‘আজকে বিএনপির যারা বড় বড় নেতা, তারা সবাই রাজনীতির কাক’

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিএনপির প্রথম সারির কয়েকজন নেতাকে ‘রাজনীতির কাক’ বলেছেন।

শুক্রবার বিকেলে ঐতিহাসিক ছয় দফা উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

হাছান মাহমুদ বলেন ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়েছে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে। রাস্তায় ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দেওয়া হলে অনেক কাক জড়ো হয়। ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে রাজনৈতিক কাকদের সমন্বয়ে বিএনপি গঠন করেছিলেন জিয়া’।

তিনি বলেন, ‘আজকে বিএনপির যারা বড় বড় নেতা, তারা সবাই রাজনীতির কাক। কারণ মির্জা ফখরুল, মওদুদ আহমেদ, খন্দকার মোশাররফসহ বিএনপির বড় নেতারা সকলেই আগে অন্য দল করতেন’।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপিতে কয়েক ধরনের নেতা আছেন, কিছু আছে হঠাৎ বিএনপি, আর কিছু আছে বাই চান্স বিএনপি, কিছু আছে বাই-অ্যাক্সিডেন্টে বিএনপি। এই দলটি গঠিত হয়েছে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে। রাজনৈতিক সুযোগ সন্ধানী, ক্ষমতালোভীদের সমন্বয়ে এই রাজনৈতিক দলটি গঠিত হয়েছে। এই দলের বেশির ভাগ নেতা রাজনীতির মাঠের কাক’।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া কোনো রাজবন্দী নয়। রাজনৈতিক কারণেও জেলখানায় যাননি। দুর্নীতির মামলায় শাস্তিপ্রাপ্ত হয়ে জেলখানায় আছেন। আওয়ামী লীগের দায়ের করা কোনো মামলায় জেলে যাননি তিনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দায়ের করা মামলায় তিনি জেলে গেছেন’।

‘বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দিন ধরে যেই মামলার বিচার হয়েছে সেটি হচ্ছে খালেদা জিয়ার মামলা। কর্মদোষে অনেক আগেই বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়ার জেলে যাওয়া প্রয়োজন ছিল’।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছিল সেই বঙ্গবন্ধুকে ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। সেদিন ১০ বছরের শিশু রাসেল, ৪ বছরের শিশু সুকান্ত বাবু, অন্তঃসত্ত্বা বেগম আরজু মণিকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই ন্যক্কারজনক হত্যাকাণ্ডকে উপহাস করার জন্য হত্যাকারীদের উৎসাহ দিতে যিনি নিজের জন্মের তারিখটা পরিবর্তন করে ভুয়া জন্মদিন পালন করেন তিনিই হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া’।

‘পাকিস্তানের একজন জেনারেলের মৃত্যুর পর তিনি বাংলাদেশের একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে সমস্ত প্রটোকল ভঙ্গ করে শোকবাণী পাঠিয়েছিলেন। তার এসব কর্মদোষে অনেক আগেই জেলখানায় যাওয়া উচিত ছিল’।

চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, উত্তর জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও রেলপথ মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, আলহাজ্ব নঈমুদ্দিন চৌধুরী, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক শাহজাদা মহিউদ্দিন প্রমুখ।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘২১ আগস্ট বৃষ্টির মতো গ্রেনেড ছুড়ে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যার অপচেষ্টা চালিয়ে আইভি রহমানসহ ২৪ জনকে হত্যা করে বিএনপি। বেগম খালেদা জিয়া ও তার দল সংসদে দাঁড়িয়ে উপহাস করে বলেছিল, আমাদের নেত্রী ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিল। খালেদা জিয়া সেই ব্যক্তি যার বাড়ির সামনে গিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলেন। এবং ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু দরজা খোলেনি’।

‘১৫ ফেব্রুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচন করে নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীকে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বানিয়ে তার গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা লাগিয়ে দিয়েছিল’।

তথ্যমন্ত্রী বিএনপির প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা ঘোষণা হচ্ছে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের সূচনা। তারপর বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা। এগুলোর সঙ্গে বিএনপির কোনো দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু তারা এই দিবসগুলো পালন করেন না কেন?

তিনি বলেন, ‘বিএনপি দাবি করে তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা। কেউ হঠাৎ হু্ইসল বাজালেন, বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ যুদ্ধে চলে গেল, ত্রিশ লাখ মানুষ মারা গেল, সেভাবে তো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে একটি ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে। তারা এই দিবসগুলো পালন না করার অর্থই হচ্ছে তারা পাকিস্তানি ভাবধারায় বিশ্বাস করে’।

‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে কতটুকু বিশ্বাসী তা প্রশ্ন জাগে যখন ছয় দফা দিবস ও ৭ই মার্চ পালন করে না। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় যখন হয় তখন পাকিস্তানের পার্লামেন্টে নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়। পাকিস্তানের মন্ত্রীদের পাশাপাশি বাংলাদেশে বিএনপির পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হলো। এতেই প্রমাণিত হয় তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে কতটুকু বিশ্বাস করেন’।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরের সর্বদলীয় বৈঠকে বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু মুজিব। এরপর ১১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ফিরে এসে ছয় দফার পক্ষে জনমত গঠন করতে সারা দেশে জনসভা করেন। বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর ছয় দফাকে নিজেদের বাঁচামরার সনদ হিসেবে গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু বাঙালির অবিসংবাদিত নেতায় রূপান্তরিত হয়। তারই প্রেক্ষিতে মে মাসে বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দিন আহমেদসহ অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন আওয়ামী লীগের আহ্বানে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল হয়। সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ ছয় দফার প্রতি আকণ্ঠ সমর্থন জানান। স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালিত হয়। সেই হরতালে মনু মিয়া, শফিক, শামসুল হকসহ অনেকেই নিহত হয়। সে থেকে ৭ জুন ৬ দফা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। ৬ দফায় হচ্ছে বাঙালির মুক্তির সনদ’।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পরিকল্পনা করেছিলেন ছয় দফা পেশ করার অনেক আগেই। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই তিনি ছয় দফা জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। ছয় দফার ভিত্তিতে জনগণের মনন তৈরি করেছিলেন এবং সংগঠিত করেছিলেন। বাঙালি জাতিকে সংগঠিত করার পর তার বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হলো। বাঙালির আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তিনি মুক্তি পেলেন। তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হলো। এরপর বঙ্গবন্ধু প্রকৃতপক্ষে ৭ই মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। ছয় দফার মাধ্যমে তিনি বাঙালি জাতিকে ধীরে ধীরে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে যান। স্বাধীনতার প্রথম সোপান ছিল ছয় দফা ঘোষণা এবং সেটার পক্ষে জনমত তৈরি করা’।