ইভিএম সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিপন্থী : বিএনপি

সরকারের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) চালুর মাধ্যমে আরেকটি বড় ধরনের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পথে এগুচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। বৃহস্পতিবার সকালে নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘যেহেতু তাদের জনপ্রিয়তা নেই, সেজন্য তারা আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা ফন্দিফিকির শুরু করেছে। ইভিএম সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিপন্থী। বাংলাদেশের ভোটাররা ইভিএম মানতে নারাজ। ভোটাধিকার হরণে এই পদ্ধতির ব্যবহার চুপিসারে ডিজিটাল অন্তর্ঘাত।’

তিনি বলেন, ‘আসলে এই ইভিএম ব্যবহারে নির্বাচন কমিশনের মহা আয়োজনের কলকাঠিটি নাড়ছে বর্তমান অবৈধ সরকার। সুতরাং, আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশনের সরকারের নির্দেশের বাইরে একধাপ পা ফেলার ক্ষমতা নেই।’ এ সময় তিনি নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন দলবাজ কর্মকর্তাদের সরিয়ে কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানান।

ইভিএম প্রসঙ্গে বিএনপির এই মহাসচিব বলেন, ‘২০১৩ সালে সিটি নির্বাচনে বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেটে কেবল দুটি করে কেন্দ্রে ইভিএমে নির্বাচন হয়। রাজশাহী সিটির টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্রে ইভিএমে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন হয়। ভোট গণনা করতে না পারায় সেখানে ব্যাপক সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। শামসুল হুদা কমিশন ২০১১ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ইভিএম ব্যবহার করলে ভোট গণনায় ত্রুটি ধরা পড়ে। কে এম নুরুল হুদা কমিশন দায়িত্বে এসে পুরনো ইভিএম পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন প্রবর্তিত ইভিএম রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ১৪১ নম্বর কেন্দ্রে ব্যবহার করে। কিন্তু সেখানেও ত্রুটি দেখা দেয়। এরপর গত গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণে ত্রুটির ফলে ভোটাররা ভোগান্তিতে পড়ে।’

সূত্রের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১০০টি আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সেজন্য প্রথম পর্যায়ে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ইভিএম কেনার পরিকল্পনা চলছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকদের আপত্তির পরেও তাড়াহুড়ো করে নির্বাচন কমিশনের ইভিএম স্থানীয়ভাবে কেনা ও আমদানি করা দুরভিসন্ধিমূলক।’

রিজভী বলেন, ‘জার্মানি, আমেরিকা, ভারতসহ অনেক দেশে ইভিএম মেশিন নিয়ে বিতর্ক হওয়ায় এই মেশিন ব্যবহার বন্ধ আবার কোথাও সংস্কার করা হয়েছে। অনেক দেশে মামলাও হয়েছে। আমেরিকায় অনেক স্টেট বন্ধ করেছে। আবার কিছু স্টেটে ইভিএমের পাশাপাশি ম্যানুয়াল পদ্ধতিও আছে। জার্মান আদালত ২০০৯ সালে এক রায়ে বলেছে, ইভিএম মেশিন খুব সহজেই টেম্পারিং করা সম্ভব। এতে ভোট পুনরায় গণনার সুযোগ নেই। তাই জার্মান আদালত ওই মেশিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। গত বছর ভারতে কীভাবে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট কারসাজি হয়েছে, সেটি ছবিসহ প্রকাশ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন কীভাবে অপরাধীরা ইভিএম ‘হ্যাক’ করে অনায়াসে ভোট চুরি করতে সক্ষম। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও স্যান ডিয়াগো, মিশিগান ও প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘রিটার্ন ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং’ ব্যবহার করে ইভিএমকে দুর্ব্যবহার করার সক্ষমতা প্রমাণ করেছেন। বিশেষজ্ঞদের সামনে তারা দেখিয়েছেন, কীভাবে একটা ‘ভাইরাস’ ব্যবহারের মাধ্যমে ইভিএম মেশিনে হ্যাকাররা ভোটের ফলাফল সহজেই ‘ম্যানিপুলেট’ করতে পারে।’

বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘ইভিএমের একটি ক্ষুদ্র অংশ যার নাম ডিটেক্টটেবল মেমোরি মডিউল (ডিএমএম)। তার মধ্যেই নির্বাচনের ফলাফল সংরক্ষিত থাকে এবং এই অংশটি ইভিএম থেকে খুলে নেয়া যায় এবং এভাবে অতি সহজেই নির্বাচনের ফলাফলকে পাল্টে দেয়া সম্ভব। আয়ারল্যান্ড ২০০৬ সাল থেকে ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। ২০০৯ সালের মার্চ থেকে জার্মানি ইভিএমের ব্যবহারকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছে। ফিনল্যান্ডের সর্বোচ্চ আদালত ২০০৯ সালে মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনে ব্যবহৃত ইভিএমের ফলাফল ইনভ্যালিড (অবৈধ) ঘোষণা করেছে। ২০০৪ সালের এপ্রিলে ক্যালিফোর্নিয়া ইভিএমের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।’

এ সময় তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার এই অগ্রহণযোগ্য ও বিতর্কিত মেশিন ক্রয়ের ও ব্যবহারের জন্য কেন এত উন্মুখ- তা বুঝতে কারওই অসুবিধা হওয়ার কথা না।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, সহ প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।