‘ইসি গঠনের সময় মাহবুব তালুকদারের নাম বিএনপি দিয়েছিল’

ইভিএম ব্যবহারের বিধান করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন বিষয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বৈঠক বয়কট করেছেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। একইসঙ্গে তিনি আরপিও সংশোধনের এই সিদ্ধান্তে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে সরকার কী মনে করে- এই প্রশ্নে জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বৈঠক করে। তাতে মতবিরোধ হতেই পারে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তারা যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটিই চূড়ান্ত। সরকার সেটি মেনে নেবে। আর সার্চ কমিটির মাধ্যমে এই ইসি গঠিত হয়েছে। এটি গঠনের সময় বিএনপিও নাম দিয়েছিল। মাহবুব তালুকদারের নাম দিয়েছিল বিএনপি। সেটি বড় বিষয় নয়। আমি মনে করি নির্বাচন কমিশনাররা সবাই দক্ষ ও নিরপেক্ষ।’

বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি কথা বলেন। ইভিএম বিতর্ক নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী এ সময় আরও বলেন, ‘ইভিএম ব্যবহার সরকারের নয়, ইসির সিদ্ধান্ত। পৃথিবীর এমন একটি দেশের নাম বলুন যেখানে নির্বাচন হওয়ার পর বিতর্ক ওঠেনি? এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ইভিএম ব্যবহার করা হয়। তবে বিএনপি এই নির্বাচন কমিশন গঠনের দিন থেকেই তার বিরোধিতা করছে। তারা যেকোনও ভালো কাজেরই বিরোধিতা করে, সমালোচনা করে।’

সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, সম্প্রতি ভারত, সিঙ্গাপুর, লন্ডন, ব্যাংককে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। সরকার বিষয়টিকে কীভাবে দেখছে? এর জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘কে কোথায় বসে কী মিটিং করলো তা নিয়ে আমরা ভাবি না। আমরা ভাবি বাংলাদেশকে নিয়ে। শেখ হাসিনা একজন সৎ, দক্ষ ও কর্মঠ রাজনীতিবিদ। ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স যখন ৫০ বছর হবে তখন বাংলাদেশকে তিনি কোন জায়গায় দেখতে চান, তা নিয়ে ভেবেছিলেন। তার ভাবনা ছিল ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে, ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে। তবে বাংলাদেশ এখনই মধ্যম আয়ের দেশ ও ডিজিটাল দেশ হয়ে গেছে। এখন তার ভাবনা আগামী ১০০ বছর নিয়ে। ষড়যন্ত্র অতীতেও হয়েছে। শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা বারবার হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্রকারীরা টেকেনি। ‘৭৫ সালে নিষ্পাপ রাসেলকে হত্যার মধ্য দিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা চেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর রক্তের কেউ যেন রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে না পারে। আল্লাহর অসীম রহমতে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় বেঁচে গেছেন এবং বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা এখন রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। এর মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয়েছে ষড়যন্ত্রকারীরা বারবার ব্যর্থ হয়েছে, কোনও ষড়যন্ত্র টেকেনি।’

তিনি বলেন, ‘নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক। তবে কেউ যদি আগামী নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে, সরকার তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে ছাড় দেবে না, সরকার বসে থাকবে না। ২০১৩, ‘১৪ ও ‘১৫ সালে প্রিজাইডিং অফিসার ও পুলিশ হত্যা করা, পোলিং বুথ পুড়িয়ে দেওয়াসহ যা যা অরাজকতা হয়েছে সেই সুযোগ আর কাউকে দেওয়া হবে না। কেউ যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে নির্বাচন থেমে থাকবে না। ২০১৪ সালে নির্বাচনে বিএনপি আসেনি, এরপরও নির্বাচন হয়েছে, পুরো বিশ্বের স্বীকৃতিও পেয়েছে। যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে বাংলাদেশের সন্তান ও ‘১৪ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী ও শিরীন শারমিন চৌধুরী আইপিইউ ও সিপিইউ’র চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।’

নতুন রাজনৈতিক জোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনি জোট গঠন যে কেউ করতে পারে। এতে আমাদের কোনও আপত্তি নাই। ড. কামাল হোসেন জীবনে কোনও নির্বাচনে ভোটে জয়ী হননি। যেবার জিতেছিলেন সেটি বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেওয়া আসনে। আওয়ামী লীগ থেকে তাকে দুইবার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তিনি দুইবারই পরাজিত হয়েছেন।’