ঈদে ‘নির্বিঘ্ন নিরাপত্তায়’ র‌্যাবের দুই সপ্তাহের বিশেষ পরিকল্পনা

আসন্ন ঈদুল-আজহায় মসজিদ, ঈদগাহ, মহাসড়ক, টার্মিনাল ও পশুর হাটে নির্বিঘ্ন নিরাপত্তার পরিকল্পনা নিয়েছে র‌্যাব। শনিবার দুপুরে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ।

জনসাধারণের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে র‌্যাবের ফেসবুক পেজে দেশব্যাপী সব পথের নিয়মিত আপডেট দেয়া হবে। রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সবাইকে এ সুবিধা গ্রহণেরও আহ্বান জানান তিনি।

র‌্যাব ডিজি বলেন, ঈদুল-আজহার দিন, এর আগে ও পরে দেশজুড়ে দুই সপ্তাহের নিরাপত্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে র‌্যাব। দেশজুড়ে এ বাহিনীর ২৪৫টি পেট্রোল টিম কাজ করবে এবং ৫৬টি স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স নিয়োজিত থাকবে।

এছাড়া র‌্যাব হেডকোয়ার্টারের ফেসবুক পেজে চার ঘণ্টা পরপর সারাদেশের সব পথের অবস্থার আপডেট দেয়া হবে। ১৪ ব্যাটালিয়নের ফেসবুক পেজেও তাদের আওতাভুক্ত এলাকার আপডেট থাকবে। প্রয়োজন মনে করলে জনসাধারণ আপডেট দেখে বের হতে পারেন। সব পথের অবস্থা জেনে সবাই এই সুযোগ গ্রহণ করবেন।

তিনি বলেন, ঈদে কোটি কোটি মানুষ ঢাকা ছেড়ে যাবেন এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করবেন। মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে রাজধানীর এক্সিট পয়েন্টগুলোতে ২০টি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থান করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের মেঘনা ও গোমতি ব্রিজে কাঠামোগত সমস্যার কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। সে কারণে এই দুটি এলাকাতেও র‌্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্প থাকবে। হাইওয়ে ও লোকাল পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে র‌্যাব কাজ করছে। আমাদের লক্ষ্য হলো, ঘরমুখো মানুষকে সার্বিক সহযোগিতা করা।

এ সময় র‌্যাব ডিজি গুগল ম্যাপের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন সড়কের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন। বলেন, ‘কাঠালবাড়ি-শিমুলিয়া এবং দৌলদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে চাপ থাকলেও এখন পর্যন্ত যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। নাব্যতা সংকটের কারণে কাঠালবাড়ি-শিমুলিয়া রুটে গতকাল নয়টি ফেরি চলাচল করলেও আজ ১৩টি ফেরি চলাচল করছে। তারপরও আমরা দুটি ফেরি ঘাটেই গরুর ট্রাকগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে পারাপারে সহায়তা করছি।’

নৌপথ এবং রেলপথে ঈদযাত্রা এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান তিনি।

পশুর হাটের বেচা-কেনা জমে উঠতে শুরু করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বড় বড় বাজারগুলোতে র‌্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্প থাকবে। যেসব বাজারে ক্যাম্প নেই সেখানে র‌্যাবের পেট্রোল টিম থাকবে। অজ্ঞান পার্টি-মলম পার্টির দৌরাত্ম্য রোধে র‌্যাব তৎপর রয়েছে।

ঈদ জামাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দিনাজপুর ও শোলাকিয়াতে বৃহত্তম দুটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া রাজধানীতে প্রধান জামাতসহ অন্যান্য ঈদ জামাতে র‌্যাবের নজরদারি থাকবে। ঈদ উপলক্ষে থ্রেট না থাকলেও সব ধরনের থ্রেটের বিষয় আমাদের মাথায় রয়েছে। আন্ডারগ্রাউন্ড বা সক্রিয় জঙ্গি সংগঠনগুলোর প্রতি গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে।

মহাসড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে বিশেষ পদক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ঈদে সড়কে ১৩৭ জনের প্রাণহানী ঘটেছে। অযথা এসব প্রাণহানীর কোনো কারণ নেই। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ২৩, ২৪ ও ২৫ আগস্ট সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মহাসড়কে বিশেষ টহল ও চেকপোস্ট থাকবে। যানবাহনের ওভারস্পিড, নিয়ন্ত্রণহীন ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের নজরদারি করা হবে। ঈদের সময় হেলপারের হাতে গাড়ি না দিতে মালিকদের আহ্বান জানান র‌্যাব ডিজি। একই সঙ্গে খোলা ট্রাকে যাত্রী না তুলতে এবং এসব ট্রাকে যাত্রী না হতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

কক্সবাজারের কাউন্সিলর একরামুল নিহতের বিষয়ে জানতে চাইলে বেনজীর আহমেদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে নির্বাহী তদন্ত হচ্ছে। এ কারণে এ বিষয়ে মন্তব্য করা সমীচিন হবে না।

মাদকের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রাখার কথা মনে করিয়ে দিয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, অনেকে গডফাদার গডফাদার করছেন। কিন্তু এমন অনেক ব্যক্তিকে দুই-আড়াই লাখ ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাদেরকে কিন্তু কেউ চিনেও না। ঈদের সময় মাদকপাচার বাড়তে পারে, সে বিষয়ে আমাদের নজরদারি থাকবে। কারও কাছে এ বিষয়ে তথ্য র‌্যাবকে জানানোরও অনুরোধ করেন তিনি।