অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী : একই অঙ্গে কতো রূপ তার

থিয়েটার, ছোটপর্দা ও সিনেমায় সমানতালে দাপট দেখিয়ে চলা ক্যারেক্টার আর্টিস্টের নাম চঞ্চল চৌধুরী। থিয়েটার ও ছোট পর্দায় নিয়মিত অভিনেতা হিসেবে তার উপস্থিতি দেখা গেলেও বাংলাদেশের গত এক দশকের সবচেয়ে আলোচিত এবং একইসঙ্গে সুপারহিট সিনেমাগুলোর সাথেও জড়িয়ে আছে তার নাম। মনপুরা, মনের মানুষ, টেলিভিশন এবং সর্বশেষ আয়নাবাজি দিয়ে মাৎ করেছেন সিনেমা অঙ্গণ।

প্রচলিত অর্থে নায়কের কোনো দর্শনধারি তার মধ্যে না থাকলেও শুধু তার অভিনয় দেখার জন্য আকালের দিনেও সিনেমা হলে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে হাজারও মানুষ। সব মাধ্যমেই অভিনয়ে সাবলিল এই জনপ্রিয় অভিনেতার আজ জন্মদিন।

১৯৯৬ থেকে আরণ্যক নাট্যদলের সাথে মঞ্চে অভিনয় করেছেন তিনি। নানা বৈচিত্রময় চরিত্রে অভিনয় করে ছোট পর্দার দর্শকদের মন জিতে নিয়েছেন বারবার। তবে বড় পর্দায় চঞ্চল চৌধুরী যেনো এক মিরাকলের নাম! শুধু ছবি ‘হিট’ করার জন্য নয়, তার অভিনীত প্রতিটি চরিত্র ঘাঁটলে দেখা যাবে কতো বৈচিত্রপূর্ণ ও দক্ষ অভিনেতা তিনি!

২০০০ সালে বড় পর্দায় চঞ্চলের অভিষেক হয় তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘রূপকথার গল্প’ ছবির মধ্য দিয়ে। তবে মোটাদাগে গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘মনপুরা’ দিয়েই সাড়া ফেলেন চঞ্চল। সোনাই চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হন সব শ্রেণির দর্শকদের কাছে। ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি ব্যবসাসফল বাংলা চলচ্চিত্রের তালিকায় জায়গা করে নেয়। শুধু তাই নয়, সোনাই চরিত্রটিও দীর্ঘদিন জায়গা করে নেয় মানুষের মনে।

এরপর ২০১০ সালে ছোট্ট চরিত্র নিয়ে বড় পর্দায় ফিরলেও বেশ নাম কুড়ায় তা। বাংলা চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত নির্মাতা গৌতম ঘোষ পরিচালিত লালনের জীবনীধর্মী যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘মনের মানুষ’-এ পাগলা কালুয়ার চরিত্রে দেখা মিলে চঞ্চলের। প্রশংসিত হয় সবার কাছে। এরপর ফের বিরতি। প্রধান চরিত্র হিসেবেই প্রত্যাবর্তন তার। এবারো পুরোপুরি ভিন্ন চরিত্র নিয়ে। মেধাবী নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘টেলিভিশন’-এ দেখা যায় তাকে। সোলায়মান চরিত্রটিও অত্যন্ত নিঁখুত ভাবেই সম্পন্ন করেন চঞ্চল। যথারীতি সবার প্রশংসা কুড়োয়। ছবিটি মুক্তি পায় ২০১৩ সালে।

টেলিভিশনের পর ফের বিরতি। তিন বছর পর এবার ২০১৬ সালে নিয়ে ফেরেন বহুল প্রশংসিত চলচ্চিত্র ‘আয়নাবাজি’। অমিতাভ রেজার প্রথম চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্র শরাফত করিম আয়না হয়ে ভেলকি দেখান দর্শকদের। ছবিটি শুধু দেশের দর্শকের কাছেই নয়, প্রশংসা তুলে নেয় বিশ্বের সমস্ত বাংলা ভাষাভাষি মানুষের কাছে। টানা কয়েক মাস ছবিটি দেখতে হলে ভিড় করে সাধারণ দর্শক। যথারীতি শরাফত করিম আয়না হিসেবে মানুষের মনে গেঁথে যান চঞ্চল।

মাঝখানে বছর খানেক বিরতি শেষে ফের বড় পর্দায় ফেরার ঘোষণা দিলেন চঞ্চল। যথারীতি এবারও ব্যতিক্রমী চরিত্র নিয়েই আসছেন তিনি। ছবির নাম ‘দেবী’। যেখানে তাকে দেখা যাবে কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ সৃষ্ট মিসির আলী নামের চরিত্রে রূপদান করতে। সরকারি অনুদানে নির্মিত জয়া আহসান প্রযোজিত প্রথম সিনেমা হতে যাচ্ছে এটি। অনম বিশ্বাসের পরিচালিত ছবিটি মুক্তি পাবে আগামী সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখে।

সবকিছু মিলিয়ে বড় পর্দার চঞ্চলকে এক কথায় ব্যাখ্যা করা যায়, ‘একই অঙ্গে কতো রূপ তার’ এভাবে বলার মধ্য দিয়েই। তাইতো জন্মদিনে আয়নাবাজির নির্মাতা অমিতাভ রেজা চঞ্চলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখলেন,‘দুবছর আগের আয়না আর এখন মিসির আলী’!