অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদার সাজা বেড়ে ১০ বছর

জিয়া অরফানেজ মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া অপর আসামিদের ১০ বছরের সাজা বহাল রাখা হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আসন গ্রহণের পর আদালত বলেন, রায়ের কার্যকর অংশটুকু ঘোষণা করা হচ্ছে। তিনটি আপিল ( খালেদা জিয়া, সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ) খারিজ করা হলো। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা রিভিশন আবেদনের রুল যথাযথ ঘোষণা করা হলো। খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড করা হলো।

এ রায়ের ফলে সালিমুল হক ও শরফুদ্দিন আহমেদের ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রইল।

এদিকে এ রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই সুপ্রিম কোর্টের বর্ধিত ভবনের ১৭ নম্বর কক্ষের সামনে ছিল বাড়তি নিরাপত্তা।

রায় ঘোষণার সময় রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনালের মুরাদ রেজা, মোমতাজ উদ্দিন ফকির, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ , ফরহাদ আহমেদ, একরামুল হকসহ আইন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান, মোশাররফ হোসেন কাজল।

এ মামলয় খালেদার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেওয়া আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, আবদুর রেজাক খানসহ সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের আদালত কক্ষে দেখা যায়নি।

রায়ের পর খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, বেগম জিয়া ছিলেন এই মামলার মুখ্য আসামি। সেই গ্রাউন্ডে তার সাজা বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছিল। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে খালেদা জিয়ার সাজা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেছেন। ফলে মামলায় সব আসামির সাজাই ১০ বছর হল। আসামি পক্ষের যারা জামিনে ছিলেন তা বাতিল হয়ে গেল।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণে খালেদা জিয়া মুখ্য আসামি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন, এজন্যই উনার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়েছে। সাজা বাতিল না হলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। অপর আসামিদের ১০ বছরের সাজা বহাল রয়েছে।

এর আগে সোমবার বিকালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর কারাদণ্ডের রায় হাইকোর্টে বহাল থাকবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত নিতে আজকের দিন ধার্য করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আপিল আবেদনে তার খালাস চেয়েছেন। অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন চেয়েছেন। আর রাষ্ট্রপক্ষ বিচারিক আদালতের দেয়া ৫ বছরের সাজাই বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়েছে।

এর আগে এদিন দুপুরে এ মামলায় হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার আপিল নিষ্পত্তিতে সময় বাড়ানোর আবেদন খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ।

ফলে আগে নির্ধারণ করে দেয়া ৩১ অক্টোবর সময়ের মধ্যেই আপিল শুনানি শেষ করতে হচ্ছে।

এ ছাড়া এ মামলায় অর্থের উৎস স্পষ্ট করতে অতিরিক্ত সাক্ষ্যগ্রহণের বিষয়ে খালেদা জিয়ার যে আবেদনটি হাইকোর্টে নথিভুক্ত রাখা হয়েছে, সেটিও একদিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয় আদেশে।

কিন্তু আপিল বিভাগের এ আদেশের পর সোমবার বিকালে শুনানি শেষ করে রায়ের জন্য আজ মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ। সোমবার আপিল বিভাগে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী ও জয়নুল আবেদীন।

উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট ফারুক হোসেন ও ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান গত ৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।

এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। এর পর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ২০ ফেব্রুয়ারি আপিল করেন।

২২ ফেব্রুয়ারি আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে খালেদা জিয়ার অর্থদণ্ড স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এর পর ৭ মার্চ অপর আসামি কাজী সালিমুল হক কামালের আপিলও শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়। ২৮ মার্চ খালেদা জিয়ার সাজা বাড়াতে দুদকের করা আবেদনে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

চার সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও খালেদা জিয়াকে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়। তবে আদালত বলে দেন, রুলের ওপর শুনানি হবে খালেদা জিয়ার আপিলের সঙ্গে।

আদালত আদেশে বলেন, দুদক আইনে সাজার রায়ের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ হয়ে এ ধরনের রিভিশন বা আপিল দুদক করতে পারে কিনা, সে বিষয়টি আলোচনা ও ব্যাখ্যার দাবি রাখে। ১০ মে আরেক আসামি শরফুদ্দিনের আপিলও শুনানির জন্য গ্রহণ করেন আদালত। ১২ জুলাই আপিল ও রুল শুনানি শুরু হয়।