আন্দোলনেও সাড়া পাচ্ছেন না নন-এমপিও শিক্ষকরা

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এমপিওভুক্তির দাবিতে চারদিন ধরে (গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে) অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। ফেডারেশনের নেতৃত্বে এমপিওভুক্তির দাবিতে চলমান আন্দোলনে বেশ ক’জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবে তাদের আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সাড়া পাননি বলে জানান আন্দোলনরত শিক্ষক-কমচারীরা।

শিক্ষকরা বলছেন, দাবি আদায়ে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। আমরা আর কোনো টালবাহানা মেনে নেব না। আমরা শিক্ষক হয়েও দিন মজুরের ন্যায় পরিশ্রম করছি কিন্তু কাঙ্ক্ষিত বেতন পাচ্ছি না।

নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ বিনয় ভূষণ রায় বলেন, শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) চতুর্থ দিনে আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারীরা অবস্থান নিয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ অবস্থান চলবে।

সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহামুদুন্নবী ডলার বলেন, শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দফতরে লিখিত দাবি নিয়ে যাই। প্রধানমন্ত্রীর পিএস-২-এর কাছে আমাদের লিখিত দাবি-দাওয়া দিয়ে এসেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি। শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে আন্দোলনে সমর্থন করলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় টালবাহানা করছে।

তিনি বলেন, সারাদেশ থেকে ৭ হাজারের বেশি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। আমাদের নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা ৯৮ শতাংশ বেসরকারি ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভর করে চলছে। দীর্ঘ ১৫-২০ বছর ধরে এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছি, বিনা বেতনে শিক্ষাশ্রম দিয়ে যাচ্ছি -এমতাবস্থায় আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছি।

তিনি আরও বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ন্যায় অভিন্ন সিলেবাসে আমরা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি। শিক্ষার্থীরা পাস করছে, সার্টিফিকেট পাচ্ছে কিন্তু শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছে না। আমাদের দাবি মেনে নেয়া হলে কঠোর কর্মসূচি দেব। আমরা তো বিশৃঙ্খলা করতে পারি না। কিন্তু প্রয়োজনে নিজেদের ক্ষতি করে আন্দোলন চালিয়ে যাব।

গোলাম মাহামুদুন্নবী ডলার বলেন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ বিনয় ভূষণ রায় অনেক আশা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ব্যস্ত থাকায় সাক্ষাৎ পাইনি। তবে শিক্ষকদের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছি। আশা করছি সরকার বিশেষ বিবেচনায় আমাদের এমপিওভুক্ত করার ব্যবস্থা নেবে।

তিনি বলেন, আমরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, রাজনীতিবিদসহ সকল পেশার মানুষ তৈরি করি। অথচ যুগ যুগ ধরে শিক্ষাকতা করলেও আমাদের এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে না। অর্থাভাবে নন-এমপিও শিক্ষকরা মানবেতর জীবন যাপন করলেও শুধু আশ্বাস আর প্রত্যাশা ছাড়া কিছুই পায়নি। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, আমরা খালি হাতে বাড়ি ফিরবো না। জীবন গেলেও আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ব্যানারে এমপিওভুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারীরা। বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্লাকার্ড হাতে নিয়ে সহস্রাধিক শিক্ষক-কর্মচারী আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।