অনশনে বসে হলের সিট ফিরে পেলেন বাকৃবির সেই ছাত্রী

‘ছাত্রলীগের মিছিলে না যাওয়ায়’ হল থেকে বের করে দেয়ার প্রতিবাদে অনশনে বসে সিট ফিরে পেয়েছেন ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আফসানা আহমেদ ইভা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী

ভর্তির পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া হলে আবাসনের ব্যবস্থা হয় ইভার। তিনি জানান, সোমবার রাতে তাকে বের করে দেয় হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। আর মঙ্গলবার সকালে তিনি হল ফটকের সামনে অনশনে বসেন। অবশ্য ছাত্রলীগ দাবি করেছে, ইভা হলের সিনিয়রদের সঙ্গে ‘বেয়াদবি’ করেন বলে তাকে বের করে দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

ইভা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের একজন কর্মী। এই ঘটনায় তার সংগঠনও এই ঘটনায় ক্যাম্পাসে মিছিল করে।

এই ঘটনায় ছাত্রলীগের ও ছাত্রফ্রন্টের নেত্রীদেরকে নিয়ে বৈঠকে বসে হল কর্তৃপক্ষ। এক দফা বৈঠকে সুরাহা না হওয়ায় দুপুরে আবার অনশন শুরু করেন ওই ছাত্রী। পরে বিকাল চারটার দিকে দুই পক্ষ সমঝোতায় আসলে ওই ছাত্রীকে হলে তার সিটে তুলে দিয়ে আসে হল কর্তৃপক্ষ।

ইভার অভিযোগ, গত ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলে যোগ দিতে তাকে বাধ্য করার চেষ্টা করা হয়। তিনি না যাওয়ায় তাকে হুমকি-ধমকি দেন ছাত্রলীগের নেত্রীরা। হলের প্রভোস্ট ইসমত আরা বেগমকে লিখিতভাবে অভিযোগ জানানোর পর হুমকি বেড়ে যায়।

ইভা জানান, সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার কক্ষ থেকে বিছানাপত্র, বইপত্র, কাপড়চোপড়সহ বাইরে এনে ফেলে তাকে হল থেকে বের করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি তানিয়া আফরিন সিনথি এবং কর্মী সাদিয়া স্বর্ণা, ইলা ও শিলা। তিনি জানান, এ সময় প্রভোস্ট তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ার সেন্টারে অবস্থান করার কথা বলেন।

হলে সংস্কার কাজ চলায় হেলথ কেয়ার সেন্টারে কিছু ছাত্রীকে রাখা হয়েছে। কিন্তু ওই ইভা নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে সেখানে যেতে রাজি হননি। পরে তিনি হলের ফটকে অবস্থান করেন। আর সেখানে টিকতে না পেরে রাত তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রফ্রন্ট সাধারণ সম্পাদক ও ওই হলের ছাত্রী ইসরাত জাহানের কক্ষে চলে যান।

জানতে চাইলে রোকেয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ইসমত আরা বেগম বলেন, ‘আমরা এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেই। আফসানাকে (ইভা) সামায়িকভাবে হেলথ কেয়ার সেন্টারে অন্যান্য ছাত্রীদের সাথে থাকতে বলি। কিন্তু সে তা করেনি।’

মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে ইভা রোকেয়া হলের সামনে অনশনে বসেন। এর দুই ঘণ্টা পর প্রক্টর অফিসে বৈঠক বসে ইভার বিষয়ে। এতে সমাধান না হওয়ায় আবার অনশনে বসেন ওই ছাত্রী। পরে বেলা তিনটায় তিনটার দিকে প্রক্টর আতিকুর রহমান, সাবেক প্রক্টর জাকির হোসেন, ছাত্রফ্রন্ট ও ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে আবার বৈঠক শুরু হয়। ওই বৈঠকেই ইভার বিষয়টি সুরাহা হয়। আর ইভাকে তার সিটে তুলে দিয়ে আসে হল কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আতিকুর রহমান বলেন, ‘কয়েকজন ছাত্রীর সাথে একটু ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছিল। হলের প্রভোস্টকে সাথে নিয়ে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। ছাত্রীটি বর্তমানে নিজ হলের সিটে অবস্থান করছে।’

এদিকে ছাত্রলীগ দাবি করেছে, ওই ছাত্রীর ব্যবহারের কারণে হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরাই তাকে বের করে দিয়েছে। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রলীগ নেত্রী সিনথির নেতৃত্বে বেশ কিছু ছাত্রলীগ কর্মী ইভার বিরুদ্ধে হল ফটকের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। তাদের দাবি, ইভা হলে উঠার পর থেকেই জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘বেয়াদবি’ করছিলেন। এমনকি প্রভোস্টের সঙ্গেও ‘বেয়াদবি’ করেন। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাঁকে হল থেকে বের করে দিয়েছে।