আমেরিকায় গিয়ে জঙ্গি হয়েছে আকায়েদ : পুলিশ

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ম্যানহাটন বাস টার্মিনালে বিস্ফোরণের ঘটনায় আটক বাংলাদেশি আকায়েদ উল্লাহ বাংলাদেশে কোনো ধরনের জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত ছিলেন না বলে জানিয়েছে পুলিশ। বাহিনীটি বলেছে, ছয় বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পরই তিনি উগ্রবাদে ঝুঁকেছেন।

বুধবার সাংবাদিকদের এ কথা জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের জঙ্গি বিরোধী বিশেষ শাখা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

মনিরুল বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি আকায়েদ ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেলফ র‌্যাডিকালাইজড হয়েছে। আমরা তার স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়িকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আমরা তাদের কাছ থেকে যেসব তথ্য পেয়েছি তাতে মনে হয়েছে ২০১১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আকায়েদ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষার্থী ছিল।’

যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে উগ্রবাদে দীক্ষিত হওয়ার পর আকায়েদ বাংলাদেশে এসেছিলেন জানিয়ে মনিরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে এসে সে কাদের সঙ্গে সে মিশেছে, এদেশের তার কোনও সহযোগী আছে কিনা- তা আমরা জানার চেষ্টা করছি।’

গত ১১ ডিসেম্বর সোমবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারের কাছে পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনালে বিস্ফোরণ ঘটে। এর সঙ্গে আকায়েদ উল্লাহ নামে এক বাংলাদেশি যুবকের সংশ্লিষ্টতা পায় নিউ ইয়র্ক পুলিশ। বিস্ফোরণে তার শরীর পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি জখম হয়েছে।

এই ঘটনার পর আকায়েদের স্ত্রী, শাশুড়ি ও শ্বশুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। মনিরুল জানান, আকায়েদের স্ত্রী জানিয়েছেন, তার স্বামী তাকে জঙ্গি নেতা জসিমউদ্দিন রাহমানীর অডিও লেকচার শুনাতেন।

‘আমরা আকায়েদের স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়িকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তার স্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন, গত বছরের শুরুতে তাদের বিয়ে হয়। তার আগে থেকেই আকায়েদের মুখে দাঁড়ি ছিল এবং সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। বিয়ের পর বিভিন্ন সময় আকায়েদ তাকে জসিমউদ্দিন রাহমানীর কিছু অডিও লেকচার শুনিয়েছে।’

আকায়েদের শ্যালক হাফিজ মাহমুদ জয়কেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। প্রয়োজনে আকায়েদের পরিবার সদস্যদের আবারও ডাকা হবে বলেও জানিয়েছে তারা।

মনিরুল জানান, আকায়েদ উল্লাহ ধানমন্ডি কাকলী উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার মামাত ভাই আবদুল আহাদ। এরপর পিলখানার মুন্সী আবদুর রউফ স্কুল অ্যান্ড কলেজ (বাংলাদেশ রাইফেলস স্কুল অ্যান্ড কলেজ) ও ঢাকা সিটি কলেজে বিবিএর তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। সিটি কলেজের ছাত্র থাকাবস্থায় ২০১১ সালে ভাই-বোনদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চলে যান আকায়েদ।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আকায়েদরা তিন ভাই, দুই বোন। তারা ২০১১ সালে পাঁচ ভাই-বোনই যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়। এর আগে তারা হাজারীবাগ এলাকায় থাকতো। এখানেই সে বড় হয়েছে। ওই সময় আর দশটি সাধারণ ছেলের মতোই পড়াশোনা করে ও বেড়ে ওঠে।’

আকায়েদের শ্যালক হাফিজ মাহমুদ জয় একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আকায়েদ চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা আসেন। তখন তিনি পুরোদুস্তোর ধার্মিকে পরিণত হয়েছেন।

চট্রগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বলেন, আকায়েদ উল্লাহর বাবার বাড়ি চট্টগ্রামের স্বদ্বীপ উপজেলার মূছাপুর ইউনিয়নে। তার বাবা ছানোয়ার তালুকদার ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। প্রায় ৩০ বছর আগে ব্যবসায়িক কারণে তারা রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় বসবাস শুরু করেন। তার বাবার চামড়া শিল্পের একটি ব্যবসা ছিল।

বেশকিছুদিন আগে তার আকায়েদের বাবা-মা মারা যান। গ্রামের বাড়িতে তাদের কেউ না চিনলেও তাদের বাড়ির বেশ নাম ডাক রয়েছে। ওই বাড়িতে ৭০ থেকে ৭৫ বছর বয়সী আকায়েদ উল্লাহ এক চাচা বসবাস করেন।

জানতে চাইলে হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর আলিমুজ্জামান বলেন, ‘গত সোমবারের আগে আমরা আকায়েদ উল্লাহ নামের কাউকে চিনতামও না। তার নামে আমাদের থানায় কোনো খারাপ রেকর্ড নেই। তবে তার ব্যাপারে এসব খবর প্রকাশ পাওয়ার পরে জঙ্গি বিরোধী বিশেষ শাখা কাউন্টার টেরোরিজম তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছে।’