ইমরুল-মাহমুদউল্লাহর রেকর্ড জুটিতে লড়াকু পুঁজি

ফাইনালের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে জিততেই হবে। আবুধাবিতে কঠিন এই সমীকরণের মুখে দাঁড়িয়ে আজও বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছে আগের তিন ম্যাচের মতোই ভয়াবহ। ১৮ রানেই হারিয়ে ফেলে ২ উইকেট। সেখান থেকে ৮৭ রানে ৫। বাংলাদেশের ইনিংস তখন ১৫০ পেরোবে কিনা, তা নিয়েই দেখা দিয়েছিল সংশয়। সেই শঙ্কাই শুধু দূর হয়নি। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে ইমরুল কায়েস ও মাহমুদউল্লাহ ব্যাটিং-বীরত্ব বাংলাদেশকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে গেছে ৭ উইকেটে ২৪৯ রানের ঠিকানায়। শতভাগ নিরাপদ না হলেও ২৪৯-কে লড়াকু পুঁজি তো বলাই যায়।

ষষ্ঠ উইকেটে ইমরুল-মাহমুদউল্লাহ গড়েছেন ১২৮ রানের অসাধারণ এক জুটি। যা ওয়ানডেতে ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের আগের সর্বোচ্চ জুটিটি ছিল আল শাহরিয়ার রোকন ও খালেদ মাসুদ পাইলটের। ১৯৯৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তারা গড়েছিলেন অবিচ্ছিন্ন ১২৩ রানের জুটি।

রেকর্ড এই জুটিতেই বাংলাদেশ পেয়ে গেছে জয় প্রত্যাশার পুঁজি। ইমরুল-মাহমুদউল্লাহর জন্য কাজটা সহজ ছিল না মোটেও। পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিক আউট হন ২০.৫তম ওভারে। ফলে ওই অবস্থায় তাদের সামনে ছিল দুটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। এক, উইকেট পতনের মিছিল ঠেকানো। দুই. উইকেট ধরে রাখার পাশাপাশি রানের চাকাটাও সচল রাখা।

ইমরুল-মাহমুদউল্লাহ জুটি দুটি চ্যালেঞ্জেই জয়ী। সময়ের চাহিদা মেনে শুরুতে দুজনেই উইকেটে থিতু হওয়ার চেষ্টা করেছেন। এরপর স্কোরকার্ডের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে হাত খুলেছেন। আর এই কাজে ইমরুলের চেয়ে মাহমুদউল্লাহই বেশি নম্বর পাবেন। রানের চাকাটা দ্রুত ঘোরানোর কাজটা তিনিই করেছেন বেশি।

তবে ইমরুলের ভূমিকাটাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। উইকেট টিকিয়ে রাখতে হবে। তাই একপ্রান্তে মাহমুদউল্লাহ যেহেতু মেরে খেলছেন, অন্যপ্রান্তে ইমরুল নেন পার্শ্ব চরিত্র। সিঙ্গেলস নিয়ে মাহমুদউল্লাহকে ব্যাটিংয়ের সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। ক্যারিয়ারের ২০তম হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করা মাহমুদউল্লাহ এগিয়ে যাচ্ছিলেন চতুর্থ সেঞ্চুরির দিকে।

কিন্তু ৪৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে রশিদ খানের কাছে ক্যাচ দিয়েছেন ৭৪ রানে দাঁড়িয়ে। আফতাব আলম অফস্টাম্পের অনেক বাইরে শর্ট বল দিয়েছিলেন। রান করার তাড়নায় মাহমুদউল্লাহ সজোরে ব্যাট চালান বটে। তবে বলের পেছনে যেতে না পারায় বল তার ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় পয়েন্টে রশিদ খানের কাছে। ৮১ বলের ইনিংসটাতে দুটি ছক্কা ও ৩টি চার মেরেছেন তিনি।

মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের পর ইমরুলও তার ভূমিকা বদলে চালিয়ে খেলেছেন। তবে তারপরও মাহমুদউল্লাহকে ছাপিয়ে যেতে পারেননি। ৬ চারে করেছেন ৯২ বলে অপরাজিত ৭২ রান। এটা তার ক্যারিয়ারের ১৬তম হাফসেঞ্চুরি। শেষ দিকে নেমে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ৯ বলে করেছেন ১০ রান। মেহেদী হাসান মিরাজ ৪ বলে করেছেন অপরাজিত ৫।

বাংলাদেশ এই ম্যাচটি খেলতে নেমেছে দুটি পরিবর্তন এনে। মোসাদ্দেকের পরিবর্তে ইমরুল। এবং পেসার রুবেল হোসেনের পরিবর্তে অভিষেক হয়েছে স্পিনার নাজমুল ইসলামের। তো দুই পরিবর্তের প্রথমজন, মানে ইমরুল আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। এবার নাজমুল ইসলামের পালা। তরুণ এই স্পিনার পারবেন বল হাতে জ্বলে উঠে নিজের অভিষেকটা রাঙিয়ে নিতে? পারলে সেটা হবে বাংলাদেশের জন্যই ভালো।