আ.লীগকে ইফতারে আমন্ত্রণ জানায়নি বিএনপি

এ বছর এখন পর্যন্ত তিনটি ইফতার অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে রাজনীতিবিদদের সম্মানে বিএনপির ইফতার অনুষ্ঠান হবে কাল শনিবার। এতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে আমন্ত্রণ জানায়নি বিএনপি।

বরাবরের মতো এতিম শিশুদের নিয়ে শুরু হচ্ছে বিএনপির ইফতার আয়োজন। আজ প্রথম রোজায় রাজধানীর লেডিস ক্লাবে এই ইফতার অনুষ্ঠান হবে। সব সময় এই ইফতারের আয়োজক হিসেবে থাকেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কারারুদ্ধ থাকায় এবার তিনি থাকতে পারছেন না।

এবার বিএনপির আয়োজনে ইফতার অনুষ্ঠানের জন্য পাঠানো আমন্ত্রপত্রগুলোতে আয়োজক হয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। কিন্তু কয়েকটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকায় ইফতার অনুষ্ঠানগুলোতে থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। মূলত তাঁরাই হবেন আয়োজক।

এবার বিএনপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত তিনটি ইফতার অনুষ্ঠান চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে আজ শুক্রবার হবে এতিম শিশুদের সঙ্গে। কাল শনিবার হবে লেডিস ক্লাবে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে এবং রোববার একটি পাঁচতারকা হোটেলে কূটনীতিকদের সঙ্গে ইফতার অনুষ্ঠান হবে।

এর বাইরে আরও কয়েকটি ইফতার অনুষ্ঠান হবে। সেগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ইফতারে বরাবরই সব দলের প্রধান, সাধারণ সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এবার আওয়ামী লীগ ও ১৪-দলের শরিকদের ছাড়া অন্য প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অন্যান্য বছর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদককে ইফতার মাহফিলে আমন্ত্রণ জানাতেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কখনোই আওয়ামী লীগের কোনো নেতা দলের পক্ষ থেকে ইফতারে যোগ দেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন নেতা বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই আমন্ত্রণ জানানোটা অর্থহীন। তা ছাড়া খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপির প্রধান এখন তারেক রহমান। তিনিই আমন্ত্রণ জানিয়ে পত্র দেবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তারেককে নিয়ে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে যে ধরনের মনোভাব, তাতে আমন্ত্রণ পাঠানোটা যৌক্তিক মনে করেনি বিএনপি। এ কারণে এবার আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

রাজনীতিবিদদের সম্মানে এবারের ইফতারে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিকদের বাইরে আমন্ত্রণ পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-রব) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। এ ছাড়া সিপিবিসহ বাম রাজনৈতিক দল ও ধর্মভিত্তিক দলগুলোকেও ইফতারে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের আমন্ত্রণে ইফতারের দাওয়াতপত্র পৌঁছানো হচ্ছে। জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদদের কাছে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দিয়েছেন।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ৩৪ বছর ধরে বিএনপির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কোনো রাজনৈতিক সরকারের সময় এবারই তিনি প্রথমবারের মতো কারাগারে আছেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হওয়ায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে খালেদা জিয়া পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দীন রোডের কারাগারে আছেন। ১৬ মে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন তিনি। তবে আরও অন্তত ছয়টি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় এখনই কারাগার থেকে মুক্ত হতে পারছেন না তিনি।