উল্টোপথে মন্ত্রীর গাড়ি ঠেকালেন, বিচারকের গাড়িকে মামলা

গত এপ্রিলে রাজধানীর বেইলী রোডে রাস্তায় অবৈধ পার্কিংয়ের দায়ে প্রধানমন্ত্রীর এপিএস বলে মিথ্যা পরিচয়দানকারী উপ-সচিবের গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা পুলিশ পরিদর্শক এবার উল্টোপথে চলা এক মন্ত্রীর গাড়ি ঠেকিয়ে দিলেন।

মামলা দিয়েছেন এক বিচারকের গাড়ির বিরুদ্ধেও। রেহাই পায়নি বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্য, গণমাধ্যমের গাড়িও।

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের এই পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম সুমন। ঘটনাটি একদিনের পুরনো। তবে সেটি এখন ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

মঙ্গলবার বিকালে হেয়ার রোড এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিজের ফেসবুক ওয়ালে এমন কয়েকটি ছবি ও উল্টো দিকে আসা মন্ত্রীর গাড়ি ঘুরিয়ে দেয়ার ভিডিও পোস্ট করেন। যেখানে ঘটনার বিস্তারিতও তুলে ধরেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

একইসঙ্গে ভিআইপিদের এমন আচরণ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তরিকুল পোস্টে লিখেন, ‘পরিবর্তনটা আমাদেরই শুরু করতে হবে। শুরুটা না হয় আমিই করে দিলাম, অপেক্ষায় আছি আপনাদের।’

ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করা ছবির উপরে ক্যাপশনে তরিকুল লিখেন, ‘গত বছরের মত এবছরও রমজানে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় উল্টো পথে যাত্রা, সিএনজি স্টেশনে লাইন দিয়ে মূল রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা, অবৈধ পার্কিং এসব বিষয়ে আমাদের সিনিয়র অফিসারদের টনক নড়ায় স্বভাবতই এসব অভিযান পরিচালনার জন্য আমার ডাক পড়ল। আমিও নিতান্ত অনিচ্ছা স্বত্বেও অভিযানে ঝাপিয়ে পড়লাম, কারণ এসব অভিযানে ঝামেলা হলে পরবর্তীতে কেউ সহায়তা করে না।’

প্রায় প্রতিটা গাড়িকেই ৯০০ টাকা করে জরিমানার মামলা করেন তরিকুল। এদের মধ্যে আছেন সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের শাওন (পুরো পরিচয় পাওয়া যায়নি), সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপির সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, ঢাকা জেলা জজ আদালতের একজন বিচারপতি, গণমাধ্যমের মাইক্রোবাস।

উল্টো পথে আসা একজন মন্ত্রীর গাড়ির কথা তুলে ধরতে গিয়ে এই পুলিশ কর্তকর্তা লেখেন, ‘আমাদের একজন মাননীয় সিনিয়র মন্ত্রী মহোদয় বীরদর্পে উল্টো পথে এগিয়ে আসছিলেন, আমিও দুরুদুরু বুকে এগিয়ে গিয়ে বাঁধা দিলাম এবং বললাম উল্টো গেলে মামলা হবে। উনি এ এ ব্যাপারে হতবাক হয়ে কিছু একটা বলেন (আমি শুনতে পাইনি, হয়ত রাবিশ)। গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেলেন।’

তবে কোন মন্ত্রীর গাড়ি ছিলো এটি তা জানা যায়নি।

তরিকুলের পর্যবেক্ষণ বলছে, ওই পথে উল্টো দিক আসা যানবাহনের মধ্যে বেশিরভাগই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তি। এমনকি পুলিশ ও সাংবাদিকের গাড়িও আসে উল্টোপথে।

‘আমাদের সার্জেন্টরা সবাইকে ওভারলুক (অগ্রাহ্য) করে এই দশজনের উপর মামলা করে অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু আমার কাছে এই ব্যাপারটা বিবেকে খুব লাগে।’

‘আমার আইডিওলজি (বিশ্বাস) হল আমজনতা বাদ দিয়ে যদি ভিআইপি দুই/একজনকেও মামলা দেয়া যায় এবং সেটা প্রচারণায় আসে, তবে আমজনতা আর ভয়ে এই কাজগুলো করবে না।’

‘পরিবর্তনটা আমাদেরই শুরু করতে হবে। শুরুটা না হয় আমিই করে দিলাম, অপেক্ষায় আছি আপনাদের।’

গত এপ্রিলে বেইলি রোডের ভিকারুন্নেসা নূন স্কুলের সামনে ওমর চাঁন বনিক নামের একজনের গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেন পুলিশ কর্মকর্তা সুমন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পিএস পরিচয় দিলেও তিনি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও মন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুর পিএস।

সেদিন এই পুলিশ কর্মকর্তাকে হুমকিও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা কানে তোলেননি। উল্টো ওই উপ-সচিবকে বলেন, আমার লাশ পড়লেও আপনাকে মামলা নিয়ে যেতে হবে। পরে তাকে ৯০০ টাকা জরিমানা করা হয়।