আখেরি মোনাজাতে যা বললেন মাওলানা যোবায়ের

দ্বিতীয় পর্বের মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ২০১৮ সালের বিশ্ব ইজতেমা। রোববার সকাল ১০টা ১৮ মিনিট থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত ২৭ মিনিট দীর্ঘ মোনাজাত পরিচালনা করেন বাংলাদেশ তাবলিগের মুরব্বি কাকরাইল মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ যোবায়ের।

কান্নাজড়িত মোনাজাতে প্রথমে আরবিতে হাদিস ও কুরআনে উল্লেখিত দোয়ার বাক্যগুলো বলেন তিনি। এরপর মাওলানা যোবায়ের বাংলায় দীর্ঘ সময় ধরে পৃথিবীর সব মানুষের জন্য ইহ ও পরকালীন কল্যাণ কামনা করেন।

তার সঙ্গে লাখো লাখো মানুষ আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন বলতে থাকেন। ময়দানের দুই পাশে আবদুল্লাহপুর ও টঙ্গীর দিকে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত মাইক লাগিয়ে দেওয়া হয়। ফলে পথে পথে এবং এসব এলাকার বাসার ছাদগুলোতেও অসংখ্য মানুষ দোয়ায় শরিক হন।

দোয়ায় মাওলানা যোবায়ের বলেন, হে আল্লাহ, আপনি আমাদের সেসব কল্যাণ দান করুন যা আপনার কাছে আপনার নবী প্রার্থনা করেছেন এবং সেসব অকল্যাণ থেকে আশ্রয় দিন যা থেকে আপনার নবী আশ্রয় চেয়েছেন। আপনি আমাদের দুনিয়া-আখেরাতের সমূহ কল্যাণ দান করুন। আমাদের অন্তরকে আপনার দ্বীনের ওপর স্থির করুন। আমাদের ঈমানে অবিচলতা দান করুন।

হে আল্লাহ, আপনার বন্দেগি জিন্দা করে দেন। আপনার বন্দেগি আমাদের নসিব করেন। ইবাদত নসিব করেন। নাফরমানির জিন্দেগি খতম করে দেন। উপকারি ইলম দেন। জাহালত ও অজ্ঞতা দূর করে দেন। আপনার জিকির ও ধ্যান নসিব করেন। অন্তরে আপনার ধ্যান নসিব করেন। সর্ব মূহূর্তে আপনার ধ্যান নসিব করে দেন। মৃত্যুর সময় জিকির নসিব করেন।

মোনাজাতে কাকরাইল মসজিদের খতিব বলেন, হে আল্লাহ, আমাদের উত্তম আখলাক দান করেন। আপনার নবীর মতো উত্তম আচরণওয়ালা বানিয়ে দেন। হে আল্লাহ, আমাদের ইখলাস নসিব করেন। এই ইজতেমাকে কবুল করেন। এই বিশাল মেহনতকে কবুল করেন। আজিমুশশান কাজকে হেফাজত করেন। ফেৎনা থেকে রক্ষা করেন। হে আল্লাহ, আপনিই হেফাজতের জন্য যথেষ্ট। হে আল্লাহ পুরো উম্মতকে হেফাজত করেন। সারা পৃথিবীর মাখলুককে রক্ষা করেন। সবাইকে হেদায়াত দেন।

হে আল্লাহ বাতিলকে নির্মূল করেন। বাতিলের স্কিম তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করেন। কদম নুসরত করেন। সহজ ও ইসরের মোয়ামালা করেন। কঠিন করেন না, সহজ করেন। রহম ও করমের মোয়ামালা করেন।

ইজতেমাকে ভরপুর কামিয়াব করেন। এই কাজকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেন। ঈমানের হাওয়া ও হেদায়াতের হাওয়া চালু করে দেন। যারা ইজতেমা কামিয়াব করতে চেষ্টা করেছে, তাদের কবুল করেন এবং উত্তম বদলা দেন। যারা এ বয়ান শুনেছেন এবং যারা এখানে বয়ান করেছেন সবাইকে কবুল করেন।

তিনি বলেন, হে আল্লাহ, আমাদের দোয়াকে কবুল করেন। আপনি কবুল করনে ওয়ালা। আপনি দোয়া না করলে অখুশি হন। হে আল্লাহ, আমরা চাইছি, দোয়া করছি, আপনি মাফ করেন। দুনিয়াতে সাহায্য করেন এবং আখেরাতেও সাহায্য করেন। কবরে সাহায্য করেন। কিয়ামতে সাহায্য করেন। আপনার আরশের ছায়া নসিব করেন। আপনার নবীর শাফায়াত নসিব করেন। হাওজে কাউসারের পানি পান করার তাওফিক দান করেন। ফুলসিরাত পার হওয়া সহজ করে দেন। চোখের পলকে ফুলসিরাত পার করে দেন। বিদ্যুতের গতিতে ফুলসিরাত পার করেন। হে মাবুদ, আমাদের ডান হাতে আমলনামা দান করেন। জান্নাত আমাদের জন্য বরাদ্দ করুন, জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।

মোনাজাতে মাওলানা যোবায়ের বলেন, হে আল্লাহ, আপনি আমাদের রব, মালিক, মাবুদ- আপনি ছাড়া কেউ আমাদের মাফ করনেওয়ালা নেই। আপনি মাফ করেন। জান্নাত নসিব করেন। জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। জাহান্নামের আজাব সহ্য করার ক্ষমতা আমাদের নেই। যারা দুনিয়া থেকে ঈমান নিয়ে গেছে তাদের সবাইকে ক্ষমা করেন। যারা কিয়ামত পর্যন্ত আসবে তাদের সবাইকেও মাফ করে দেন।

আপনি, আমাদের ভাঙাচোরা এই মেহনতকে কবুল করেন। ভুলে ভরা ইবাদতগুলো কবুল করেন। দুনিয়াতে সব মন্দ ও বিপদ থেকে রক্ষা করেন, আখেরাতের জিন্দেগিতেও অমঙ্গল থেকে হেফাজত নসিব করেন।

সারা দুনিয়ার সব মুসলমানকে হেফাজত করেন। সব মুসলিম দেশকে রক্ষা করেন। সব মজলুমকে সাহায্য করেন। কোরআনকে জিন্দা করে দেন। কোরআনকে কায়েম করে দেন।

মোনাজাতে তিনি আরো বলেন, আল্লাহ, যেখানে যে হাত তুলেছে কারো হাত খালি ফিরে দিয়েন না। আমাদের দোয়া মেহেরবানি করে কবুল করে নেন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের কবুল করেন, আপনি সর্বশ্রোতা ও করুণাময়।

উল্লেখ্য, ভারতের নিজামুদ্দীন মারকাজের মুবব্বি মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর অনুপস্থিতিতে এবারই ইতিহাসে প্রথম আরবির সঙ্গে বাংলায় মোনাজাত হলো।

প্রথম পর্বের পর দ্বিতীয় পর্বেও আরবি ও বাংলায় মোনাজাত পরিচালনা করলেন হাফেজ মাওলানা যোবায়ের।