জেলা কমিটি গঠনে কড়া নির্দেশ শেখ হাসিনার

আওয়ামী লীগের জেলা কমিটি দিতে প্রভাবশালী মহলের ‘অনুরোধ’ ও ‘চাপ’ তোয়াক্কা না করার নির্দেশ দিয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। সম্প্রতি জেলা কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দলটির দায়িত্ব পাওয়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা বেশ বিপাকে পড়েছেন। পরে বিষয়টি দলীয় প্রধানকে জানালে তিনি তাদের এ নির্দেশ দেন।

জেলা কমিটি গঠনে সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগের একাধিক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
জানা গেছে, জেলা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দলের প্রভাবশালী নেতাদের ‘তদবির’ ও ‘চাপে’ ওষ্ঠাগত দায়িত্ব পাওয়া যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা। অনেক জেলায় কমিটি ঘোষণা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের পড়তে হচ্ছে প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিদের রোষানলে। তবে জেলা কমিটি নিয়ে তৈরি হওয়া জটিলতা দূর করতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, ‘কারও চাপে নয়, কমিটি হতে হবে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বিবেচনায়। এক্ষেত্রে যত প্রভাবশালী মহলের অনুরোধ ও চাপ থাকুক না কেন তা আমলে নেয়া যাবে না।’

শুধু তাই নয়, জেলা কমিটি নিয়ে কোন কোন নেতা, মন্ত্রী ও এমপিরা প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন তার একটি তালিকাও চেয়েছেন শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা জেলায় জেলায় গিয়ে সম্মেলন ও যাচাই-বাছাই করে ঢাকায় এসে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করছেন। কেউ কমিটিতে স্থান পেলে তাদের সাধুবাদ জানান, আবার বঞ্চিত হলে সমালোচনা করেন। বিষয়টি ইতিমধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের বিব্রত করে তুলেছে।

ওইসব কেন্দ্রীয় নেতা আরও জানান, শেখ হাসিনা তাদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, কারও চাপে নত হয়ে জেলা কমিটিতে লোক অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। যাকে দিয়ে রাজনীতি চাঙ্গা হবে, সংগঠন গতিশীল হবে তাদের জেলা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তিনি এটাও জানিয়েছেন, কমিটি দিতে অমুক মন্ত্রীর প্রভাব, তমুক নেতার ধমক- এগুলোকে তোয়াক্কা করা যাবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের অন্তত ছয় জন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘জেলা কমিটি ঘোষণা করতে গিয়ে ভীষণ চাপ অনুভব করতে হচ্ছে। মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা নিজেদের আস্থার লোকদের কমিটিতে রাখতে তৎপর হয়ে উঠেছেন। এজন্য প্রতিনিয়ত আসছে তদবির। এসব তদবিরে এখন আমরা অতিষ্ট।’

তারা আরও বলেন, ‘জেলা কমিটিকে কেন্দ্র করে অনেক প্রভাবশালী নেতা ধমকের সুরে কথা বলেন। আবার অনেক নেতা আছেন তাদের কথা মতো কমিটি না দিলে ‘দেখে নেয়ার’ হুমকি দেন। এটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। অবশেষে বিষয়টি দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে অবহিত করেছিলাম। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা কারও চাপে মাথা নত না করে সংগঠন ও রাজনৈতিক স্বার্থে কমিটি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’

তিন জন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘তিনটি বিভাগের ৫টি জেলায় আওয়ামী লীগের কমিটি দিতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হয়েছিল। প্রভাবশালী দুই জন মন্ত্রী বার বার জটিলতার সৃষ্টি করেছিলেন। অবশেষে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার শরণাপন্ন হলে তিনি বিষয়টি মীমাংসা করেন। তবে একটি জেলা কমিটি ঘোষণার কাজ এখনও আটকে আছে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় সংগঠন। এই দলে অসংখ্য লোক নেতা হওয়ার যোগ্য কিন্তু সবাইকে পদ দেয়া সম্ভব না। অনেক সময় যোগ্য নেতারাও বাদ পড়ে যান। তবে যোগ্যতার মানদণ্ডে নেতা বানানোর চর্চা আওয়ামী লীগ করে। তবু জেলা কমিটি নিয়ে বিভিন্ন নেতার অনুরোধ থাকে। এটা রাজনীতিরই অংশ।’

জানতে চাইলে দলের সভাপতিমণ্ডলীর আরেকজন সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘বড় দলে এসব নিয়ে জটিলতা হয়। আবার সমাধান হয়ে যায়। এটাও রাজনীতির অংশ।’

অবশ্য চূড়ান্ত বিচারে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা কারও চাপে মাথা নত না করে সংগঠন ও রাজনৈতিক স্বার্থে কমিটি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।