আগাম নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি আছে : ওবায়দুল কাদের

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগাম নির্বাচন দিলে লড়াইয়ের জন্য আওয়ামী লীগ প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এমনকি আগামী মাসে নির্বাচন হলেও দল কীভাবে জিততে পারে, সে প্রস্তুতি আছে তাদের।

শুক্রবার সকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক দলীয় কর্মসূচি শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন কাদের। দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে যৌথসভায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

এই বৈঠক শেষে আগাম নির্বাচন বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা।

বুধবার এক অনুষ্ঠানে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, সরকার চাইলে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রস্তুত রয়েছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয় প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার, তিনি তো বলেন নাই কবে নির্বাচন হবে। আমরা ধরে রাখছি সংবিধান অনুযায়ী আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু এখন যদি প্রধানমন্ত্রী মনে করেন তিনি আগাম নির্বাচন দেবেন, সেটা তাঁর এখতিয়ার। এটা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো কথা হয় নাই।’

‘তবে নির্বাচনের জন্য আমরা সব সময়ই প্রস্তত আছি, নির্বাচন যদি আগামী মাসেও হয় আওয়ামী লীগ প্রস্তুত।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা তো প্রস্তুতি নেব আগামী মাসে নির্বাচন হলে কীভাবে জিততে পারি। যদি নির্বাচন আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে হয়, তাহলে আমাদের সাংগঠনিক প্রস্তুতি থাকবে না?’।

আওয়ামী লীগ আগামীবার ক্ষমতায় আসবে কি না সেটি আল্লাহ এবং জনগণ ঠিক করবে জানিয়ে কাদের বলেন, ‘আমরা কাউকে ২০ সিটও দেবো না, ৩০ সিটও দেবো না কিংবা ৪০ সিটও দেবো না, যেটা বিএনপি বলে থাকে। আমরা শুধু বলছি বিজয়ের ব্যাপারে আমাদের আত্মবিশ্বাস রয়েছে। কারণ আমাদের উন্নয়ন ও অর্জন আছে।’

‘দেশের জনগণ শেখ হাসিনার সততা, দক্ষতা, যোগ্যতা ও উন্নয়নকে বেশি গুরুত্ব দেয় এবং দেশের অগ্রযাত্রায় তাঁর উপর আস্থাশীল। এ সরকার আবারও ক্ষমতায় আসা উচিত বলে জল্পনা-কল্পনা করছে জনগণ।’

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও কেন তাকে গ্রেপ্তা করা হচ্ছে না- এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না আদালতকে জিজ্ঞেস করুন। সরকার যদি হস্তক্ষেপ করত তাহলে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করানো হতো। আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, কিন্তু এরেস্ট ওয়ারেন্ট যদি কোন থানায় না পাঠানো হয় তাহলে পুলিশ কিভাবে গ্রেপ্তার করবে?’।

বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের পরোয়ানা সরকারের নির্দেশে জারি হয়েছে-বিএনপির এমন অভিযোগকে ‘হাস্যকর’ বলেন কাদের। বলেন, ‘তারা প্রতিক্রিয়া দিল, সরকার নাকি খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। বিএনপি তো আইন আদালত মানে না। তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলেই বলে আদালতে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। এটার প্রমাণ দিয়েছে তারা আদালতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ-সমাবেশ দিয়ে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আদালত যখন ষোড়শ সংশোধনীর রায় দেয় তখন আদালত স্বাধীন। আদালত যখন খালেদাকে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে বের করে দিল তখনও বলেছে, আদালতে হস্তক্ষেপ করছে সরকার। এখন সেই বাড়িতে সেনাবাহিনীর ৫০২ জন কর্মকর্তা বাস করছে। এটা কি সরকারের দোষ?’।

বিএনপি রাজপথ উত্তপ্ত করার চেষ্ট করলে আওয়ামী লীগ কি করবে এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, ‘এই দলটির কোন আন্দোলন করার ক্ষমতা নেই। তারপরেও যদি তারা কোন অপচেষ্টা করে তবে তাদের প্রতিহত করা হবে।’

বৈঠকে বিশ্বের ১৭৩টি দেশের নেতাদের মধ্যে সততা প্রদর্শন এবং কর্মঠ হবার তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় হওয়ায় তাকে দলের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানান ওবায়দুল কাদের।

বৃটিশ পার্লামেন্টে টিউলিপ সিদ্দিকি টানা তৃতীয়বার এমপি নির্বাচিত হওয়ায় দলের পক্ষ থেকে তাকেও অভিনন্দন জানানো হয়।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সদ্য প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান কাদের। বলেন, তিনি (আনিসুল) ছিলেন একজন স্বপ্নবাজ, আধুনিক এবং সংস্কৃতিমনা মানুষ। আমরা তার মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি।’

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপু মণি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আবদুস সোবহান গোলাপ, ফরিদুন্নাহার লাইলী, শ ম রেজাউল করিম, রোকেয়া সুলতানা, আব্দুস সবুর, বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য এসএম কামাল হোসেন, আনোয়ার হোসেন, আমিরুল আলম মিলন, মারুফা আক্তার পপি, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন প্রমুখ এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।