ইলিশের ‘জীবন রহস্য’ কীভাবে এর উৎপাদন বাড়াবে?

গত বছর ইলিশ মাছকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মেধা-স্বত্ব কর্তৃপক্ষ।

এবার এই মাছটির পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য উন্মোচনের কৃতিত্ব অর্জন করলেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা।

ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার গবেষক ইলিশ মাছের পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য উন্মোচন করেন। ২০১৫ সাল থেকে এই জিনোম সংক্রান্ত গবেষণা শুরু করেন তারা।

এই সফলতা ইলিশ মাছের সংরক্ষণ, উৎপাদন ও গুণগত মান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

গবেষণার ফলাফল বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করার পাশাপাশি ভোক্তাদের কাছে ইলিশ আরও সহজলভ্য করে তুলতে পারে বলে মনে করেন গবেষকরা।

ইলিশ জিনোম সিকোয়েন্সিং অ্যান্ড অ্যাসেম্বলি নামের এই গবেষণা দলটির সমন্বয়ক হিসেবে আছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ. সামছুল আলম।

জেনম কি এবং এ সংক্রান্ত তথ্য কী কাজে লাগে। এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,

“জিনোম হচ্ছে কোনও জীবের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। জীবের জন্ম, বৃদ্ধি, প্রজনন এবং পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াসহ জৈবিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় জিনোমের মাধ্যমে। ”

“ইলিশ সারা বছর সাগরে থাকে। শুধুমাত্র ডিম ছাড়ার জন্য নদীতে আসে। আর এই পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স থেকেই জানা যাবে এরা কখন, কোথায় ডিম দেবে। ”

বাংলাদেশের জলসীমার মধ্যে ইলিশের মজুত কত, কোন ভৌগোলিক এলাকায় এর বিস্তৃতি কী পরিমাণে এসব বিষয়ে জানা যাবে বলে জানান ড. মোঃ. সামছুল আলম।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের তথ্যানুযায়ী দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে।

এছাড়া পৃথিবীর মোট ইলিশের প্রায় ৬০ ভাগ উৎপন্ন হয় বাংলাদেশে।

এই বিপুল চাহিদা মেটাতে প্রয়োজন ইলিশের উৎপাদন বাড়ানো। আর সেজন্য ইলিশের জন্ম, বৃদ্ধি, প্রজননসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানা জরুরি বলে মনে করেন গবেষকরা।

তাদের এই গবেষণা ইলিশের উৎপাদন বাড়িয়ে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করবে বলে মনে করেন গবেষণা দলের আরেক সদস্য ড. মোঃ. বজলুর রহমান মোল্লা।

তিনি গবেষণার তিনটি গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন।

“প্রথমত ইলিশের জিনোম সিকোয়েন্স জানার মাধ্যমে ইলিশের টেকসই আহরণ নিশ্চিত করা যাবে। ”

“এছাড়া ইলিশের জন্য দেশের কোথায় কোথায় ও কতটি অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা করা বা তুলে নেয়া প্রয়োজন তা নির্ধারণ করা যাবে।”

“সেইসঙ্গে অন্য দেশের ইলিশ থেকে আমাদের ইলিশ বৈশিষ্ট্যগতভাবে স্বতন্ত্র কিনা তাও নিশ্চিত হওয়া যাবে”, বলে জানান ড. মোঃ. বজলুর রহমান মোল্লা।

এই গবেষণা যদি বাস্তবে প্রয়োগ করা হয় তাহলে বাজারে আগের চাইতে বেশি পরিমাণে এবং বেশি সময় ইলিশ পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিষয়টাকে বেশ ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা এবং দুই সন্তানের মা জাহানারা বেগম। তিনি বলেন,

“বাচ্চারা মাছের মধ্যে ইলিশ মাছটাই খুব পছন্দ করে। কিন্তু ইলিশ সব মৌসুমে পাওয়া যায়না। পাওয়া গেলেও দাম এতো বেশি থাকে যে সব সময় চাইলেই কিনতে পারিনা। অপেক্ষা করতে হয় কবে ইলিশের সিজন আসবে। তবে ইলিশ যদি এখন বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়, দামটা যদি হাতের নাগালে থাকে। তাহলে আমাদের জন্য অনেক ভাল হয়।”

বঙ্গোপসাগর ও মেঘনা থেকে পূর্ণবয়স্ক ইলিশ মাছ সংগ্রহ করে প্রায় দুই বছর ধরে গবেষণার পর এই সফলতা অর্জন করেন তারা।

পরে গবেষণালব্ধ ফলাফল আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়। তবে একে আরও সমৃদ্ধ করতে গবেষণা চলছে বলে জানান পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. বজলুর রহমান।

গবেষণা দলের অপর দুইজন হলেন, বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম ও ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড.মোহাম্মদ গোলাম কাদের।

আট বছর আগে পাটের দুটি জাতের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছিলেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা।

এছাড়া গমের জন্য ক্ষতিকারক ব্লাস্ট রোগের জন্য দায়ী ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচন করেন এ দেশের বিজ্ঞানীরা।

-বিবিসি বাংলা

আরও পড়ুনঃ বিশ্বে প্রথম ইলিশের জীবনরহস্য উন্মোচন করলো বাংলাদেশ