অতিরিক্ত যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট খেয়েই হোটেলে তরুণ-তরুণীর মৃত্যু

রাজধানীর ফার্মগেটের সম্রাট আবাসিক হোটেল থেকে উদ্ধার হওয়া প্রেমিক যুগলের কক্ষ থেকে যৌন উত্তেজক বড়ির আলামত পাওয়া গেছে। তারা দু’জনেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) আমিনুল ইসলাম সজল ও মরিয়ম আক্তার জেরিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রেমিকের বয়স ২১ বছর, আর প্রেমিকার বয়স মাত্র ১৯ বছর।

তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে হোটেল ভাড়া নেয়। আমিনুল তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। মরিয়ম ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্রী ছিলেন।

ধারণা করা হচ্ছে, তারা মাত্রারিক্ত যৌন উত্তেজক বড়ি খাওয়ার পর স্ট্রোক করে মারা গেছেন। তারা দু’জনই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

ঘটনাস্থলে আলামত সংগ্রহকারী তেজগাঁও থানার এসআই শরীফুল ইসলাম বলেন, আবাসিক হোটেলের ওই কক্ষ থেকে ৪টি যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এছাড়াও দু’টি ট্যাবলেটের খোসা পাওয়া গেছে। যেগুলো আলামত হিসেবে সংগ্রহ করা হয়েছে। ট্যাবলেটগুলো লাল রঙের। এ ঘটনার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তাদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

এদিকে বুধবার (৩ এপ্রিল) নিহতদের ময়নাতদন্ত শেষ হয় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে। তবে বিকেল পর্যন্ত কোনো চিকিৎসক এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছুই জানাননি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ২/১ দিনের মধ্যে পেলে জানানো হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

মরিয়মের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে। তিনি রাজধানীর ধানমন্ডির এলাকায় মেসে থেকে পড়ালেখা করতেন। কুমিল্লার লাঙ্গলকোট এলাকায় বাড়ি হলেও আমিনুল ফার্মগেট এলাকায় মেসে থাকতেন। সোমবার (১ এপ্রিল) তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে হোটেল কক্ষ ভাড়া নেন। তবে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি হোটেল কর্তৃপক্ষ। হোটেলের ৮ তলার কক্ষটি এখন পুলিশ তালা মেরে রেখেছে।

এ ব্যাপারে তেজগাঁও থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘খাটের ওপর দুই জনের লাশ পাওয়া যায়। মরিয়মের দুই পাসহ শরীরের একটি অংশ খাট থেকে নিচের দিকে ঝুলে ছিল। আবার তাদের দেহে কোনো আঘাতের চিহ্নও পাওয়া যায়নি। তারা যে কক্ষে ছিল তা ভেতর থেকে লাগানো ছিল। এ কারণে এখনই বলা মুশকিল তারা কীভাবে মারা গেছে। দুজনের ব্যাগ থেকে আইডি কার্ডের মাধ্যমে নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে।’

যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট খেয়ে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকির বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, মাত্রাতিরিক্ত যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট খেলে মানুষের কেবল শারীরিক ক্ষতিসাধন নয় মৃত্যুও হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট সেবনের ফলে শরীরের ব্লাড সার্কুলেশন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এরমধ্যে সেবনকারী যদি প্রেসারের রোগী হন, তা হবে ভয়াবহ, সেই রোগীর প্রেসার বেড়ে ব্রেন স্ট্রোক করে মারা যেতে পারেন। এর ফলে ব্রেনে রক্তক্ষরণ হয়। এটি দুই ধরনের হয়ে থাকে- প্রথমত রক্ত জমাট বেঁধে স্ট্রোক হওয়া, দ্বিতীয়ত রক্তনালী ছিঁড়ে মৃত্যু হওয়া। রক্তনালী ছিঁড়ে যে ব্রেন স্ট্রোক হয় সেটিকে মেডিকেলের ভাষায় বলে ‘হেমারেজিক স্ট্রোক’।

যৌন উত্তেজক ওষুধ খেলে দেহের ব্লাড সার্কুলেশন বেড়ে যায়। একই সঙ্গে ব্যক্তি যেই অঙ্গের জন্য ওই ওষুধ খেয়েছেন সেই অঙ্গের ব্লাড সার্কুলেশন অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায়। সেইসঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রেসার ও ব্রেইনের ব্লাড সার্কুলেশন বেড়ে যায়। তখন পুরো শরীরের অভ্যন্তরে এক রকম ভয়াবহ পরিবর্তন শুরু হয়। যার ফলে ওইসব ট্যাবলেট সেবনকারী ব্যক্তি মারা যেতে পারেন। তবে এসব ওষুধের ঝুঁকি, এর মাত্রা ও ব্যক্তির শরীরের সক্ষমতার উপর নির্ভর করে।