আ.লীগ প্রার্থীর রাখাইন ভাষায় নির্বাচনী পোস্টার

তফসিল অনুসারে ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে পুরোদমে চলছে প্রচারণাও। যে যেভাবে পারছেন ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

কিন্তু এসবের মধ্যে রাখাইন ভাষাভাষী বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মন জয় করতে রাখাইন ভাষায় পোস্টার ছাপিয়ে আলোচনা তুঙ্গে তুলেছেন কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে নৌকার প্রার্থী সাইমুম সরোয়ার কমল। সংসদীয় আসনে রাখাইন ভাষাভাষীর বাস রয়েছে এমন এলাকায় এসব পোস্টারগুলো শোভা পাচ্ছে। প্রচার করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।

নৌকা প্রার্থী সাইমুম সরোয়ার কমলের প্রচার সেল সূত্রমতে, কক্সবাজার-৩ আসনে রামু, কক্সবাজার পৌরসভা ও চৌফলদন্ডী এলাকায় রাখাইন ভাষাভাষী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস। এসব এলাকায় রাখাইন ভাষাভাষীর ভোটার সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এদের ভোটগুলো টানতে তাদের মৌখিক ভাষা ব্যবহার করে কিছু পোস্টার করা হয়েছে।

তাদের দাবি, এসব রাখাইন জনগোষ্ঠীর লোকজন স্বাভাবিকভাবেই বাংলা বোঝেন না। তাই তাদের ভোট প্রার্থনায় রাখাইন ভাষায় নির্বাচনী পোস্টার ছাপিয়েছেন কমল।

কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাখাইন নেতা বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে বাংলা ভাষা বুঝব না এটা কেমন কথা? ৭০’এর দশকের পর জন্ম নেয়া সব রাখাইন ভাষাভাষীই বাংলা ভালোমতোই লিখতে, পড়তে ও বুঝতে পারে। আর বৌদ্ধ ধর্মালম্বী সবাই রাখাইন ভাষা ব্যবহার করে না এবং ক্ষেত্র বিশেষে জানেও না। সুতরাং বাংলা ভাষা বোঝে না উল্লেখ করে রাখাইন ভাষাভাষী বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের হেয় করা হলো। অনেকে আমাদের মিয়ানমারের অধিবাসী বলেই মনে করতে পারে, যা এক ধরনের অবমাননাকর।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভাষা সাহিত্যিক বলেন, রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষা অর্জনকারী হিসেবে বিশ্বের বুকে বাঙালি ছাড়া আর কোনো জাতি নেই। সেই সূত্রে বাংলাদেশি রাখাইন গোষ্ঠিও বাংলা ভাষার গর্বিত অংশীদার। তারা কেন বাংলা বুঝবে না, এটা বোধগম্য নয়। স্বাধীন দেশের জাতীয় নির্বাচনে ভীনদেশের ভাষায় পোস্টার করা আমাদের ভাষাকে এক ধরনের হেয় করার সামিল। এমনটি কক্সবাজার পৌর নির্বাচনেও পরিলক্ষিত হয়েছে। এক কাউন্সিলর প্রার্থী রাখাইন ভাষায় পোস্টার ও ব্যানার টানিয়েছিল।

তবে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে নৌকার প্রার্থী সাইমুম সরোয়ার কমলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু ফোনটি রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, পোস্টারগুলো সম্পর্কে জেনেছি। নির্বাচনী আইনে বিদেশি ভাষায় পোস্টার করা না করার উপর কোনো নিষেধাজ্ঞা পায়নি। তাই এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

স্থানীয়দের মতে, এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর চেয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে বিএনপির প্রার্থী লুৎফর রহমান কাজল। ২০০৮ সালে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার পরও প্রায় অর্ধলাখ ভোটের ব্যবধানে কাজল এমপি নির্বাচিত হন। তবে ২০১৪ সালে আসনটি থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন কমল। এবার ভোটযুদ্ধে কে জয়ী হন তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন সাধারণ ভোটাররা।

উল্লেখ্য, কক্সবাজার-৩ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৪ হাজার ৩৬ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬১২ জন এবং পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৬ হাজার ৪২৪ জন।