ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় কী?

এটা তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। মানব সভ্যতার উন্নয়নে এর ভূমিকা অপরিসীম। তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়ায় আমরা মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বকে জানতে পারছি খুব সহজে। জাতীয়, আন্তর্জাতিক, শিক্ষা, বিনোদন ও খেলাধুলাসহ সব বিষয়ের ভাণ্ডার হচ্ছে ইন্টারনেট। এখন আমাদের কোনো তথ্যের জন্য কোনো ব্যক্তির ওপর নির্ভর করতে হয় না।

ইন্টারনেটে সার্চ দিলে সহজেই সব পাওয়া যায় মুহূর্তের ব্যবধানে। অর্থাৎ বলা যায়, ইন্টারনেট আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) দেয়া তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮ লাখ ৫৯ হাজার। এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

ইন্টারনেটের কল্যাণে মানুষের জীবন অনেক সহজ ও গতিশীল হচ্ছে, একথা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু প্রতিটি বিষয়ের ভালো ও খারাপ দুটি দিকই রয়েছে। ইন্টারনেটের খারাপ দিক হল এর অপব্যবহার। তরুণ সমাজ তাদের মূল্যবান সময় অপচয় করছে ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ ও ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। কেউ যদি এগুলোতে অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এবং এ কারণে যদি তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হয়, তখনই বাধে সমস্যা।

এর ফলে ভুক্তভোগীর পাশাপাশি সমস্যায় পড়তে হয় বন্ধু, পরিবার ও সমাজকে। অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহার অনেকটা মাদকাসক্তির মতো। এতে করে স্থূলতা দেখা দেয়া, ঘুম কমে যাওয়া, সৃজনশীল চিন্তাভাবনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়া, মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়াসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। বাংলা সাহিত্যের একজন লেখক বলেছেন, ‘বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ।’

আজকাল বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডায় বসলে দেখা যায়, যে যার মতো স্মার্টফোন নিয়ে ব্যস্ত। বাস বা ট্রেনে চলার সময় অনেককেই দেখা যায় ফেসবুকিং বা ব্রাউজিং করে দীর্ঘ সময় পার করতে। অথচ এই দীর্ঘ সময়ে একটা ভালো বই পড়া যেতে পারে।

বর্তমান বাংলাদেশ ও ভারতে ফেসবুক সাংবাদিকতা বেড়ে যাচ্ছে। ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে হয়রান করা হচ্ছে। অনেকে বিভিন্ন নামে-বেনামে ফেসবুক ফেক আইডি খুলছে এবং খারাপ তথ্য শেয়ার করছে। এসব বিষয়ে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

ইন্টারনেট আসক্তি থেকে রেহাই দিতে তরুণদের সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া অভিভাবকরা সন্তানদের কাছে ইন্টারনেটের ভালো ও ক্ষতিকর দুটি দিক নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।

শুধু অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব শেষ না করে সন্তানদের সময় দিতে হবে। এতে তরুণ-তরুণীরা সচেতন হবে। সমাজ, পরিবার, ব্যক্তি তথা সবার সচেতনতাই পারে এ ধরনের সমস্যা থেকে আমাদের মুক্তি দিতে।

-মো. আলমগীর হোসেন : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়