উপস্থাপিকা সামিয়া রহমানের থিসিস চুরির অভিযোগ প্রসঙ্গে!

গোলাম মাওলা রনি : আরো অনেক দেশবাসীর মতো আমি তাকে চিনতাম এনটিভির একজন সংবাদ পাঠিকা হিসেবে। চমৎকার উচ্চরণ, কণ্ঠের মেলোডি এবং স্মার্ট উপস্থাপনের জন্য তিনি অনেকের প্রিয় সংবাদ পাঠিকার মর্যাদা পেয়েছিলেন। তার সম্পর্কে মানুষের প্রথম সহানুভূতি জেগেছিলো সেই দিন যেদিন এনটিভির ভবনে আগুন লেগেছিলো। সেদিন সামিয়া অঝোরে কেঁদেছিলেন নিজের প্রিয় কর্মস্থল পুড়ে যাওয়ার শোকে। দেশবাসী একজন নিবেদিত প্রাণ সংবাদ কর্মীর আন্তরিকতা দেখে নিশ্চয়ই তার প্রতি অন্য রকম সহানুভূতি প্রকাশ করেছিলেন।

পরবর্তীতে সামিয়া কট্টোর সরকার পন্থী টিভি চ্যানেল একাত্তরে যোগদান করেন। সংবাদ পাঠের পাশাপাশি উপস্থাপনা করতে গিয়ে তিনি সরকার বিরোধী বিশাল জনগোষ্ঠীর বিরক্ত এবং ঘৃণার পাত্রীতে পরিণত হন। বিষয়টি তিনি আন্দাজ করতে পেরেছিলেন কিনা জানিনা তবে একাত্তর টিভি ছেড়ে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন নিউজ ২৪ টিভিতে সামিয়ার যোগদান মিডিয়া সংশ্লিষ্ট অনেককেই আশ্চর্য করেছিলো।

সাম্প্রতিক টকশো ব্যতিরেকে সামিয়া রহমানের সঙ্গে আমার সাকুল্যে দেখা হয়েছিলো মোট তিনবার। প্রথমবার একাত্তর টিভিতে তার অনুষ্ঠানে অতিথি হবার কল্যাণে। দ্বিতীয়বার মেয়র আনিসুল হকের বাসার একটি অনুষ্ঠানে এবং তৃতীয়বার নিউজ ২৪ টিভির টকশোতে।

প্রতিবারই আমি তাকে দেখেছি একজন বিনয়ী, ভদ্র এবং পেশাদার মানুষ হিসেবে। সংবাদ পাঠও উপস্থাপনের বাইরে সামিয়া রহমানের যে আরো অনেক পরিচয় কিংবা পেশা রয়েছে তা আমি জানতাম না। তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ হলো তখন যখন তার থিসিস চুরি সংক্রান্ত কিছু অভিযোগ পত্র পত্রিকা ও স্যোসাল মিডিয়াতে চাউর হয়ে ভয়ানক বিতর্ক সৃষ্টি করলো।

আমি জেনে ভীষণ অবাক হলাম যে, সামিয়া মুলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। আমরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শুনা করেছি তারা খুব ভালো করে জানি যে, অতি উঁচু দরের মেধাবী এবং সর্বোচ্চ রেকর্ডকরা নম্বর নিয়ে ফার্স্ট ক্লাস না হলে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে চাকুরী তো দুরের কথা দরখাস্তও করা যায় না। অধিকন্তু অতিরিক্ত যোগ্যতা, একাগ্রতা ও পেশাদারিত্ব না থাকলে সহযোগী অধ্যাপকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে পদোন্নতি ও সম্ভব নয়। খোঁজ নিয়ে জানলাম যে, তিনি সারা জীবন ফার্স্ট হয়েছেন এবং সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে স্বর্ণপদক ও জয় করেছেন।

সামিয়া রহমানের স্বামী দেশের নামকরা শিল্পপতি যার প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার লোক চাকুরী করেন। স্বামীর ব্যবসার ধরন বিবেচনা করলে সামিয়া আমাদের সমাজের ধনাঢ্য এবং উঁচু তলার বাসিন্দা। কাজেই পেটের দায়ে ঠেকায় পড়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী করেন অথবা টেলিভিশনে উপস্থাপনা করেন এমন বদনাম কেউ করতে পারবে না। একটি নৈতিক ভালো লাগা থেকেই তিনি হয়তো সংশার কর্ম, পারিবারিক ব্যবসা বাণিজ্য এবং নিজের অধ্যাপনার বাইরে যে সময়টুকু বের করতে পারেন তা আরাম আয়েশে না কাটিয়ে টিভির সংবাদ পাঠ কিংবা উপস্থাপনার মাধ্যমে ব্যয় করেন।

সামিয়া রহমানের উল্লেখিত পরিচয় এবং কর্মপরিধির সঙ্গে তার থিসিস চুরির অভিযোগটি একবারে বেমানান। একটি থিসিস রচনা করা এবং দেশ-বিদেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করা এমন কোন কঠিন কাজ নয় যা সামিয়ার সাধও সামর্থের জন্য কঠিনতর হতে পারে। বরং তার চেয়ে অনেক অনেক নিম্ন মেধার ছাত্র-ছাত্রী কিংবা শিক্ষক-শিক্ষিকা অনায়াসে থিসিস রচনা এবং পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করে চলেছেন। এ অবস্থায় তার বিরুদ্ধে থিসিস চুরির বদনামের পেছনে যে একটি শক্তিশালী চক্র একজোট হয়ে কাজ করেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। আপনারা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতির কালো অধ্যায় এবং নারী পুরুষের ইর্ষা কাতর মনের নোংড়া কর্মের ব্যাপ্তি সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখেন তারা নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে দ্বিমত করবেন না।

অধ্যাপিকা সামিয়া রহমান সম্পর্কে এতো কিছু বলার উদ্দেশ্য হলো- তার সম্পর্কে অনেকেই মন্তব্য করেন কোন কিছু না জেনেই। অনেকেই হয়তো তার অঙ্গ ভঙ্গি, উপস্থাপনার ধরন, পোশাক-পরিচ্ছদ এবং কথাবার্তা পছন্দ নাও করতে পারেন। কিন্তু তাই বলে তাকে নানা মন্দ বিশেষণে বিশেষায়িত করে যাচ্ছে তাই গালি গালাজ করা মোটেই শোভনীয় নয়। এ ব্যাপারে আমি কেবল হযরত আলী (রাঃ) এর দুটি অমিয় বাণীর কথা বলবো। তিনি বলেন, ‘অশ্লীল বাক্য হলো মন্দ লোকের প্রধান হাতিয়ার। অন্যদিকে, আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কারো বিরোধিতা করি কেবলমাত্র কোন কিছু না জানার কারণে। ‘ ইসলাম নারীর বিরুদ্ধে কুৎসাকে কবিরা গুনাহ বলে আখ্যায়িত করেছে। আর নারীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হলো পুরুষদের জন্য সবচেয়ে বড় কাপুরুষতা।