‘আজ শরবত খাব না, পানির লাইন ঠিক করেই শরবত খাব’

ওয়াসার ‘শতভাগ বিশুদ্ধ পানি’ দিয়ে তৈরি শরবত আজ খাবেন না বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রকৌশলী কে এম সহিদ উদ্দিন। জুরাইন এলাকার পাইপ লাইন ঠিক করে শরবত খাবেন তিনি।

মঙ্গলবার ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানি দিয়ে এমডিকে জুরাইনবাসী শরবত বানিয়ে খাওয়াতে গেলে তার পক্ষে প্রকৌশলী সহিদ উদ্দিন এ কথা বলেন।

বেলা ১১টার দিকে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানকে ওয়াসার ‘ শতভাগ বিশুদ্ধ পানি‘ দিয়ে তৈরি শরবত খাওয়াতে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে ওয়াসা ভবনের সামনে হাজির হন জুরাইন এলাকার বাসিন্দারা। এ সময় তাদের সঙ্গে ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানি, চিনির প্যাকেট ও লেবু ছিল। তারা শরবত বানিয়ে ওয়াসার এমডির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

এই উদ্যোগের নেতৃত্বে দেন রাজধানীর জুরাইন এলাকার বাসিন্দা মো. মিজানুর রহমান। দুপুরের দিকে মিজানুর রহমানসহ অন্যদের ডেকে পাঠান ওয়াসার এমডির প্রতিনিধি প্রকৌশলী কে এম সহিদ উদ্দিন।

সহিদ উদ্দিন এ সময় বলেন, পাইপ লাইনের ত্রুটির কারণে ওয়াসার পানি দূষিত হয়ে থাকতে পারে, তবে ওয়াসার পানি সুপেয়। জুরাইন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগের কথা আমরা শুনেছি। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, জুরাইনবাসীর সমস্যার কথা আমরা উপলব্ধি করেছি। আজ শরবত খাব না। পানির লাইন ঠিক করেই শরবত খাব।

প্রসঙ্গত ১৭ এপ্রিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পক্ষ থেকে ‘ঢাকা ওয়াসা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে ওয়াসায় অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি উল্লেখ করে টিআইবি।

এতে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার পানির নিম্নমানের কারণে ৯৩ শতাংশ গ্রাহক বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি পানের উপযোগী করেন। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে বা সিদ্ধ করে পান করেন। গৃহস্থালি পর্যায়ে পানি ফুটিয়ে পানের উপযোগী করতে প্রতিবছর আনুমানিক ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাসের অপচয় হচ্ছে।

এ প্রতিবেদনের প্রতিবাদে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলন করে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান বলেন, ‘ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয় ও বিশুদ্ধ। একে ফুটিয়ে খাওয়ার প্রয়োজন হয় না।’ এ ছাড়া টিআইবির এই প্রতিবেদনকে তিনি নিম্নমানের বলে উল্লেখ করেন।

তাকসিম এ খানের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান পুরান ঢাকার বাসিন্দারা। তারা নিরাপদ পানির দাবি করে আসছেন। এরই অংশ হিসেবে তারা মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টায় কারওয়ানবাজারে অবস্থিত ওয়াসা ভবনের সামনে অবস্থান নেন।

কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেয়া মিজানুর রহমানের ভাষ্য, আমাদের এলাকায় ওয়াসার পানি ড্রেনের পানির মতো অপরিষ্কার। ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত এ পানি কাপড় কাচায়ও ব্যবহার করা যায় না। এটি তো খাওয়া দূরের কথা, গন্ধে হাতে নেয়াই দায়। এ অবস্থায় ওয়াসার এমডি কীভাবে বলেন- ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয় ও বিশুদ্ধ! তাই আমরা এই ‘বিশুদ্ধ পানি’ দিয়ে শরবত বানিয়ে উনাকে খাওয়াতে এসেছি। দেখি উনি কী করেন।

জুরাইনে বহু আগে থেকেই দুর্গন্ধযুক্ত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে, এমনটি জানিয়ে প্রতিবাদী মিজানুর বলেন, ২০১২ সালে আমরা জুরাইনের সাড়ে তিন হাজার বাসিন্দা গণস্বাক্ষর নিয়ে ওয়াসার এমডি বরাবর একটি অভিযোগ করেছিলাম, যেখানে বলেছিলাম- এই পানি খাওয়া যায় না, ব্যবস্থা নিন। সেই অভিযোগে কোনো কাজ হয়নি। এখনও রোজ ময়লা পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এই পানি খাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে মসজিদের টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। কিংবা মিনারেল ওয়াটার কিনে পান করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ওয়াসার এমডির বক্তব্য আমাদের পীড়া দিয়েছে। তিনি বলেছেন- এই পানি শতভাগ সুপেয়। যদি সুপেয় পানি হয়, তবে তাকে এই পানির শরবত আমাদের সামনে খেতে হবে। আজ আমরা একটা সমাধান নিয়েই এখান থেকে যাব।

তিনি আরও বলেন, এমডির জন্য ওয়াসার বিভিন্ন কলের পানি নিয়ে এসেছি। যদি তার ডায়াবেটিস থাকে, তা হলে শুধু লেবু দিয়ে শরবত তৈরি করে খাওয়াব। তিনি খেয়ে বলবেন- পানি কতটুকু সুপেয়।