আবারও ভেঙে পড়ল বিদ্যালয়ের ছাদ!

বরগুনা : এবার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া জগৎচাঁদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের ছাদের বিম ধসে পরেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার সকালে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।

২০০১-০২ অর্থবছরে নির্মিত ভবনগুলো ধসে পড়ায় আতঙ্কে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।

এদিকে ভবন ধসে পড়ার খবর পেয়েও উপজেলা প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বিষয়টি আমলে নেননি। এমনকি তিনি বিদ্যালয় পরিদর্শনে যাননি।

জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া জগৎচাঁদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বুধবার সকাল ৯টার দিকে কিছু শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়। শিশুশ্রেণির কক্ষটিতে শিক্ষার্থীরা ব্যাগ রেখে বাইরে যায়। এ সময় কক্ষের ছাদের বিম ধসে পড়ে। শিক্ষার্থীরা বাইরে থাকায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

ছাদের বিম ধসে পড়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সরোয়ার হোসেন ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মজিবুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে ঘটনাস্থলে যাননি উপজেলা প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম।

দক্ষিণ তক্তবুনিয়া গ্রামে ১৯৯৩ সালে জগৎচাঁদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০২ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে চার কক্ষবিশিষ্ট একতলা ভবন নির্মাণ করে। এ স্কুল ভবনের কাজ পান ঠিকাদার মকবুল আহম্মেদ খান। কাজের শুরুতেই নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে কাজ করেছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

২০০৪ সালে ঠিকাদার ওই ভবনটি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। ওই সময়ে এ স্কুল ভবন উদ্বোধন করেছেন তৎকালীন বিএনপির এমপি মতিয়ার রহমান তালুকদার।

নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার ৭ বছরের মাথায়ই ভবনের বিমে ফাটল ধরে পলেস্তারা পড়তে শুরু করে। ২০১৭ সালে ওই বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০০১-২০০২ অর্থবছরে তালতলীর ছোটবগী পিকে ও তক্তাবুনিয়া জগৎচাঁদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করে।

পরপর ২০০১-০২ অর্থবছরে নির্মিত দুটি বিদ্যালয় ভবনের ছাদের বিম ধসে পড়ায় শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরছে।

এদিকে চতুর্থ দিনেও ছোটবগী পিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কোনো শিক্ষার্থী ক্লাসে ফিরেনি।

বুধবার দুপুরে দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া জগৎচাঁদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যালয় শিশুশ্রেণির একটি কক্ষের মাঝখানের বিম ধসে বড় বড় পলেস্তারা মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

ওই বিদ্যালয়ের শিশুশ্রেণির শিক্ষার্থী নিলয়, পলক, সন্দীপ, প্রমিতা জানান, ক্লাসে ব্যাগ রেখে বাহিরে যাই। পরে এসে দেখি কক্ষের সব স্থানে ভবনের বিমের ভাঙা টুকরা পড়ে আছে।

শ্রেণিশিক্ষক মোসা. নাজমুন নাহার বলেন, কক্ষের তালা খুলে লাইব্রেরিতে আমি বসেছিলাম। এর একটু পরেই একটি শব্দ পাই। শ্রেণিকক্ষে গিয়ে দেখি ছাদের বিম ও পলেস্তারা মেঝেতে পড়ে আছে। কিন্তু ওই সময় কোনো শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে ছিল না, বিধায় কেউ আহত হয়নি।

বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ক্লাস শুরু হওয়ার পূর্বেই ভবনের ছাদের বিম ধসে পরেছে। এ ভবনটি ২০০১ সালে ঠিকাদার মো. মকবুল আহম্মেদ খান নির্মাণ করেছেন এবং তৎকালীন বিএনপির এমপি মতিয়ার রহমান তালুকদার উদ্বোধন করেছেন।

তিনি আরও বলেন, নির্মাণের ৭ বছরের মাথায় ওই ভবনে ফাটল ধরে পলেস্তারা খসে পড়ত। গত দুই বছর আগে ভবনটি জরাজীর্ণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

ঠিকাদার মো. মকবুল আহম্মেদ খান কাজ করার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমার লাইসেন্সে এ কাজ হয়নি।

আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মজিবুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ওই বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছি। ভবনের একটি কক্ষের ছাদের বিম ধসে পরেছে। কিন্তু ক্লাস শুরুর পূর্বে ছাদের বিম ধসে পড়ায় কোনো শিক্ষার্থী হতাহত হয়নি।

আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমি ভবনের ছাদ ধসে পড়ার কোনো খবর পাইনি। এই মাত্র আপনার কাছে শুনলাম। খবর পাইলেও কী কবব? ভবন ধসে পড়লে ভালো হয়েছে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, বিম ধসে পড়া কক্ষটিতে পাঠদান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাকি দুই কক্ষে পাঠদান অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, একটি টিনশেড ভবন নির্মাণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।