ইলিশের বাজারে আগুন, বেড়েছে মাংস-সবজির দাম

আর একদিন পরেই পয়লা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষকে ঘিরে বাজারে ইলিশ কেনার ধুম পড়েছে। সেই অনুপাতে বেড়ে গেছে ইলিশের দামও। ১ কেজির কিছু বেশি ওজনের একটি ইলিশের দাম বিক্রেতারা দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা হাঁকছে, যা সপ্তাহখানেক আগেও দেড় হাজার টাকার কাছাকাছি ছিল।

বেশ কিছুদিন ধরে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হওয়া পাকা টমেটো, কাঁচা পেঁপে ও শসার দাম হঠাৎ করেই বেড়েছে। টানা দুই সপ্তাহ বেড়ে এ তিনটি পণ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বিপরীতে দু-একটির দাম কিছুটা কমলেও বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেশ চড়া।

শুক্রবার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, শান্তিনগর, মালিবাগ হাজীপাড়া, খিলগাঁও এলাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ী-ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় বাজারে ক্রেতা সমাগম বেশি। ইলিশের উপস্থিতি ও বিক্রি দুটোই বেড়েছে। ইলিশের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। বাজারে ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি ইলিশের দাম দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। এই ওজনের ইলিশ কিছুদিন আগেও এক হাজার থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া নদীর ৯০০ থেকে ১ কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ তিন হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে।

এছাড়া গত সপ্তাহের মতো সব থেকে কম দামে বিক্রি হচ্ছে তেলাপিয়া মাছ, দাম ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। পাঙাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি, রুই ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, পাবদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, টেংরা কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি, চিতল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৮৮০ টাকা। আর বয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০টাকা। লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। আর কক মুরগির দাম অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে কেজি ৩০০ টাকায় পৌঁছে গেছে। এখন বাজারভেদে কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি।

বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০-৪০ টাকা। পাকা টমেটো মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০-৪০ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে ২০-২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া শসার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০-৭০ টাকা।

পেঁপে, শসা ও পাকা টমেটোর এমন দাম বাড়ার বিষয়ে শান্তিনগরের ব্যবসায়ী মো. মুজিবর বলেন, প্রতিবছরই রোজার সময় পেঁপে, শসা ও পাকা টমেটোর দাম বাড়ে। কারণ রোজার সময় পণ্যগুলোর চাহিদা অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি থাকে। রোজার শুরু হতে আর এক মাসও বাকি নেই তাই এখন এসব পণ্যের দাম কিছুটা বেড়ে গেছে। আমাদের ধারণা রোজায় শসা ও পেঁপের দাম খুব একটা বাড়বে না, তবে পাকা টমেটোর দাম বাড়তে পারে।

রামপুরার বাসিন্দা মামুন বলেন, রোজা আসতে এখনও প্রায় একমাস সময় বাকি। অথচ এখনই রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা থাকে সেগুলোর দাম বেড়ে গেছে। আসলে বাজারে কার্যকরি মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবসায়ীরা এভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এজন্য ভুগতে হচ্ছে সাধারণ জনগণের।

তিনি বলেন, অনেকদিন ধরেই বাজারে সব ধরনের সবজির দাম চড়া। এর মধ্যে কিছুটা হলেও কম দামে পাওয়া যাচ্ছিল পেঁপে ও পাকা টমেটো। কিন্তু রোজা কাছাকাছি চলে আসায় এখন পেঁপে ও টমেটোর দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। বাজারে পেঁপে, টমেটোর সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই, তারপরও এভাবে দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা পরিকল্পিতভাবে এ দাম বাড়াচ্ছে।

এদিকে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ব্যাপক চড়া দামে বিক্রি হওয়া পটল ও সজনে ডাটার দাম কিছুটা কমেছে। বাজার ভেদে পটল বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০-৮০ টাকা কেজি। আর সজনে ডাটা পাওয়া যাচ্ছে ৬০-৭০ টাকা কেজির মধ্যে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা।

চড়া দামের পটল ও সজনে ডাটার দাম কিছুটা কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে বরবটি, কচুর লতি, শিম, লাউ, ধুন্দুল ও বেগুনের দাম। বরবটি গত সপ্তাহের মতো ৭০-৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে ঢেঁড়স, কচুর লতি ও করলা।

শিম বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা কেজি। লাউ ৭০-৮০ টাকা, ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা পিস। আর ধুন্দুল বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা। মুলা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম অপরিবর্তিত থাকা গাজর বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজি।

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী সাইদুর বলেন, রোজা কেন্দ্রিক পণ্যের দাম যা বাড়ার তা বেড়ে গেছে, রোজার মধ্যে নতুন করে পণ্যের দাম খুব একটা বাড়বে বলে মনে হয় না। তবে শসা, বেগুন, টমেটো, পেঁয়াজ, পেঁপের দাম বাড়তে পারে। বাকি সবগুলোর দাম বাড়ার খুব একটা সম্ভাবনা নেই বরং বরবটি, পটলসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম কমবে।