ইসি মাহবুব তালুকদারকে নিয়ে আ.লীগেই ভিন্নমত!

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদারের বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই নেতার মধ্যে। বুধবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বৈঠক শেষে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সাংবিধানিক পদে থেকে কেউ এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। তাঁর (মাহবুব তালুকদারের) পদ ছেড়ে দেওয়া উচিত। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এটা তাঁর (নাসিম) ব্যক্তিগত মত হতে পারে। আওয়ামী লীগ মাহবুব তালুকদারের পদত্যাগ চায় না।

ইসি কমিশনার মাহবুব তালুকদার গত সোমবার নির্বাচন কমিশনের বৈঠক শুরুর পাঁচ মিনিট পর সভা ত্যাগ করে বেরিয়ে যান। সভায় তিনি নোট অব ডিসেন্ট বা আপত্তি দিয়ে বেরিয়ে যান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি ও তফসিল নিয়ে ওই সভায় আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। মাহবুব তালুকদার নির্বাচনের সময় কয়েকটি মন্ত্রণালয় কমিশনের কাছে রাখার বিষয়ে বৈঠকে কথা বলতে চেয়েছিলেন।

বৃহস্পতিবার ঢাকার মহাখালীতে সেতুভবনে ভারতের রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি মনে করি ভিন্নমত পোষণ করার অধিকার যেকোনো নির্বাচন কমিশনারের আছে। মাহবুব তালুকদারের হয়তো কোনো বিষয়ে ভিন্নমত হয়েছে। তাতে তো নির্বাচন কমিশনের কোনো সংকট হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমরা দলীয়ভাবে নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ কেন চাইব? আমরা দলগতভাবে এটা চাই না।’ তিনি বলেন, ‘এটা নির্বাচন কমিশনের অভ্যন্তরিণ বিষয়। কোনো দল বা ব্যক্তি চাইলে (মাহবুব তালুকদারের পদত্যাগ) সেটা তাঁর ব্যক্তিগত চাওয়া।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ’নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে মতবিরোধ হতেই পারে। আমরা দলীয়ভাবে যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে যাই, তখন কি সবাই একমত হয়? একজনে ভিন্নমত পোষণ করলেই যে তাঁর পদত্যাগ করতে হবে, আমি মনে করি না।’

১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম মাহবুব তালুকদারের পদত্যাগ দাবি করেছেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা ১৪ দল বা তাঁর (মোহাম্মদ নাসিম) ব্যক্তিগত মত হতে পারে। আমাদের আওয়ামী লীগের কোনো সিদ্ধান্ত নয়। মাহবুব তালুকদারের পদত্যাগ দাবি করতে হবে এমন কোন চিন্তা-ভাবনা আওয়ামী লীগের নেই। তাই তাঁর পদত্যাগ দাবি করতে হবে বলে আমি মনে করি না। সব বিষয়ে সবাই তো একমত হবে না, না হলে কি পদত্যাগ করতে হবে? এখন তিনি যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে চান, তাহলে এটা তাঁর ব্যাপার। কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে তাঁর কোনো পদত্যাগ দাবি করছি না।’

সাংবাদিকের অপর এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মাহবুব তালুকদারের বিষয়টি নিয়ে কেন এত হইচই হচ্ছে, আমি জানি না। সেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে চারজন মিলে নির্বাচন কমিশন। একজন নির্বাচন নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করতেই পারেন। এতে কি নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে?’

একাদশ নির্বাচন নিয়ে ভারতের কোনো আশঙ্কা আছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী কাদের বলেন, এ রকম কোনো আশঙ্কার কথা আমার সঙ্গে প্রকাশ করেননি (হর্ষবর্ধন শ্রিংলা)। আমার মনে হয় না এ ধরনের কোনো আশঙ্কা আছে। কিন্তু আমাদের দেশে যখনই ইলেকশন আসে, তখনই নানা রকমের মেরুকরণ হয়। অ্যালায়েন্স আসে।

জোটের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘এই মেকিং, ব্রেকিংয়ের ফাইনাল কী শেপ (আকার) নেবে, এ নিয়ে বলা মুশকিল। যেমন আমাদের সঙ্গেও অনেকে আসতে চেয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী জোটে আসতে প্রতিদিনই যোগাযোগ করছে একাধিক রাজনৈতিক দল। এরই মধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে কয়েকটি দল। জোটের রাজনীতির শেষ দেখতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন। এখনই মুখ খুলতে চাই না। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে জাকের পার্টি, সাতটি দলের একটি বাম অ্যালায়েন্স, বাহাদুর শাহের ইসলামী ফ্রন্ট। তাঁরা আমাদের অফিসে এসেছেন, আমাদের কাছে একটি দাবি রেখে গেছেন, আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চান, শামিল হতে চান।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মেকিং, ব্রেকিং নির্বাচনের পথে কোনো বাধা হবে না। মেকিং, ব্রেকিং হলো অ্যালায়েন্স। এখানে যার যার সুবিধার বিষয় আছে। এটা ভারতেও আছে। এটা গণতান্ত্রিক দেশে কোনো বাধা হতে পারে না। আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো নাশকতার আশঙ্কা নেই। তারপরও যদি কেউ নির্বাচনে নাশকতা করার চেষ্টা করে, তার খবর আছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ভারতের রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধনশ্রিংলার সঙ্গে আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না, এর জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, ‘ভারত অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। আমি বলেছি, আমরাও অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। আশা করি, সুন্দর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

ভারতের রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলা সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারত আশা করে আগামী একাদশ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে।’ তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন সামনে রেখে কোনো নাশকতার আশঙ্কা দেখছে না ভারত। আমরা আশা করি সবার অংশগ্রহণে সুন্দর একটি নির্বাচন হবে।’