আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন লুক রনকি

ব্যাট হাতে ফর্ম একেবারে খারাপ ছিল না। উইকেটের পেছনে গ্লাভস হাতেও ছিলেন দারুণ ছন্দে। চাইলে আরও কিছুদিন হয়তো খেলাটা চালিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু বয়সের কথা ভেবেই হয়তো থামার সিদ্ধান্ত নিলেন লুক রনকি।

বুধবার রাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন নিউজিল্যান্ডের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। এই অবসরের ঘোষণার মাধ্যমে যতি পড়ল লুক রনকির ভিন্ন দুই দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে।

সত্যিই তাই। ক্রিকেট ইতিহাসে হাতে গোনা যে কয়জন ক্রিকেটার দুই দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, লুক রনকি সেই বিরল ক্রিকেটারদের একজন। নিউজিল্যান্ডের ম্যানাউয়াতুর ড্যানভিরকে জন্ম নেওয়া রনকি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম পা রাখেন অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে। ২০০৮ সালে অভিষেকের পর থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছেন ৪টি ওয়ানডে ও ৩টি টি-টুয়েন্টি। তাতে তেমন সুবিধা করতে না পারায় অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে আর মাঠে নামা হয়নি।

২০১২ সালে রনকি নিজেই সিদ্ধান্ত নেন অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে জন্মভূমি নিউজিল্যান্ডে চলে আসার। ক্রিকেট খেলাটা চালিয়ে যেতে নাম লেখান ওয়েলিংটন ক্রিকেট দলে। ওয়েলিংটনের হয়ে এক বছর না কাটতেই ডাক পেয়ে যান নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলে। ২০১৩ সালের ৩১ মে, হেডিংলিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে নিউজিল্যান্ডের হয়ে ওয়ানডে অভিষেক। সেদিন মাঠে নেমেই রনকি গড়ে ফেলেন প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে দুই প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অনন্য কীর্তি।

২০১৫ সালের মে মাসে সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রনকির টেস্ট অভিষেক। রনকির সৌভাগ্য যে, ওয়ানডে-টেস্ট-টি-টুয়েন্টি নিউজিল্যান্ডের জার্সিতে তিন ধরনের ক্রিকেটেই তার অভিষেক হয় জয় দিয়ে।

তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অধ্যায়ে রনকি হয়তো সবচেয়ে বেশি মনে রাখবেন ২০১৫ বিশ্বকাপকেই। প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠা নিউজিল্যান্ড দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ব্যাট এবং গ্লাভস হাতেও বিশ্বকাপটা তার কেটেছিল দারুণ। রনকি ছিলেন এবারের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলেও। কিন্তু বাংলাদেশের কাছে হেরে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নেয় তার দল নিউজিল্যান্ড।

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড দুই দেশের হয়ে খেললেও রনকির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার আটকে গেল মাত্র ৪টি টেস্ট, ৮৫টি ওয়ানডে আর ৩২টি টি-টুয়েন্টির মধ্যেই। ৪ টেস্টে করেছেন ৩৯.৮৭ গড়ে ৩১৯ রান। হাফসেঞ্চুরি করেছেন দুটি। ৮৫ ওয়ানডেতে করেছেন ১৩৯৭ রান। একটি সেঞ্চুরির সঙ্গে ৪টি হাফসেঞ্চুরি। এর মধ্যে একটি হাফসেঞ্চুরি তিনি করেছেন অস্ট্রৈলিয়ার হয়ে। ৩২ টি টি-টুয়েন্টিতে করেছেন ৩৫৯ রান। হাফসেঞ্চুরি মাত্র ১টি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ালেও ঘরোয়া ক্রিকেটটা চালিয়ে যাবেন কিউই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান।

বিদায় বেলায় রনকি কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করলেন নিউজিল্যান্ডের হয়ে অসাধারণ সময় পার করার কথা। কিউইদের হয়ে অভিষেকের কথা মনে করে বলেছেন, ‘সত্যিই সেদিন স্বপ্ন ধরা দিয়েছিল বাস্তব হয়ে। ’

বিদায় লগ্নে নিউজিল্যান্ড কোচ মাইক হেসন রনকিকে আখ্যায়িত করলেন ‘অসাধারণ টিমম্যাট’ হিসেবে, ‘সে সব সময়ই দলের সর্বোচ্চ ভালো হয়, সেটা করতে তৈরি থাকতেন। দলের ভালো হবে, এরকম পরিস্থিতিতে সে ঝুঁকি নিয়ে নিজের উইকেট বিসর্জন দিতেও কার্পণ্য করত না। ’