অবশেষে সেন্টমার্টিন যাচ্ছে পর্যটকবাহী জাহাজ, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে অবশেষে সোমবার থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে। তবে মিয়ানমারের চলামান পরিস্থিতিতে নাফ নদী দিয়ে জাহাজ চলাচল কতটুকু নিরাপদ, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন টেকনাফ সীমান্তের লোকজন।

টেকনাফের ইউএনও মো. জাহিদ সিদ্দিকী বলেন: প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অধিকাংশই ঘুরতে যান দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। এসময় প্রতিদিন অন্তত ৫ হাজারের বেশি পর্যটক সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাতায়ত করে থাকে।

‘মূলত: মধ্য অক্টোবর থেকে এ রুটে চালু হয় পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল। কিন্তু এ বছর গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারে সৃষ্ট সহিংসতার জেরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তাজনিত কারণে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি না পাওয়ায় মৌসুম শুরু হলেও তা চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ গত বৃহস্পতিবার টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি প্রদান করে। তবে এ ব্যাপারে লিখিত কোন ধরণের পত্র হাতে আসেনি।’

প্রশাসনিক কাজে ঢাকায় অবস্থান করা কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন সিদ্ধান্তের বিষয়টি রোববার রাতে মুঠোফোনে মৌখিকভাবে অবহিত করেছেন বলে জানান টেকনাফের ইউএনও।

তিনি বলেন: টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নাফ নদীর বেশ কয়েকটি স্থানে ডুবন্ত চর জেগে ওঠায় জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এতে ওইসব স্থানে জাহাজগুলোকে নাফ নদীর শূন্যরেখা পেরিয়ে মিয়ানমার অভ্যন্তর দিয়ে চলাচল করতে হয়। বিগত বছরগুলোতে এ নিয়ে কোন ধরণের সমস্যার উদ্ভব না হলেও এ বছর রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাহাজ চলাচল নিয়ে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি সম্ভাবনা তৈরী হয়।

এ ব্যাপারে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পর্যালোচনা করেই পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে এ নিয়ে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি আছে কি না জানতে চাইলে টেকনাফের ইউএনও কোন ধরণের মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ইউএনও জাহিদ বলেন: রোহিঙ্গা ইস্যুতে নাফ নদীতে জাহাজ চলাচল নিয়ে নিরাপত্তাজনিত কোন ধরণের ঝুঁকি আছে কি না এ ব্যাপারে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে আলাপ করা হবে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের উর্ধ্বতন সহকারি পুলিশ সুপার ( এএসপি ) হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী এ ব্যাপারে লিখিত বা মৌখিক কোন ধরণের সিদ্ধান্ত এখনো অবহিত নন বলে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন: টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল চালুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো কোন ধরণের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এ নিয়ে অনুমতি পাওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন মহল থেকে খবর শুনতে পেয়েছি।

১৯৬ দিন বন্ধ থাকায় পর পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে টেকনাফ ছেড়ে যাবে বলে নিশ্চিত করেছেন কেয়ারি সিন্দাবাদ জাহাজের টেকনাফের ব্যবস্থাপক মো. শাহ আলম।

তিনি বলেন: এ নৌপথে চলাচলের জন্য সারা বছরের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু সাগর উত্তাল ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে ১৯৬ দিন ধরে জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।

‘বর্তমানে সাগর শান্ত ও পযর্টকদের কথা চিন্তা করে আবারও পযর্টক পারাপারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সোমবার থেকে পুনরায় জাহাজ চলাচল শুরু করা হচ্ছে। সোমবার থেকে প্রতিদিন সকাল সাড়ে নয়টায় টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে জাহাজ ছেড়ে যাবে।’

মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি জাহাজ চলাচল নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করে টেকনাফ সীমান্তের মানুষ। টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জেলে আবদুল গফুর জানান: মিয়ানমারের বাহিনীর গুলি বর্ষণ, জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়া সহ নানা কারণে তারা নাফ নদীতে মাছ ধরতে পারছেন না। এর মধ্যে কিভাবে মিয়ানমারের সীমান্ত ঘেঁষে এসব জাহাজ চলাচল করবে?

সুজন-এর টেকনাফ উপজেলার নেতা আবুল হোসেন জানান: নাফ নদীতে ভেলায় রোহিঙ্গা ভেসে বেড়াচ্ছে। এর মধ্যে মিয়ানমার বাহিনীর বর্বর আচরণও লক্ষ্য করা গেছে। এ পরিস্থিতি জাহাজ চলাচল নিরাপত্তার শঙ্কা বাড়িয়ে দিতে পারে। জাহাজ মালিকদের মধ্যে থাকা জামায়াত বিএনপির একটি চক্র এ জাহাজ চলাচল করতে তৎপর। এর মধ্যে ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে কিনা তা সোমবারের পর জাহাজ চলাচল করলে পরিষ্কার হবে।