আর্জেন্টিনার সেই আগুনে ম্যাচ হবে রিয়ালের মাঠে

আর্জেন্টিনার ফুটবলে কলঙ্কের দাগ যা লাগার লেগে গিয়েছে। পুরো ফুটবল দুনিয়া জেনে গেছে দেশটির বড় দুই ক্লাব বোকা জুনিয়র্স ও রিভারপ্লেটের সমর্থকেরা কতটা উগ্র, হিংস্র। শুধু কলঙ্কের তিলক লাগা নয়, প্রতিপক্ষ বোকা জুনিয়র্সের খেলোয়াড়দের বহনকারী গাড়িতে রিভারপ্লেট সমর্থকদের হামলার জের ধরে কোপা লিবার্তোদোরেসের ফাইনালের দ্বিতীয় লেগ ম্যাচটিই আর আর্জেন্টিনায় হচ্ছে না। আর্জেন্টিনা থেকে ম্যাচটি স্থানান্তরিত হয়ে চলে গেল স্পেনে। হ্যাঁ, দুই আর্জেন্টাইন ক্লাবের আগুন-তপ্ত ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে রিয়াল মাদ্রিদের স্টেডিয়াম এস্তাদিও সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে!

গত ২৪ নভেম্বর কোপা লিবার্তোদোরেসের ফাইনালের এই দ্বিতীয় লেগ ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল রিভারপ্লেটের মাঠ এস্তাদিও মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামে। ম্যাচটি খেলার জন্য বোকা জুনিয়র্সের খেলোয়াড়েরা স্টেডিয়ামেও চলে গিয়েছিল। কিন্তু বোকা জুনিয়র্সের খেলোয়াড়দের বহনকারী গাড়ি স্টেডিয়াম প্রাঙ্গনে যেতেই হামলা চালায় রিভারপ্লেটের উগ্র সমর্থকেরা। ইট, পাথর ছুঁড়ে মারে।

এমনকি খেলোয়াড়দের লক্ষ্য করে মরিচের গুড়াও স্পে করে। হামলায় গাড়ির গ্লাস ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। সেই ভাঙা গ্লাসের কাচ গিয়ে লাগে খেলোয়াড়ের চোখে-মুখে। সঙ্গে মরিচের গুড়ার ঝাঁঝাল স্প্রে। বোকা জুনিয়র্সের অধিনায়কসহ বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় আহত হন। কয়েকজনকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। শুধু গাড়িতে হামলা নয়, স্টেডিয়ামের বাইরে দুই দলেল সমর্থকদের মধ্যেও মারামারি বেঁধে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে।

ন্যাক্কারজনক এই হামলার পরই ম্যাচটি পণ্ড হয়ে যায়। তবে তার পরদিনই একই ভেন্যুতে ম্যাচটি পুনরায় আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ফুটবল সংস্থা কনমেবল। কিন্তু বোকা জুনিয়র্স কিছুতেই রিভারপ্লেটের মাঠে ম্যাচটি খেলতে রাজি হয়নি। বরং তাদের অনুরোধেই কনমেবল ম্যাচটি আর্জেন্টিনার বাইরে কোথায় আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়।

সম্ভাব্য ভেন্যু হিসেবে প্রথমে বলা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি স্টেডিয়ামের কথা। এরপর শোনা যায়, দুই আর্জেন্টাইন ক্লাবের মর্যাদা লড়াইটা হবে কাতারের রাজধানী দোহায়। মহাদেশীয় ক্লাব টুর্নামেন্টের ফাইনাল। যে ফাইনালে প্রথম বারের মতো মুখোমুখি আর্জেন্টিনার দুই বৈরি প্রতিবেশী ক্লাব। ম্যাচটির গুরুত্ব অনুধাবন করে দোহা বিশাল অঙ্কের টাকা দেওয়ার প্রস্তাবও করেছিল। কিন্তু টাকার টোপ ফেলেও দোহা ম্যাচটা আয়োজনের অধিকার পায়নি।

বোকা জুনিয়র্স ও রিভারপ্লেট, দুই ক্লাবের সভাপতি রোডোলফো ডি’অনোফ্রিও এবং ড্যানিয়েল অ্যাঞ্জেলিসির সঙ্গে রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের সম্পর্কটা খুবই ভালো। সেই সুসম্পর্কের কারণেই ম্যাচটি নিজেদের মাঠে আয়োজন করতে রাজি হয়েছেন রিয়াল সভাপতি। সুসম্পর্কের বিষয়টি তো আছেই। তাছাড়া রিয়ালের মাঠ বার্নাব্যুর বিশ্বজুড়ে খ্যাতিও অন্য রকম। দুইয়ে মিলে কনমেবলও বার্নাব্যুকেই বেছে নিয়েছে।

ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে ৯ ডিসেম্বর রোববার। ৯ ডিসেম্বরই লা লিগার ম্যাচ আছে রিয়াল মাদ্রিদের। কিন্তু রিয়াল সেই ম্যাচটা খেলতে প্রতিপক্ষ হুয়েস্কার মাঠে। মানে বার্নাব্যু থাকবে ফাঁকা। রিয়ালের চতুর সভাপতি তাই সুযোগটা লুফে নিতে এক মুহূর্ত দেরি করেননি। প্রস্তাব দেওয়া মাত্রই ‘হ্যাঁ’ বলেছেন।

মাদ্রিদে আর্জেন্টাইন কলোনিও আছে। যেখানে ৭১ হাজার আর্জেন্টাইন বাস করেন। তারা ভেন্যু হিসেবে বার্নাব্যুকে বেছে নেওয়ায় ভীষণ খুশি। নিজ দেশের দুই ক্লাবকে বার্নাব্যুতে ম্যাচ খেলার জন্য আগামী শুভেচ্ছাও জানিয়েছে তারা।