আবার যেন অন্ধকারে না পড়ি : প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যারা এসেছিল তারা দেশে যে অবস্থা কায়েম করেছিল, সেই দিনগুলোতে যেন আবার ফিরে যেতে না হয়, সে জন্য দেশবাসীকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘জাতির পিতার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলাম, আজকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছি। … এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে শহীদদের প্রতি এটা আমাদের অঙ্গীকার।’

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে মাতৃভাষা করার দাবিতে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে শনিবার রাজধানীতে আওয়ামী লীগের আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।

প্রায় ৪০ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে স্বাধীনতা অর্জন, বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পর দেশ গড়ার সংগ্রামে তার নেয়া নানা উদ্যোগ, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বলেন, এর পরেই বাংলাদেশ তার আদর্শ থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। পাকিস্তানি ভাবধারায় দেশ পরিচালিত হতে থাকে। বলেন, ‘এটাকে পাকিস্তানের প্রদেশ বানানোর একটা প্রচেষ্টা হয়েছিল।’

‘যে শক্তিকে আমরা পরাজিত করলাম, সে শক্তির প্রতিই তোষামোদি, খোশামোদি, চাটুকারিতা আমরা দেখেছি। তাদের দেখলেই যেন বেহুঁশ হয়ে পড়ার মতো অবস্থা ছিল, যারা ক্ষমতায় ছিল।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন, সে যুদ্ধাপরাধীরে বিচার মার্শাল ল অর্ডিন্যান্স দিয়ে বন্ধ করে তাদেরকে মুক্ত করে দিয়ে তাদের দল করার সুযোগ করে দেয়া হলো।… জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্র মানে তো যুদ্ধাপরাধীদের দল করার সুযোগ করে দেয়া।’

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে কাজগুলো করেছিলাম, মাঝখানে আবার পথ হারিয়ে যায় বাংলাদেশ।’

‘এমন একটা সময় দেখেছি অনেকে নিজে মুক্তিযোদ্ধা বলতে সাহস পেতেন না। একটা সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য তিনি যে মুক্তিযোদ্ধা এ কথাটা লিখতে সাহস পেতেন না, কারণ তিনি চাকরি পাবেন না।…তখন ছিল রাজাকারদের দাপট।’

২০০৯ থেকে টানা ক্ষমতায় থাকার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অন্ততপক্ষে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে আজকে মানুষ গর্ববোধ করে, কেউ ভীত সন্ত্রস্ত হয় না।’

‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসগুলো আবার সামনে এসেছে, মানুষ বলার সুযোগ পাচ্ছে, লেখার সুযোগ পাচ্ছে। আজ আত্মবিশ্বাসটা ফিরে এসেছে। এই আত্মবিশ্বাসটা যেন হারিয়ে না যায়।’

আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আবার আমাদেরকে যেন সেই অন্ধকারের দিকে চলে যেতে না হয়, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে আবার দ্বিধাবোধ করতে না হয়, সেই পরিস্থিতি যেন আর কোনোদিন বাংলার মাটিতে না আসে।’

‘সে জন্য আমি সবাইকে বলব, সচেতন থাকতে হবে। আবার যেন আমরা সেই ধরনের বিপদে না পড়ে যাই।…পেয়ারা পাকিস্তানওয়ালাদের কাছ থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করে চলতে হবে।’

খালেদা জিয়ার শাসনামলের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭৫ সালের ১৫ আগস্টের খুনিদের ভোট চুরি করে পার্লামেন্টে বসানো হয়েছিল। আর যারা স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচার হয়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে, সাজা কার্যকর হয়েছে, তাদেরকে মন্ত্রী বানিয়েছিল, লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত পতাকা তাদের হাতে তুলে দিয়েছিল, জাতি যেন কোনো দিন তাদের ক্ষমা না করে।’

‘যারা আমার মা বোনকে রেপ করেছে, যারা গণহত্যা চালিয়েছে, অগ্নিসংযোগ করেছে, লুটপাট করেছে, যারা এদেরকে মর্যাদা দিয়েছিল, তাদের হাতে পতাকা তুলে দিয়েছিল, তাদের ব্যাপাকে জাতিকে সচেতন থাকতে হবে। তাদেরকে কিন্তু জাতি কোনাদিন ক্ষমা করতে পারে না, ক্ষমা করবেন না।’

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় এই ভাষার চর্চা, দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষা শেখার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু মাতৃভাষা হিসেবে বাংলার চর্চা চালিয়ে যাওয়ার তাগিদও দেন প্রধানমন্ত্রী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী রফিকুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ এ সময় বক্তব্য রাখেন।