আসছে দিন ভয়ংকর, পৃথিবী পুড়বে

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেশ দূষণ, খাদ্যাভাবসহ নানা সংকটের আবর্তে পৃথিবী যায় যায়! গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা অব্যাহত থাকলে আসছে দিন হবে আরও ভয়ংকর। খরা, বন্যা ও ভয়াবহ তাপপ্রবাহের মতো মহাবিপর্যয় নেমে আসবে। বাড়বে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা।

দাবানলে পুড়বে পৃথিবী। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার নিয়ে জাতিসংঘ জলবায়ুবিষয়ক প্যানেল আইপিসিসির ভীতিকার এসব তথ্যে পুরো পৃথিবী এখন তোলপাড়। প্রায় ৬ হাজার নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এমন তথ্য তুলে এনেছে প্যানেলটি। এতে বলা হয়েছে, ২০৩০ থেকে ২০৫২ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করবে। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের অজান্তেই জলবায়ু পরিবর্তনের ঘূর্ণিপাকে হারিয়ে যেতে পারে পৃথিবী।

আর সেই দিন বেশি দূরে নয়। উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রির নিচে রাখতে না পারলে ১২ বছরের মধ্যে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। পৃথিবী বাঁচানোর সর্বশেষ এ সতর্কতার পর থেকেই নড়ে উঠেছে বিশ্বপরিবেশবাদীরা। কী কী কারণে জলবায়ুর আজ এই হাল এবং কী এর প্রতিকার, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর প্রচারণা। উদ্দেশ্য একটাই- এতেও যদি হুঁশ ফেরে মানুষের।

গ্রিনহাউস এফেক্ট : পৃথিবীর ওপর একটি চাদর তৈরি করে রেখেছে গ্রিনহাউস গ্যাস। গ্যাসগুলো হল কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, জলীয়বাষ্প ও মিথেন। গ্যাসের চাদর পৃথিবী থেকে বিচ্ছুরিত শক্তিকে শুষে নেয় এবং তাপমাত্রা সঠিক স্তরে রাখতে সাহায্য করে। কয়লা, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ালে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত হয়। বন নিধন করলে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়।

মনুষ্যসৃষ্ট : গ্রিনহাউস গ্যাস প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মনে হলেও এটি আসলে মানুষের তৈরি। বিশ্বে সৃষ্ট এ গ্যাসের ৬৪ শতাংশের জন্য মানুষই দায়ী। মানুষের প্রকৃতিবিরুদ্ধ নানাবিধ অপকর্মের ফলস্বরূপ বায়ুমণ্ডলের ক্ষতিকারক গ্যাস, বিশেষ করে কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রার সংকটজনক বৃদ্ধি উষ্ণায়নের প্রধান কারণ।

এগুলো হল- কয়লা, পেট্রলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, জমির চাহিদা মেটাতে যথেচ্ছ গাছ কেটে ফেলা, মাটিতে মিশে না এমন পদার্থ যেমন প্লাস্টিকের উৎপাদন, কৃষিতে যত্রতত্র সার ও কীটনাশকের প্রয়োগ।

হাল ফ্যাশন : আধুনিক যুগের তরুণ-তরুণীদের ফ্যাশনও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। বিবিসি জানায়, বৈশ্বিক ফ্যাশন শিল্প প্রতিবছর ১২০ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ হতে সহায়তা করে। শুধু যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর সাড়ে ২৩ কোটি পদের কাপড়ের টুকরা মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। কারখানার টন টন সুতা সমুদ্রে পতিত হচ্ছে।

আগ্নেয়গিরি : আগ্নেয়গিরির উদ্গিরণ হলে প্রচুর পরিমাণে সালফার ডাইঅক্সাইড গ্যাস, জলীয়বাষ্প, ধুলো, ছাই বায়ুমণ্ডলে নির্গত হয়। যদিও আগ্নেয়গিরির উদ্গিরণ মাত্র কয়েক দিন স্থায়ী হয়, তা হলেও প্রচুর পরিমাণে গ্যাস-ছাই বের হওয়ায় তা দীর্ঘদিন ধরে প্রকৃতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায়। গ্যাস ও ধুলো ভূপৃষ্ঠে আসা স্বাভাবিক সূর্যরশ্মির পথে বাধা সৃষ্টি করে।

পৃথিবীর হেলে থাকা : পৃথিবী তার কক্ষপথের উলম্ব তলের সঙ্গে ২৩.৫০ ডিগ্রি কোণে হেলে রয়েছে। এ ধারার পরিবর্তন হলে তা জলবায়ুর ওপর বড় প্রভাব ফেলে। বেশি হেলে যাওয়া মানে গ্রীষ্মঋতু আরও বেশি গরম হওয়া ও শীতঋতু আরও ঠাণ্ডা হওয়া। কম হেলে থাকা মানে গ্রীষ্মে গরম কম ও শীতে ঠাণ্ডা কম।

এসব কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে পৃথিবী আরও উষ্ণ হয়ে উঠছে। ফলে ২১০০-২৩০০ সালের মধ্যে যে ধরনের হুমকির মুখে পড়বে বিশ্ব, তার একটি চিত্র তুলে ধরেছেন বিজ্ঞানীরা।

পৃথিবীর আইস ক্যাপে গলন : ইন্সটিটিউট ফর গভর্নেন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা ডুরউড জায়েলকে বলেন, ‘জলবায়ু চক্রের সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয় হল পৃথিবীর আইস ক্যাপ (যেসব বরফ-খণ্ড ৫০ হাজার কিলোমিটার থেকে কম জায়গাজুড়ে বিস্তৃত)।

আইস ক্যাপ সূর্যরশ্মির একাংশকে প্রতিফলনের মধ্য দিয়ে মহাকাশে ফেরত পাঠায় এবং পৃথিবীকে ঠাণ্ডা করে। বরফ-খণ্ডগুলো গলে সাগরের অস্বচ্ছ পানিতে রূপান্তরিত হলে তা তাপ শোষণ করে এবং স্বতন্ত্রভাবে উষ্ণতা বাড়ায়।

সমুদ্রস্তর বৃদ্ধি : ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা ৮ ফুট বেড়ে যাবে। আর ২৩০০ সালের মধ্যে এর পরিমাণ বাড়বে ৫০ ফুট। ফলে নিম্নাঞ্চলের দেশগুলো সাগরের নিচে তলিয়ে যাবে। সিঙ্গাপুরের নানইয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এমন পূর্বাভাস দিয়েছেন।

বিরূপ আবহাওয়া : উষ্ণ জলবায়ু বৃষ্টিপাতের ধারা পরিবর্তন করে বন্যা ও খরার প্রকোপ বাড়াবে। গ্লেসিয়ার ও মেরুর বরফ-চাদর আরও বেশি পরিমাণে গলবে। ফলে সমুদ্রের জলস্তর বাড়বে। বলা হচ্ছে, গত কয়েক বছরে ঘূর্ণিঝড় ও হারিকেন বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি।

কৃষিতে প্রভাব : জলবায়ুর পরিবর্তন বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটাবে এবং তা সরাসরি কৃষি উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলবে। এছাড়া মাটির গুণাগুণ, কীট এবং রোগের চরিত্রের ওপরও জলবায়ু পরিবর্তনের পরোক্ষ প্রভাব পড়বে। চরম জলবায়ু যেমন- প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত, উচ্চতাপমাত্রা, বন্যা, খরা প্রভৃতি শস্য? উৎপাদনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।