আখেরি চাহার সোম্বা সম্পর্কে জানে না জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি

সফর মাসের চাঁদ দেখতে সভায় বসলেও এ মাসের শেষ বুধবার যে আখেরি চাহার সোম্বা সেই তথ্য জানে না জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। তাই চাঁদ দেখার সংবাদ পর্যালোচনার পর কমিটির সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.)এর সুস্থতা লাভের সফর মাসের শেষ বুধবারের তাৎপর্যময় দিনটির বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। কোন তারিখে আখেরি চাহার সোম্বা পলিত হবে তা জানানো হয়নি বিজ্ঞপ্তিতে। অথচ সফর মাসের চাঁদ দেখা কমিটির সভার মূল বিষয়ই এটি।খবর জাগো নিউজের।

সফর মাসের চাঁদ দেখার বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা শায়লা শারমীন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের আকাশে শুক্রবার ১৪৩৯ হিজরি সনের পবিত্র সফর মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে শনিবার পবিত্র মুহাররম মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হবে এবং আগামী রোববার থেকে পবিত্র সফর মাস গণনা শুরু হবে।

শুক্রবার মাগরিবের নামাজের পর রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা বসে। এতে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত ধর্ম সচিব মো. আনিছুর রহমান।

এছাড়া সভায় সভায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. হাফিজুর রহমান, তথ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. মিজান-উল-আলম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল, অতিরিক্ত প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ফজলে রাব্বী, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপ-সচিব মো. শাফায়াত মাহবুব চৌধুরী, ওয়াক্ফ প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব কাজী নুরুল ইসলাম, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মজিবর রহমান, বাংলাদেশ টেলিভিশনের পরিচালক (প্রশাসন) মো. শাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, লালবাগ শাহী মসজিদের খতিব মাওলানা আবু রায়হান ও চকবাজার শাহী জামে মসজিদের খতীব মাওলানা শেখ নাঈম রেজওয়ান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরবি ‘আখেরি’ অর্থ শেষ ও ফারসি ‘চাহার সোম্বা’ মানে বুধবার। সফর মাসের শেষ বুধবারকে ‘আখেরি চাহার সোম্বা’ বলা হয়। ৬৩২ খৃষ্টাব্দের ২৭ সফরের বুধবার হযরত মুহম্মদ (স.) দীর্ঘ সময় রোগ ভোগের পর সুস্থতা বোধ করে গোসল করেছিলেন বলে হাদীস শরীফসহ বিভিন্ন কিতাবে উল্লেখ আছে। বৃহস্পতিবার থেকে রাসুল (স.) আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পরের রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার তিনি ইন্তেকাল করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আখেরি চাহার সোম্বার বিষয়ে কোন তথ্য না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা শায়লা শারমীন বলেন, ‘সভায় তো এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আখেরি চাহার সোম্বা তো মনে হয় সফর মাসে না, আপনার মনে হয় ভুল হচ্ছে।’

জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সদস্য সচিব ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘এটা কবে? হয়ত একটু ভুল হয়ে গেছে। ঠিক করে দেওয়া হবে।’

আজকের মিটিংয়ের মূল বিষয়ই তো এটি, ভুল হল কীভাবে- বলতেই বিরক্তি প্রকাশ করে মহাপরিচালক বলেন, ‘প্যাচাচ্ছেন কেন? ওদের একটা ফরমেট থাকে সেভাবেই মনে হয় দিয়েছে। ঠিক করা হবে।’ বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সভায় সভাপতিত্ব করা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। সভায় তো আলেম-ওলামারা ছিলেন। এটা তো তারা বলবেন। আখেরি চাহার সোম্বার দিন তো সরকারি ছুটি থাকে না, তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। এ বিষয়ে আমি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কথা বলব।’

কিছুক্ষণ পর সচিব ফোন করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘একটু ভুল হয়ে গেছে। এটা ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে।’

সকল জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত চাঁদ দেখার তথ্য পর্যালোচনা করে হিজরি সনের মাস গণনা শুরু ও মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর তারিখ নির্ধারণে সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। পদাধিকার বলে এই কমিটির সভাপতি ধর্মমন্ত্রী।

আখেরি চাহার সোম্বা ১৫ নভেম্বর

জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোববার সফর মাস গণনা শুরু হলে আগামী ১৫ নভেম্বর দেশে (২৫ সফর) বুধবার আখেরি চাহার সোম্বা পালিত হবে।

বাংলাদেশে আখেরি চাহার সোম্বার দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে।