আষাঢ়ের আগেই জলাবদ্ধতার কবলে রাজধানী

এবার চৈত্রের শেষ থেকেই রাজধানী ঢাকায় কমবেশি বৃষ্টি হচ্ছে। নতুন বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ থেকে এর মাত্রা বেড়েছে। আষাঢ়ের বেশ আগের এমন বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হচ্ছে জলাবদ্ধতাও। যদিও গতবারের ভয়াবহ জলাবদ্ধতার অভিজ্ঞতা থেকে এবার নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও পয়োনিষ্কাশন সংস্থা ওয়াসা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্ষা শুরু হতে দুই মাসের কম সময় বাকি থাকলেও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। মতিঝিল থেকে দৈনিক বাংলা, পল্টন, প্রেস ক্লাব, শিক্ষা ভবন হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নতুন করে নিষ্কাশন ব্যবস্থার সংস্কারকাজ করছে ঢাকা ওয়াসা। খণ্ড খণ্ড এই প্রকল্পের কোনো অংশেরই কাজ শেষ হয়নি। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এর সুফল মিলবে না।

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এবার বাংলা বছরের প্রথম দিন রাজধানীতে ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়, যা ছিল ওইদিন দেশের সর্বোচ্চ। গত ১৭ এপ্রিল মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজধানীতে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এর আগের রোব ও সোমবার রেকর্ডশূন্য হলেও বেশ কয়েকটি স্থানে বৃষ্টি হয়।

বর্ষার আগেই এমন বৃষ্টিতে ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। গত মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। ওইদিন সকালে বঙ্গভবন থেকে গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে গুলিস্তান পাতাল মার্কেট পর্যন্ত রাস্তার পাশে পানি জমে থাকতে দেখা যায়। বিকাল ৫টার দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাকার মেশিনের মাধ্যমে সড়ক দুটির পানি নিষ্কাশন করা হয়। একই চিত্র ছিল দৈনিক বাংলা মোড় থেকে জনতা ব্যাংক পর্যন্ত সড়কে। এ ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া যায়।

রাজধানীর পয়োনিষ্কাশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলোর কাজ নিয়ে বরাবরের মতো এবারো নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে আছে অসময়ে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি এবং ধীর গতি ও নিম্নমানের কাজ। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের পুরো সময়টা ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কারকাজে হাত দেয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। উত্তরের কাজ দ্রুত শেষ হলেও দক্ষিণের ব্যাপারে রয়েছে নানা অভিযোগ। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীন মতিঝিল, আরামবাগ, ফকিরেরপুল, টিকাটুলি এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ প্রায় ৭০ ভাগ হওয়ার পর বন্ধ রয়েছে।

এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাথ খুঁড়ে নতুন ড্রেন তৈরি করা হচ্ছে। নতুন ড্রেনের পাড় বাঁধাসহ নিচে কংক্রিটের আস্তর দেওয়া হলেও উন্মুক্ত অবস্থায় রয়েছে অধিকাংশ জায়গা। কিছু জায়গায় ড্রেনের ওপর কংক্রিট স্লাব দিয়ে ঢাকা হলেও বসানো হয়নি ম্যানহোল ঢাকনা। ড্রেনগুলোর বেশ কিছু জায়গায় জমেছে আবর্জনা। অনেক জায়গায় ড্রেনের প্রবাহ মুখ বন্ধ থাকায় সেগুলোতে জমেছে ময়লা পানি।

জলাবদ্ধতা নিরসনে গত মাসে নতুন পয়োনালী স্থাপন কাজ হাতে নেয় ঢাকা ওয়াসা। এর অংশ হিসেবে জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকা হিসেবে মতিঝিল, আরামবাগ, দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত চলছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। খণ্ড খণ্ডভাবে চলা এই কাজের কোনো অংশের শতভাগ শেষ করতে পারেনি সংস্থাটি।

এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওয়াসার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের অর্থায়নে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে পুরনো খালগুলো নিষ্কাশন, নতুন করে পয়োনালী স্থাপন ও পুরনোগুলোর সংস্কার। আশা করি, বর্ষার আগেই এসব কাজ শেষ হবে। রাজধানীকে শতভাগ জলাবদ্ধতামুক্ত করা যাবে- এমন দাবি করছি না। তবে গতবারের মতো স্থায়ী জলাবদ্ধতা হবে না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন তাদের নিয়মিত কাজের অংশ। তবে গত বছরের বৃষ্টিতে রাজধানীর ভয়াবহ জলবদ্ধতার কারণে সরকারের উদ্যোগে বেশ কিছু কাজ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নতুন কয়েকটি ড্রেন করা হয়েছে। তাদেরও আশা, নগরীতে এবার স্থায়ী জলাবদ্ধতা হবে না।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোসলেহ উদ্দিন হাসান বলেন, গতবারের ভয়াবহ জলাবদ্ধতার পর সরকারের তরফ থেকে বেশ নড়েচড়ে কথা বলা হয়েছিল। সেবা সংস্থাগুলোকে নিয়ে কয়েকবার সমন্বয় বৈঠকও করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত জলাবদ্ধতা নিরসনে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখছি না। ওয়াসা ও সিটি করপোরেশন যেসব কাজ করছে সেগুলো তারা প্রতিবছরই করে। এগুলো কখনোই কাজে আসেনি। ঢাকার ভেতরের প্রধান প্রধান খালের ব্যাপারে তেমন কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। আমরা আগেও বলেছি, খালগুলোয় প্রবাহ সৃষ্টি করতে না পারলে জলাবদ্ধতা নিরসনে যা-ই করা হোক তা কাজে দেবে না।