আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করি না : প্রধানমন্ত্রী

প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগে অপরাধের ধরণ পাল্টাতে থাকায় একে মোকাবেলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) সদস্যদের আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন হয়ে গড়ে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অপরাধীদের নতুন প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে মোকাবেলা করার জন্য এসএসএফ সদস্যদের আরো পারদর্শী হওয়া দরকার এবং সেইদিক থেকেও আমাদেরকে যুগোপযোগী থাকতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শনিবার দুপুরে রাজধানীর তেঁজগাঁওয়ে এসএসএফ অফিসার্স মেস-এ এসএসএফ’র ৩৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন। খবর: বাসস

এসএসএফ’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।

সরকার প্রধান বলেন, এসএসএফকে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে। এই বাহিনীতে নতুন নতুন প্রযুক্তির যেমন সন্নিবেশন ঘটাতে হবে সেইসাথে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় অপরাধের পরিবর্তিত অবস্থা সম্পর্কেও তাদের প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। আর সেইসাথে যেকোন অবস্থা মোকাবেলার সরঞ্জামাদিও দরকার।

‘তাই যখন যেটা প্রয়োজন সেটার আমরা ব্যবস্থা করছি। ক্ষেত্র বিশেষে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েও তা করা হচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।

রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে এবং নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এসএসএফ সদস্যদের কর্তব্য নিষ্ঠার ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এই বাহিনীর সকল সদস্যদের অত্যন্ত দৃঢ় মনোবল দেখেছি এবং তাদের আনুগত্য এবং উচ্চমানের পেশাদারিত্ব আমাকে সত্যিই গর্বিত করেছে।

তিনি বলেন, কতক্ষণ আছি জানি না। তবে, যে সময়টুকু পাব আমি দেশের জন্য কাজ করে যাব। নিজেকে নিয়ে বেশি চিন্তা করি না কারণ, আমার ভাগ্যে যা আছে তা ঘটবে। তোমাদের জন্যই (যারা নিরাপত্তায় নিয়োজিত) আমার চিন্তা, আল্লাহ তোমাদের হেফাজত করুন।

দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি শান্তিপূর্ণ অবস্থান না হলে দেশের উন্নতি করা সম্ভব নয়। যদিও অনেক ঝড়-ঝাপটা এসেছে সেগুলোকে মোকাবেলা করেই দেশকে আমরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, ‘প্রবৃদ্ধির হার ৮ ভাগে উন্নীত করেছি, যা একসময় কেউ চিন্তাও করতে পারতো না।

অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে আজকে বাংলাদেশের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে আমাদের কর্ম পরিধিও বেড়েছে। কারণ, এবারে আমরা ৫ লাখ কোটি টাকার ওপরে বাজেট দিয়েছি।

দেশের জনগণ, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থা অত্যন্ত দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদসহ নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেছে বলেই দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

অবশ্য জাতির জীবনে ’৭৫ এর কালো রাত না এলে বাংলাদেশ আরো আগেই এই সক্ষমতা অর্জনে সমর্থ হত বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতির পিতার স্বপ্নের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা যেন কোনভাবেই ব্যর্থ না হয়, মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের ইতিহাস কেউ যেন ভুলে না যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তির ধর্ম ইসলামে সন্ত্রাসের কোন স্থান নেই এবং আল্লাহ তায়ালাই শেষ বিচারের মালিক, কে ভাল মুসলমান কে ভাল নয়, সেটা নির্ণয়ের দায়িত্ব তিনি কাউকে দেন নাই। তাহলে আজকে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে কেন এত সংঘাত, খুনোখুনি, রক্তারক্তি। কেন সমস্যাগুলি নিজেরা বসে আমরা সমাধান করতে পারি না।

মুসলমানদের এই রক্তপাতে লাভবান হচ্ছে কেবল অস্ত্র ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করে তিনি এই সংঘাত বন্ধে ওআইসিকে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আমি জানি এই কথা বলে আমি আমার জীবনকে আরো ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছি। এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ছাড়া কাউকে ভয় করি না। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করি না, আমার বাবাও যেটা করেননি।

জাতির পিতার দিয়ে যাওয়া পররাষ্ট্র নীতি সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়, অনুসরণ করেই তিনি সরকার পরিচালনা করছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সকলকে নিয়ে একটা শত্রুই নির্দিষ্ট করতে চাই, সেটা হচ্ছে দারিদ্র। যেটা সমগ্র বিশ্বের একটি কমন এনিমি।