। এ জন্য প্রাথমিক সাময়িকী এবং অষ্টম শ্রেণি সাময়িকী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি।

এখন ইসাবা দশম শ্রেণির বই পড়ছে। সে বলে, ‘আমি জানি না আমি এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারব কি না।’

পরে প্রধানমন্ত্রী এই বালিকার বক্তব্য উল্লেখ করে বলেন, ‘ইসাবা বলেছে এইচএসসি পরীক্ষা সে দিতে পারবে কি না, আমি বলব, সে অবশ্যই পরীক্ষা দিতে পারবে।’

প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিকদের সহশিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি চাই না তাদের পড়াশোনা সম্পূর্ণ আলাদাভাবে হোক। আলাদা ব্যবস্থা করতে হবে এটা ঠিক। তারপরেও ইনক্লুসিভ এডুকেশন। অর্থাৎ তারা সাধারণ ছেলে মেয়েদের সঙ্গে বসে পড়াশোনা করবে।’

‘আমি নিজে দেখেছি, পুতুল যখন কাজ করত জ্যাকসন ভিলে, আমি নিজে গেছি ওখানকার স্কুলগুলো দেখতে। এমনও আমি দেখেছি, একটা ট্রলিতে শুয়ে আছে, তার কোনো সেন্স নেই, সে দেখতে পারে না, কিন্তু সে ওই স্কুলের ছাত্র। তার ক্লাসফ্রেন্ড যারা, তারাই তাকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে স্কুলে।’

‘এমন অনেক প্রতিবন্ধী, হুইল চেয়ার ঠেলছে কারা, তাদেরই ক্লাসফ্রেন্ড যারা।’

‘এই মানসিকতাটা তাদের ছোটবেলা থেকেই গড়ে উঠছে, এই ধরনের ছেলে মেয়ে হলে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমাদের দেশেও সেটা করা প্রয়োজন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যখন ইসাবার বক্তব্য শুনছিলাম, আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। এই মানসিকতা ত্যাগ করে আমাদের আরও সংবেদনশীল হয়ে আরও সহানুভূতিশীল হয়ে আরও আদর ভালোবাসা দিয়ে এদেরকে কাছে টেনে নিতে হবে।’

‘তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। এটা তো তাদের জন্মের দোষ না। আল্লাহ মানুষকে বিভিন্নভাবে সৃষ্টি করেন। কাজেই তাদের অবহেলার চোখে দেখা ঠিক না।’

সুস্থরা পারে না, প্রতিবন্ধীরা স্বর্ণপদক আনে

প্রায় ২০ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিকদের সুপ্ত প্রতিভা বের করে আনার কথা বলেন।

এই ধরনের ছেলে মেয়েদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খেলাধূলায় তারা অনেক ভালো হবে। যারা সুস্থ তারা গোল্ড মেডেল আনতে না পারলেও আমার প্রতিবন্ধীরা নিয়ে আসে প্রতি বছর। স্বর্ণ জয় করে তারাই।’

‘এমনকি ক্রিকেটও খেলে তারা। এমনকি স্পেশাল অলিম্পিক থেকেও তারা স্বর্ণ জয় করে নিয়ে আসে, যেটা সুস্থরা পারে না।’

প্রতিবন্ধীদের খেলাধুলার জন্য আন্তর্জাতিক মানের একটি ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে খালি জায়গায় তাদের খেলাধুলার ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। সেখানে তারা খেলবে সুস্থ ছেলে মেয়েদের সঙ্গে।

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এবং সর্বকালের সেরা সঙ্গীতজ্ঞের একজন মোজার্টের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, হকিং প্রতিবন্ধী এবং মোজার্ট অটিস্টিক হলেও তারা বিশ্বের সেরা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে অটিস্টিক এবং প্রতিবন্ধীদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে নীল আলো জ্বালানো হয়। দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে এই নীল আলো জ্বালানো হবে তিন দিন।

বক্তৃতা পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিশুদের সঙ্গে সময় কাটান। তিনি বেশ কয়েকজনের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দেন।

প্রতিবন্ধীদের আজীবন সেবা দেয়া হবে

এ সময় প্রতিবন্ধীদেরকে আজীবন সেবা দিতে সরকারের পরিকল্পার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।

জানান ২০১৩ সালে করা নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট ট্রাস্টের পক্ষ থেকে একটি কমপ্লেক্স তৈরি হবে যাতে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সেখানে সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

‘আমি জানি, অনেক বাবা মা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকে, তারা মরে গেলে কে তার বাচ্চাটাকে দেখবে। কে তার সুরক্ষা করবে। এদের কথা চিন্তা করেই আমরা এই ব্যবস্থা নিয়েছি।’

‘তাছাড়া সূচনা ফাউন্ডেশন নামে একটা ফাউন্ডেশনও করে দিয়েছি।…আমাদের উদ্দেশ্যটা হলো অভিভাবক, শিক্ষক এবং সাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি এবং তাদেরকে ট্রেইনিং দেয়া।’

প্রতিবন্ধী এবং অটিস্টিকদের উৎসাহ দিতে তাদের ছবি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ড করার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। যাদের ছবি বাছাই করা হয়, তাদেরকে এক লাখ করে টাকাও দেয়া হয় বলে জানান শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা জানান, একেবারে ছোট বেলায় অটিজমের লক্ষণ স্পষ্ট হয় না। কিন্তু দেড় থেকে তিন বছরের মধ্যে এটি দেখা যায়। এ সময় লক্ষণ স্পষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। জানান, শুরুতে চিকিৎসা এবং প্রশিক্ষণ হলে শিশুরা সুস্থ হয়ে বড় হয়ে উঠতে পারবে।

অনুষ্ঠানে অটিজম নিয়েও তিনি সফল ব্যক্তি এবং অটিজম নিয়ে কাজ করায় মোট নয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়।

পরে অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী ছেলে মেয়েদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হক, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেননও এ সময় বক্তব্য রাখেন।