ইরানি নারীদের কিভাবে ফুটবল মাঠে আনবে ফিফা?

নভেম্বরের শুরুতে তেহরানে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে মাঠে খেলা দেখতে আসেন ৮০০জন ইরানি নারী। কিন্তু বলা হচ্ছে যে, এই ফুটবল ভক্তদের বিশেষভাবে বাছাই করা হয়েছিল এবং তাদের কাছে কোনো টিকিট বিক্রি করা হয়নি। আর সেই সাথে এটি গত ৪০ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো সেদেশের নারীদের ফুটবল মাঠে এসে খেলা দেখার অনুমতি দেয়ার ঘটনা।-বিবিসি বাংলা

ফুটবল মাঠে ইরানের নারীদের আসার সুযোগ করে দিতে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা’র কাছে তাদেরই মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা প্যানেল সুপারিশ করেছে। এ বিষয়ে ইরানকে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেধে দেবারও দাবী করেছে তারা।

দেশটিতে গত ১৩ বছর ধরে একটি ক্যাম্পেইন গ্রুপ কাজ করে যাচ্ছে নারীদের ফুটবল মাঠে প্রবেশের বিষয়টি নিয়ে। ফিফার একটি রিপোর্টে বলা হচ্ছে যে, খোলা ময়দানে খেলা দেখতে ইরানের নারীদের আসতে পারার বিষয়টি নিয়ে তাই খুব উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।

সেই প্রচার দলের একজন সদস্য বিবিসিকে বলেছেন, “আমি খুবই আনন্দিত, কেননা এটি ফিফাকে চিঠি দেবার এবং সরাসরি দুই বছর ধরে তাদের সাথে কথা বলারই ফলাফল।”

“যে কোনো সুযোগ পেলেই আমরা বলেছি যে, দয়া করে ইরানকে একটি সময়সীমা বেঁধে দিন। ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো কোনো ফিফা প্রেসিডেন্ট ইরানে এসেছিলেন এবং তখন ইরানের রাষ্ট্রপতি রুহানী তাকে কথা দিয়েছিলেন যে নারীরা স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে পারবে।”

তিনি আরো বলেন, “কিন্তু তারপর আর কিছুই ঘটেনি, তার কোনো অগ্রগতিও হয়নি।”

নারীদের জন্যে এধরনের অধিকার আদায়ের প্রতিবাদের শুরু ২০০৫ সালে, বিশ্বকাপ বাছাইয়ের সময়। কিন্তু সেটি সরকারের তরফ থেকে সহিংসভাবে প্রতিহত করা হয়।

“আমরা দেখাতে চেয়েছিলাম যে, আমরা ফুটবল খেলা মাঠে বসে দেখতে চাই। কিন্তু বছরখানের জাতীয় কিছু ম্যাচ দেখার সুযোগ পাবার পর আমাদের সেখানে যেতে বাধা দেবার বিষয়ে আদেশ আসে,” বলছিলেন ক্যাম্পেইন গ্রুপের একজন।

“বলা হলো যে স্টেডিয়াম নারীদের জন্যে উপযুক্ত স্থান নয়, আর তাই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের সত্যি সত্যি মারতে শুরু করে। আমাদের প্রতিবাদের প্রতিক্রিয়া তারা দেয় অত্যন্ত কঠোরভাবে।”

“দেশের ভেতরে আমরা নারীদের এমন একটি দল রয়ে গেলাম যারা ফুটবল খেলা মাঠে গিয়ে দেখতে চায় কিন্তু তারা তা পারেনা।”

নভেম্বরের শুরুতে খোলা ময়দানে গিয়ে যেসব নারীরা খেলা দেখার সুযোগ পেয়েছেন তারাও রয়েছেন অন্যদের সন্দেহের মধ্যে।

নারীদের জন্যে প্রচারণা চালিয়ে আসা দলটির সেই সদস্য এ বিষয়ে আরো বলেন যে, “আমি খেলাটি দেখেছি কিন্তু মাঠে যাইনি- কেননা ইরানের ফুটবল ভক্তদের মধ্যে তাদের নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলেছে। এখনো অনেকেই নারীদের মাঠে যাবার বিরুদ্ধে।”

“সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়। বলা হয় যে, তারা দেশের অন্য নারীদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, কেননা সবাই জানে এটি বানানো।”

“হ্যাঁ, আসলে সেদিন নির্বাচিত যে নারীরা স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন তারা খেলার সাধারণ ভক্ত নন, কেননা তাদের কাছে একটি টিকিটও বিক্রি করা হয়নি।”

তবে আরো সফল ঘটনা ঘটেছিল ইরানের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের সময়টিতে। গত গ্রীষ্মে সেসব খেলা আজাদি স্টেডিয়ামে বিশাল স্ক্রিনে দেখানো ব্যবস্থা করা হয় দেশটির ফুটবল ভক্তদের জন্যে।

স্টেডিয়ামে গিয়ে নারীদের খেলা দেখার অধিকার আদায়ের প্রতিবাদী দলের ঐ সদস্য সে সময়ের কথা বলছিলেন যে, “তেহরানে আমার বন্ধুরা বাসায় থেকে স্টেডিয়ামে সবাই যাচ্ছেন এমন ছবি দেখতে পান। আর তারপর তারাও ছুটে যান সেখানে। তারা এক অদ্ভুত সুন্দর সময় কাটিয়েছেন সেখানে। সেখানকার বসার আসন গুলো ছিল আলাদা, দুটি ম্যাচ দেখার ব্যবস্থা ছিল সেখানে। আর তারা কোনো সমস্যায়ও পড়েননি।”

“আমরা আশা করেছিলাম যে, ব্যবস্থাটি অব্যাহত থাকবে, কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা করেনি।”

“এটি আসলেই দুঃখজনক, কেননা ইরানে নারীরা সত্যিই ফুটবলের বিশাল ভক্ত।”