আ.লীগ ও যুবলীগের দুই নেতাকে বোরকা পরিয়ে হত্যা!

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই নেতাকে বোরকা পরিয়ে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা। সোমবার বিকেলে দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) প্রাঙ্গণে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

নিহত দুজন হলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনসার আলী দিহিদার (৫৩) ও উপজেলা যুবলীগের সদস্য শেখ শুকুর আলী (৪৫)। হামলার সময় ইউনিয়ন তাঁতী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক বাবুল শেখকে (২৫) কুপিয়ে জখম করা হয়।

দৈবজ্ঞহাটি ইউপির আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান মো. শহীদুল ইসলাম ফকির ও তাঁর লোকজন এ হামলা চালান বলে অভিযোগ করেছেন আহত বাবুল শেখ ও নিহতদের স্বজনরা। পুলিশ ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ফকির, ইউনিয়নের দফাদার ও চৌকিদারসহ তিনজনকে আটক করেছে।

এদিকে দুই নেতাকে প্রকাশ্যে হত্যার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে দৈবজ্ঞহাটির লোকজন। আজ মঙ্গলবার সকালে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ মল্লিকের নেতৃত্বে দৈবজ্ঞহাটি বাজারে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে। এতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা যোগ দিয়েছেন। তাঁরা হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ফকির ও তাঁর ক্যাডারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন।

আহত বাবুল শেখ বাগেরহাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিকেলে দৈবজ্ঞহাটী বাজারে গেছি। বাজারে যাওয়ার পরে হঠাৎ চেয়ারম্যান শহীদুলের লোকজন পিস্তল ঠেকিয়ে নিয়ে গেছে। যাওয়ার পরে আমাকে বলছে, যা যা বলব তা তা করবি। এরপর বোরকা-টোরকা পরাইছে। বলছে নইলে তোরে মাইরা ফালাব। তোর মারেও মাইরা ফালাব।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বিকেলে দৈবজ্ঞহাটি বাজারের বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ নেতা আনসার আলী, ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি শেখ শুকুর আলী ও বাবুলকে ধরে ইউপি কার্যালয়ে চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ফকিরের টর্চার সেলে নিয়ে যান তাঁর লোকজন। এরপর তাঁদের বোরকা পরিয়ে টর্চার সেল থেকে বাইরে এনে শহীদুল ও তাঁর লোকজন বলতে থাকেন, ‘এরা চেয়ারম্যানের ওপর হামলা চালাতে এসেছে, এদের ধরে মার।’ এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজন তিনজনকে গুলি করে, কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে। মারতে মারতে তাঁদের বোরকা খুলে ফেলে। আধা ঘণ্টা নির্যাতনের পর খবর পেয়ে পুলিশ এসে আহতদের উদ্ধার করে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এ সময়ে বাগেরহাট সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. শেখ রিয়াদুজ্জামান যুবলীগ নেতা শুকুরকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর দুই আহত আনসার আলী ও বাবুলের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পথে আওয়ামী লীগ নেতা আনসারের মৃত্যু হয়।

নিহত আনসার আলী দৈবজ্ঞহাটির জোকা গ্রামের আবির শেখের ছেলে এবং যুবলীগ নেতা শুকুর আলী একই গ্রামের মোসলেম শেখের ছেলে। শুকুর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ খানের খালাতো ভাই।

এদিকে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই নেতার মৃত্যুর ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময়ে ওই এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে বাগেরহাট শহর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ সময়ে হতাহতদের সমর্থকদের হামলায় ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ফকিরের ভাগ্নে মিল্টন খান (৪০) আহত হন। তাঁকে সন্ধ্যায় উদ্ধার করে পুলিশ বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

মোরেলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজিজুল হক জানান, এলাকায় আধিপত্যের ঘটনার জের হিসেবে দৈবজ্ঞহাটিতে এই ঘটনা ঘটেছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ফকির, ইউনিয়নের দফাদার ও চৌকিদারকে আটক করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

দৈবজ্ঞহাটির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাগেরহাট-৪ (শরণখোলা-মোরেলঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হলেন আওয়ামী লীগের ডা. মোজাম্মেল হোসেন। ওই আসন থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চান বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ। তাঁদের কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। দৈবজ্ঞহাটিতে নিহতরা সোহাগের অনুসারী বলে পরিচিত। আর হামলার অভিযোগে আটক ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ফকির সংসদ সদস্য মোজাম্মেলের অনুসারী বলে পরিচিত। শহীদুল বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি দলটিতে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্য মোজাম্মেলের কাছের লোক হয়ে ওঠেন। আওয়ামী লীগে কোনো পদ না পেলেও পরপর দুবার তিনি নৌকার মনোনয়নে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।