ইউনূসকে পশ্চিমাদের তল্পিবাহক বললেন দীপু মনি

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনূসকে পশ্চিমাদের তল্পিবাহক বলেছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেছেন, পশ্চিমা বিশ্ব তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ‘ইনস্ট্রুমেন্ট’ বা লোক খুঁজে বেড়ান। আর আমাদের দেশের কিছু কিছু লোক অপেক্ষা করে থাকেন তারা পশ্চিমাদের তল্পিবাহক হবেন।

বুধবার জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বক্তৃতা দেয়ার সময় দীপু মনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের গত সরকারের আমলে ড. ইউনূসের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন কী ‘অন্যায়’ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তার তদন্তে সিনেট কমিটির তদন্ত শুরুর বিষয়টি উল্লেখ করতে গিয়ে দীপু মনি এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের আগের সরকারের আমলে পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির চেষ্টার অভিযোগ তোলে বিশ্বব্যাংক। সরকার তখন থেকেই বলে আসছে, ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে বহাল রাখতে চাপ দিতেই এই অন্যায় অভিযোগ তোলা হয়েছে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে সরকারকে একাধিক চিঠি ও ফোন করে এ ব্যাপারে চাপ দেয়া হয়েছিল বলেও জানিয়েছে সরকার।

ড. ইউনূসের বয়স ৬৭ বছর পেরিয়ে যাওয়ায় আইন অনুযায়ী তাকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে গিয়েও তিনি হেরে যান। এরপর পশ্চিমারা এই চাপ দেয়া শুরু করে।

পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির চেষ্টার যে অভিযোগ বিশ্বব্যাংক এনেছিল সেটি কানাডার একটি আদালত ‘গালগপ্প’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকারের আমলে সিনেট কমিটি ইউনূসের পক্ষে হিলারির প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করেছে।

দীপু মনি বলেন, ‘পশ্চিমা প্রভুদের তল্পিবাহকরা আর কেউ নয়, এরা নব্য মীরজাফর। এদের ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।’

রাষ্ট্রীয় আয়-ব্যয়ের প্রস্তাবিত হিসাবকে লুটপাটের বাজেট বলায় বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করেন দীপু মনি। তিনি বলেন, লুটপাট যাদের কাজের অন্তর্ভুক্ত তারাই এ কথা বলছেন। তিনি ও তার অর্থমন্ত্রী কালোটাকা সাদা করেছিলেন। তার ছেলেরা বিদেশে টাকা পাচার করে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে। তাদের আমলে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক টাকা প্রত্যাহার করেছিল। কই তারা তো চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি। আমাদের আমলে পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ ‍তুলেছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তা চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। বিশ্বব্যাংক অভিযোগ তো প্রমাণ করতে পারেনি, উল্টো ভুল স্বীকার করে তারা এখন বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়নে ফিরে এসেছে।

দীপু মনি বরেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বা তার পরিবারের কোনো দুর্নীতি থাকলে সরকার এই অনঢ় অবস্থানে থাকতে পারতেন না।’

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যখন মানুষ ইফতারের আগে দোয়া দরুদ করেন, তখন তিনি চূড়ান্ত মিথ্যাচার করেন। আল্লাহ মাফ করুন। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের পকেটে হাত দিয়েছেন…তারা মানুষের পকেটে না শুধু, মানুষের গলায় হাত দিয়েছিল। তাদের আমলে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৮৫ ডলার, আজকে তা ১৬০২ ডলার।’

ভ্যাটে সংশোধনীর প্রস্তাব

নিত্যপণ্য বাদে সব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্তকে সাহসী বলে প্রশংসা করেন দীপু মনি। তিনি বলেন, ১৯০টি দেশে মুসকের হার ১৫ ভাগ। আর বাংলাদেশে যখন ভ্যাট শুরু হয়, তখনও এই হার নিয়েই তা শুরু হয়।

আর যেসব পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে সেসব পণ্যের দামের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়ছে কি না, তা তদারকির ওপর গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দেন দীপু মনি।

সোলার প্যানেল এখন দেশে তৈরি হচ্ছে জানিয়ে আমদানি ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কর আরোপের প্রশংসা করেন দীপু মনি। তিনি বলেন, দেশীয় শিল্প সংরক্ষণে এটা ভূমিকা রাখবে।

ফাস্টফুডের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাটের পাশাপাশি ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের পাশাপাশি তরুণদের মধ্যে এসব খাবারের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন দীপু মনি।

কৃত্রিম ফুল কেন ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হবে সে প্রশ্নও রাখেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, দেশের অতি উচ্চবিত্ত শ্রেণিই এটা ব্যবহার করে।

একইভাবে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান দীপু মনি। বলেন, ‘এখন ইংরেজি মাধ্যমে কেবল উচ্চবিত্তের সন্তানরা পড়ে না। মধ্যবিত্তও পরে। একটি মাত্র স্কুলকে ভ্যাটের আওতায় রাখা হলে সেটা বৈষম্যের সৃষ্টি করতে পারে।’

এছাড়া স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানো, শস্য বিমার, প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বিমার ব্যবস্থা করার তাগিদ দেন দীপু মনি। পাশাপাশি মেডিটেশন সেবাকে ভ্যাটের আওতামুক্ত রেখে একে স্বাস্থ্যসেবা অথবা জনকল্যাণমূলক সেবার অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেন দীপু মনি।