আয়কর সম্পর্কে যেসব তথ্য আপনার না জানলেই নয়

প্রতি অর্থ বছর শেষে যে আয়কর আপনাকে দিতে হচ্ছে বাংলাদেশে অনেকেই আছেন বেশ দক্ষতার সাথে সেটি সামাল দেন।

কিন্তু বহু মানুষ আছেন যারা রীতিমতো হিমসিম খান। তথ্যের অভাবে ভুল করে থাকেন, নানা ঝামেলায় পরেন।

যারা নতুন আয়কর দিচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রেই এটি বেশি হয়ে থাকে।

বিবিসি’কে আয়কর বিষয়ক আইনজীবী মিজানুর রহমান জানিয়েছেন আয়কর সম্পর্কিত নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

আয়করের আওতায় কে পরেন

আয়কর সম্পর্কে প্রথম যেটি জানতে হবে সেটি হল তার আয় কত, আর সেটি আয়করের আওতায় পরে কিনা।

ইনকাম ট্যাক্স আইন অনুযায়ী সাত ধরনের আয় করের আওতায় পরে।

যেমন চাকরী থেকে পাওয়া বেতন, ব্যবসা থেকে আয়, বাড়িভাড়া থেকে পাওয়া অর্থ, কোন সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তর ফলে প্রাপ্ত অর্থ, জামানতের সুদ (সঞ্চয়পত্র, বন্ড, ব্যাংকের সুদ ইত্যাদি), কৃষি হতে আয়। আর আছে অন্যান্য যার মধ্যে পরতে পারে অনেক কিছু।

কত আয় হলে কর দিতে হয়

আপনি যদি পুরুষ হন আর আপনার বাৎসরিক আয় যদি আড়াই লাখ হয় তবে সেই পর্যন্ত আপনার কোন আয়কর নেই।

তবে আয় এর উপরে চলে গেলেই আপনি আয়করের আওতায় পরবেন।

আর নারীদের জন্য বাৎসরিক তিন লাখ টাকা পর্যন্ত কর মওকুফ। কিন্তু তার উপরে গেলেই তিনি করের আওতায় পরবেন।

নারী পুরুষ হিসেবে আপনার প্রথম আড়াই লাখ বা তিন লাখ টাকা বাদ দিয়ে পরবর্তী চার লাখ টাকার জন্য দশ শতাংশ কর হবে।

আয় যত করের হার তত বাড়তে থাকবে।

কিভাবে কর দেবেন

প্রথম যে কাজটি করবেন সেটি হল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে সকল তথ্য ভালো করে পড়ুন।

এরপর আপনাকে একটা টিন নম্বর অথবা ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর নিতে হবে।

সেটি করতে হলে রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে গিয়ে সেখানে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।

জাতিয় পরিচয়পত্রের নম্বর, নাম পরিচয় এমন কিছু তথ্য সেখানে আপনাকে দিতে হবে। আপনি টিন নম্বর পাওয়া মানে আপনি আয়কর বিষয়ক নিজের একটি পরিচয় তৈরি করলেন।

আপনার নামের প্রথম অক্ষর, আপনার কর্ম প্রতিষ্ঠানের নামের প্রথম অক্ষর, বাসস্থানের ঠিকানার উপর নির্ভর করতে আপনি কোন কর অঞ্চলে পরছেন।

এরপর সবমিলিয়ে বছরে আপনার আয় কত সেটি হিসেব করুন। আপনি আয়করের আওতায় পরেন কিনা সেটি বুঝে নিন।

আয়করের আওতায় পরলে কর কত হচ্ছে তা বাৎসরিক আয় অনুযায়ী হিসেব করুন।

হিসেবে যা আসে সেটি আপনি সরকারকে দেবেন। আপনি ব্যাংকের মাধ্যমে টাকাটি জমা দিতে পারেন।

অথবা সরাসরি আপনি যে কর অঞ্চলের ডেপুটি কমিশনার ট্যাক্সেজ কর্মকর্তা বরাবর পে অর্ডার করে কর দিতে পারেন।

আয়কর রিটার্ন কি

প্রতি বছর ৩০ শে নভেম্বরের মধ্যে আপনাকে ট্যাক্স রিটার্ন দিতে হবে।

প্রতি অর্থ বছরে এই সময়ের মধ্যে একটি ফর্মে আপনার আয়, সম্পত্তি, আয়কর ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্য হালনাগাদ করা।

কেননা আপনার এ সম্পর্কিত তথ্য প্রতি বছর বদলে যেতে পারে।

একবার টিন নম্বর নিয়ে নিলে সরকারকে জানিয়ে দিতে হবে আপনার বর্তমান অবস্থান। ট্যাক্স রিটার্ন না দিলে শাস্তির ব্যবস্থাও আছে।

কোন ক্ষেত্রে করে ছাড়ের সুবিধা পাবেন

কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনি কিছু ছাড় পাবেন।

এর কয়েকটি হল আপনার যদি বিভিন্ন মেয়াদে সরকারি সঞ্চয়পত্র কেনা থাকে, শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করা থাকে, জীবন বীমা করা থাকে এরকম কিছু ক্ষেত্রে আপনি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে কর মওকুফের সুবিধা পাবেন।

এক্ষেত্রে আয়কর আইনজীবীরা বলেন, সরকারি সঞ্চয়পত্র কিনে রাখাই সবচেয়ে ভালো।

সঞ্চয়পত্রকে সবচাইতে ঝুঁকিমুক্ত মনে করা হয়। সঞ্চয় ব্যুরো, পোষ্ট অফিস অথবা ব্যাংকের মাধ্যমে আপনি এটি কিনতে পারবেন।

অভিযোগ থাকলে কোথায় যাবেন

আপনি যদি মনে করেন কর দেয়ার ক্ষেত্রে আপনার সাথে কোন অন্যায় হয়েছে সেক্ষেত্রে আপনার অভিযোগ জানানোর জায়গা আছে।

সেক্ষেত্রে আপনার প্রথম করনীয় হচ্ছে কমিশনার অফ ট্যাক্সেজ আর কাছে আপিল করা।

আপনার অভিযোগের ভিত্তিগুলো বিস্তারিত জানিয়ে লিখিতভাবে আপিল করতে হবে।

তিনি শুনানির জন্য সময় দেবেন। তাকে যদি সেখানে যুক্তিতর্ক দিয়ে বোঝাতে সক্ষম হন তাহলে সেখানেই আপনার সমস্যার সমাধান হতে পারে।

তিনি যদি আপনার বিপক্ষে রায় দেন সেক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালে দ্বিতীয় আপিল করা যায়।

ট্রাইব্যুনালে গিয়েও যদি আপনি হেরে যান তাহলে হাইকোর্টে গিয়েও আপনি সর্বশেষ আরেকবার আপিল করতে পারবেন।

আর সর্বশেষ তথ্যটি হল বাংলাদেশে সরকারের যেসব সুবিধা আপনি পাচ্ছেন তার কিছুই বিনে পয়সায় নয়।

আপনার দেয়া অর্থেই আপনি আসলে সেবাগুলো পাচ্ছেন।

-বিবিসি বাংলা