আলোড়ন তুলেছে শামস সাইদের উপন্যাস ’ধানমন্ডি ৩২ নম্বর’

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আলোড়ন তুলেছে তরুণ কথাশিল্পী শামস সাইদ এর উপন্যাস ’ধানমন্ডি ৩২ নম্বর’। ধ্রুব এষের চমৎকার প্রচ্ছদে উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে, অন্বেষা প্রকাশন। ৬৪০ পৃষ্ঠার উপর ঝকঝক সাদা কাগজে লিখা ৪০ ফর্মা বইটির মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র ৬০০ টাকা। বইমেলাতে অন্বেষা প্রকাশনের ২২ নাম্বার প্যিভিলিয়নে ৪৫০ টাকায় বইটি সংগ্রহ করছেন পাঠক। ইতিহাসের অনিবার্য বাস্তবিক ঘটনাপ্রবাহ ও শোকগাঁথা নিয়ে রচিত বইটি বইমেলায় পাঠক আগ্রহের তালিকায় রয়েছে জানিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন, লেখক শামস সাইদ।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বর একটি উপন্যাস। ইতিহাস আশ্রিত। সে ইতিহাস রাজনীতর। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমাজ ও পরিবার। কেননা রাজনীতি আমাদের সমাজ ও পরিবারের বাইরের কিছু না। সে ইতিহাস একটি পরিবারের , একটি জাতির, একটি দেশের ভাঙা-গড়ার, একজন নেতার, একটি জাতির স্বপ্ন, আশা-আকাংখা, আশ্রয়, সংগ্রাম, স্বাধীনতা আবার একটি রাতের নির্মম কাহিনির ইতিহাস। আর সব ইতিহাস এসে কেন্দ্রীভূত হয়েছে একটি বাড়িতে। সে বাড়িটি হচ্ছে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাড়ি। এই বাড়িটি বাকিংহাম প্যালেস, হোয়াইট হাউস, ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট, রাইসিনা হিল কিংবা ক্রেমলিনের মতো সরকারি মর্যদা ছিল না। ছিল না কোন নামও। তবে এই বাড়িটি বাঙালি জাতির ভালোবাসার রাজ্যে এক অন্যান্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত।

১৯৬২ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন শুরু হয়। বাঙালির মনের মধ্যে দানা বাঁধতে থাকা অসন্তোষ। বাড়তে থাকে অপশাসনের হাত থেকে মুক্তির আকাঙ্খা। শেখ মুজিবুর রহমান দিন দিন আরো বেশি গণমানুষের নেতা হয়ে উঠতে থাকেন। আর ৩২ নম্বরের এই বাড়িও হয়ে উঠতে থাকে মুক্তির প্রতীক। গণমানুষের ভরসা ও আশ্রয়স্থল। ১৯৬২ সালের আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ’৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ’৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, ’৭১ সালের শুরুতে অসহযোগ আন্দোলন- এসব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বঙ্গবন্ধু পরিকল্পনা করা, নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সবই করেছেন এই ৩২ নম্বর বাড়িতে। ’৭১-এর উত্তাল দিনগুলোয় দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরাও জাতির পিতার সঙ্গে দেখা করার জন্য এখানে ভিড় করেছিলেন। এ ছাড়া ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের রূপরেখাও এ বাড়িতেই তৈরি করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।

১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে এই বাড়িতে বসে বঙ্গবন্ধু যে নির্দেশ দিতেন সে অনুসারেই চলত দেশ ও বাঙালি জাতি। দৈনিক আজাদ পত্রিকা লিখেছিল ‘বিশ্ব বাসীর কাছে আজ দিবালোকের মত স্পষ্ট যে বাংলার শাসন ক্ষমতা এখন আর সামরিক কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারে নাই বরং তা সাতকোটি মানুষের ভালোবাসার শক্তিতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর এখন বাংলার শাসন ক্ষমতার একমাত্র উৎস হইয়া পড়িয়াছে।’

বঙ্গবন্ধুর বাসভবন তখন অঘোষিত সরকারি সদর দপ্তরে পরিণত হয়েছিল। বাঙালির আশা আকাঙ্খার ঠিকানা হয়েছিল। হয়ে উঠেছিল নিরাপদ আশ্রয়। আবার শত্রুদের চক্ষুশূল। দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে এই বাড়ি ছাড়েননি বঙ্গবন্ধু। ওঠেননি সরকারি আলিশান বাসভবনে। স্বাধীনতার আগে পরে আওয়ামী লীগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মিটিংও হয়েছে এই বাড়িতে। যদিও কংগ্রেসের অনেক মিটিং নেতাজির বাড়িতে হয়েছে। তবে ৩২ নম্বরের মতো সংগ্রামের সদর দপ্তরে পরিণত হয়নি। পরিণত হয়নি একটি জাতির ঠিকানায়। ৩২ নম্বর একটি জাতির ঠিকানায় পরিণত হয়েছিল। এই ইতিহাসের হাত ধরে কল্পনার পথে হেঁটে গেছে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর উপন্যাসটি।