ইসির সংলাপে যা থাকছে আ.লীগের ১১ দফায়

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে বুধবার সরকারি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে বসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই সংলাপে আওয়ামী লীগ ১১ দফা প্রস্তাব পেশ করবে বলে ইতোমধ্যে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সংলাপে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দেবে। এছাড়া নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং সীমানা পুনঃনির্ধারণের বিরোধিতা করবে দলটি। ১১ দফার পাশাপাশি কিছু উপধারা এবং সংশোধনীর সুপারিশও করবে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র ১১ দফার বিস্তারিত জানিয়েছে।

আওয়ামী লীগের প্রস্তাবনায় আরপিও এর বাংলা সংস্করণে ইসির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এর প্রতি সমর্থন থাকবে। দলটির প্রস্তাবনায় নির্বাচনে অবৈধ অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যবহার রোধে নির্বাচনসংক্রান্ত সংবিধানের নির্দেশনা ও বিদ্যমান আইনের নিরপেক্ষ ও কঠোর প্রয়োগের সুপারিশ থাকবে। এতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত ও নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা সংস্থার নির্বাচনে অপেশাদার ও দায়িত্বহীন আচরণের জন্য কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাবও দেয়া হবে।

নির্বাচন পরিচালনায় বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মচারীদের নিয়োগ না দিয়ে প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল কর্মচারীদের থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার নিয়োগের সুপারিশ করবে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ তার সুপারিশে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে ওই দলের তৃণমূল নেতাকমীদের ভোটের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী প্রার্থীদের বাছাই করে সংশ্লিষ্ট দলের মনোনীত প্রার্থীদের একটি চূড়ান্ত প্যানেল প্রণয়নে আরপিও করতে বলবে।

এছাড়া দেশি বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও সতর্কতা অবলম্বনসহ কোনোভাবেই কোনো বিশেষ দল বা ব্যক্তির প্রতি আনুগত্যশীল হিসেবে পরিচিত বা চিহ্নিত ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থাকে নির্বচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব প্রদান না করা হয় তার প্রস্তাব দেবে তারা।

ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ গণমাধ্যম কর্মীদের নির্বাচনী বিধি-বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দায়িত্ব পালনের জন্য কার্যকর নির্দেশনা প্রদান, গণমাধ্যম, কর্মীদের উপযুক্ত পরিচয়পত্র প্রদান ও তাদের দায়িত্ব কর্মএলাকা নির্ধারণ করে দেয়ার প্রস্তাব থাকবে।

পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রভিত্তিক তালিকা ছবি ও এনআইডিসহ নির্বাচনের অন্তত তিন দিন আগে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রদান নিশ্চিতকরণ এবং প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক তাদের পরিচয়পত্র নিশ্চিত হয়ে ভোটকক্ষে প্রবেশ ও নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থানের অনুমতি প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করার সুপারিশ থাকবে।

বিরাজমান সব বিধিবিধানের সঙ্গে জনমানুষের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করতে আধুনিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের মতো আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোটদান প্রবর্তন করার সুপারিশ করবে আওয়ামী লীগ।

ক্ষমতাসীন এ দলটি সংলাপে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিরোধিতা করবে। দলটির মনে করছে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তর্ভুক্তি বা নির্বাচনকালীন সময়ে তাদের নিয়োগের বিষয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল উদ্দেশ্য প্রণেদিতভাবে দাবি তুলেছে। দেশের বিরাজমান আইন ও সাংবিধানিক নিয়মকানুনের সাথে সাংঘর্ষিক বলেও আওয়ামী লীগ তার প্রস্তাবনায় তুলে ধরবে। তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৯-১৩১ ধারা মোতাবেক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করা যাবে তা উল্লেখ করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বাহিনীকে সাধারণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হলে তাদের বিশেষায়িত অবস্থান বিনষ্ট হবে বলে ইসিতে তারা জানিয়ে দেবে।

আওয়ামী লীগ তার প্রস্তাবনায় সীমানা পুনঃ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত ইসির ওপর ছেড়ে দেয়ার কথা বললেও প্রকারান্তরে এর বিরোধিতা করবে। ২০১১ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে সীমানা পুনঃ নির্ধারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে নির্বাচনের কাছাকাছি সময় এসে আবারো সীমানা পুনঃ নির্ধারণ করতে গেলে জটিলতা দেখা দেয়ার আশঙ্কা থাকবে বলে তারা জানিয়ে দেবে।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এগার দফা প্রস্তাবনার পাশাপাশি আরপিও-এর কিছু ধারা-উপধারার সংশোধনী প্রস্তাব দেয়া হবে। দলটি সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই সাংবিবিধানি প্রতিষ্ঠানটির নাম বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বা নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ এর পরিবর্তে শুধু ‘নির্বাচন কমিশন’ রাখার কথা বলবে।

এছাড়া আরপিও সংশোধন করে ভোট কেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, এনআইডির টিপসই ও স্বাক্ষরের সাথে মিল রেখে ব্যালট পেপারের কাউন্টার ফয়েলের (মুড়ি) স্বাক্ষর ও টিপসই, ব্যালট পেপার ছিনতাই হলে প্রিজাইডিং অফিসারের করণীয় সুনির্দিষ্টকরণ, একাধিক দলের মনোনীত প্রার্থীকে কোনো দলের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া যাবে না মর্মে বিধান নির্ধারণ, জামানত বাড়ানো, নির্বাচনী মামলা নিষ্পত্তির সময় বেধে দেওয়া, আরপিও এর ৪৪ এ এ এর উপানুচ্ছেদ (২) এর ‘if he is an income tax assessee’ বিলোপ, ৭৩ এর (২বি) এ bribery শব্দের পর ‘as defined in Article 75`, `personation` শব্দের পর as defined in Article 76` ও `undue influence` শব্দের পর as defined in Articles 77` যুক্ত করা, ৭৩, ৭৪, ৭৮, ৮১ এ উল্লেখিথ সর্বোচ্চ সাজা ৭ বছরের স্থলে ৫ বছর ও সর্বোচ্চ নিম্ন ১ বছর করা, ৯১ (বি) ও (ই) অনুচ্ছেদ বিলোপ, কমিশনকে কেউ সহযোগিতা না করলে তার ক্ষেত্রে শাস্তির বিধান যুক্তকরণ, বিচারিক কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনে সুপ্রিম কোর্টের পূর্বানুমতি গ্রহণে ৯১ এ ধারা সংশোধনসহ আরপিও বেশ কিছু সংশোধনীর সুপারিশ করবে সরকারি দল।সূত্র : ঢাকাটাইমস