অসুস্থ মাকে ফ্লোর থেকে বেডে তোলায় ছেলেকে পেটালেন ডাক্তার

এক কিশোরকে মারধরের ভিডিওটি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। পরে ওই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করে অনেকেই ডাক্তারের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে ওই ডাক্তারের বিচার চেয়েছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, ডাক্তারের হাতে মারধরের শিকার ওই কিশোরের নাম মো. জিলানী। সে পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া এলাকার মো. নেছার উদ্দিনের ছেলে। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মারধরের এ ঘটনা ঘটে। পরে কেউ একজন ওই মারধরের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। পরে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

ভাইরাল হওয়া ৫৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. আনোয়ার উল্লাহ হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে তেড়ে এসে জিলানী নামে এক কিশোরকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। হাসপাতালের নার্স, কর্মী ও চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সামনে প্রকাশ্যে ওই কিশোরকে মেরে আহত করেন ডা. আনোয়ার উল্লাহ।

এ সময় হাতে স্যালাইন লাগানো এক নারী রোগী ডা. আনোয়ার উল্লাহকে নিবৃত্ত করতে গেলে বাধা উপেক্ষা করে জিলানীকে মারধরের পাশাপাশি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

তবে মারধরের শিকার হওয়ার পরও ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে ওই কিশোরকে ডাক্তারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। ভিডিওতে শোনা যায় ডাক্তারকে উদ্দেশ্য করে ওই কিশোর বলেছে, ‘অপরাধ করেছেন আপনারা, আর হেইতে কতা কইলে মোগো শাস্তি।’

মারধরের শিকার কিশোর জিলানীর ভাষ্য, আমার মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সোমবার সকাল ১০টার দিকে অচেতন অবস্থায় পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। হাসপাতালে নেয়ার পর দীর্ঘ এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আমার মাকে কোনো চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতালের ফ্লোরে ফেলে রাখেন নার্স ও চিকিৎসকরা। মায়ের কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে পরে আমি তাকে ফ্লোর থেকে নারী ওয়ার্ডের একটি বেডে তুলি। এ সময় এক নার্স এসে আমাকে নিষেধ করলে আমি তার নিষেধ উপেক্ষা করি। এর কিছুক্ষণ পরই ডা. আনোয়ার উল্লাহ এসে আমাকে মারধর করার পাশাপশি অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করেন। সবার সামনে আমাকে মারধর করে আহত করেছেন ডা. আনোয়ার উল্লাহ।

এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভীন বলেন, ডা. আনোয়ার উল্লাহর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ প্রথম নয়। এর আগেও আমরা এ ধরনের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে শুনেছি। কিন্তু পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটের কারণে তখন আমরা কোনো কথা বলিনি। কিন্তু এখন এই সীমা অতিক্রম করেছেন ডা. আনোয়ার উল্লাহ। আমরা তার শাস্তির দাবিতে এবার সোচ্চার হবো।

রোগীর স্বজনকে মারধরের কারণ জানতে চাইলে ডা. আনোয়ার উল্লাহ বলেন, নারী ওয়ার্ডে এক কিশোর ডাক-চিৎকার করছে, নার্সদের কাছে এ কথা শুনে আমি নারী ওয়ার্ডে যাই। এ সময় ওই কিশোরের কথা আমি মোবাইলে রেকর্ড করতে চাইলে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। তখন আমি তাকে মারধর করি।

মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হলে ওই কিশোরকে পুলিশে সোপর্দ না করে মারধর করা ঠিক হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি ডা. আনোয়ার উল্লাহ।

এ বিষয়ে জানতে বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন শাহিন খানের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি তিনি।

বরগুনার জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে এরকম ঘটনা যদি ঘটে থাকে, তাহলে একটি নিকৃষ্টতম ঘটনা ঘটিয়েছেন ওই চিকিৎসক। আমি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।