উড়োজাহাজ ভ্রমণের সময় অবশ্যই করণীয়

উড়োজাহাজে চড়ার পরিমাণ এখন অনেক বেড়েছে। দেশে বা বিদেশে ব্যক্তিগত বা অফিসিয়াল কারণে আমাদের প্রায়ই চড়তে হচ্ছে উড়োজাহাজে। সড়ক ও নৌ পথের মতো আকাশ পথেও দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে আকাশপথের এ যাত্রা কিভাবে সহজ এবং সুন্দর করা যায় সে বিষয়ে অনেকেই থাকেন অসচেতন। আর প্রথমবার উড়োজাহাজ ভ্রমণের সময় অবশ্যই কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিৎ। তাই উড়োজাহাজ ভ্রমণে কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ রইল।

দুর্ঘটনা কখনো বলে কয়ে আসে না। আর আসলেও আপনাকে সামলানোর সুযোগ দিবে না। তাই আপনাকেই সব সময় সব কিছুর জন্য তৈরি থাকা উচিৎ বা থাকা ভালো। দুর্ঘটনায় যদি আপনি বেঁচে যান তাহলেতো ভালো। আর যদি আহত না নিহত হন তাহলে সেখানে কারোই কিছু করার থাকবে না। তাই অন্তত আপনার দেহটি যেন ঠিক মতো আপনার দেশ, পরিবার ও পরিচিত জনেরা সনাক্ত করতে পারে বা খুঁজে পায়। সেভাবে সব কিছু গুছিয়ে রেখে আপনার ভ্রমণে যাওয়া উচিৎ। আসুন তাহলে আজ আমরা জেনে নেই উড়োজাহাজে ভ্রমণের জন্য আপনার অবশ্যই কি কি করা উচিৎ।

বুকিংয়ে সঠিক নাম ও পাসপোর্ট নাম্বার ব্যবহার করুন: উড়োজাহাজের টিকিট বুকিং দেয়ার সময় আপনার পুরো নাম ও সঠিক পাসপোর্ট নাম্বার ব্যবহার করুন। বোর্ডিং কার্ড দেয়ার সময় এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ টিকিটের সঙ্গে আপনার পাসপোর্ট মিলিয়ে নেবে। এছাড়া ইমিগ্রেশন বা বহির্গমন বিভাগও দুটি বিষয় মিলিয়ে দেখে আপনাকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেবে। এছাড়া দরকার হলে আপনাকে সনাক্ত করতেও সুবিধা হবে।

সব তথ্য স্ক্যান এবং ইমেইল করুন: আপনার পাসপোর্ট, ভ্রমণ-বিমাপত্র, জরুরি ফোন ও কার্ড নম্বর, সেই সাথে আপনার টিকেটের কপি বিবরণী নিজের কাছে ইমেইল এ কপি করুণ এবং অন্য কপি আপনার পরিবার বা বন্ধু বান্ধবের কাছে রাখুন। (পরিবারের কারো কাছে গোপন রাখতে চাইলে, অন্য বিশ্বস্ত কাউকে জানিয়ে রাখুন। কোনো বিপদ হলে যেনো পরিবারকে জানাতে পারে)

যোগাযোগ নিশ্চিত করুন: বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সাথে ভিডিও চ্যাটে যাতে কথা বলতে পারেন তার জন্য স্কাইপ বা ওই টাইপ অ্যাপস একাউন্ট সেটআপ করুন। আপনার সর্বশেষ অবস্থান ও অবস্থা সম্পর্কে সবাইকে জানিয়ে রাখুন।

আপনার যাত্রাস্থান সম্পর্কে জানুন: যেখানে যাচ্ছেন সেখানকার স্থানীয় আবহাওয়া, সংস্কৃতি, ও পরিবহণ সম্পর্কিত সকল তথ্য জেনে নিন। স্থানীয় রীতিনীতি, রক্ষণশীলতা সম্পর্কেও জেনে নিন আগেভাগেই।

সময়মতো উড়োজাহাজবন্দরে পৌঁছান: নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উড়োজাহাজবন্দরে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসের কাউন্টারে রিপোর্ট করতে হয়। তাই যানজট ও অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোনো পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে উড়োজাহাজবন্দর রওনা হওয়া উচিত।

চেকলিস্ট মিলিয়ে নিন: উড়োজাহাজবন্দর যাত্রার আগে চেকলিস্ট মিলিয়ে দেখে নিন সব কিছু নেয়া হয়েছে কি-না। বিশেষ করে দেশের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে পাসপোর্ট, টিকিট, ডলার, ক্রেডিট কার্ড (থেকে থাকলে) নিতে ভুলবেন না।

ট্রানজিটে সময়মতো রিপোর্ট করুন: আপনি হয়তো কোনো দূরদেশে যাচ্ছেন। মাঝখানে কোনো উড়োজাহাজবন্দরে উড়োজাহাজ বদলাতে (ট্রানজিট) হবে। এ ক্ষেত্রে উড়োজাহাজ থেকে নামার পর দেখে নিন পর্যাপ্ত সময় আছে কিনা। তা না হলে এদিক সেদিক না ঘুরে দ্রুত পরবর্তী উড়োজাহাজের জন্য কাউন্টারে রিপোর্ট করুন।

সুস্থতা নিশ্চিতকরণ: ঘুরতে যাবার আগে আপনার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

এছাড়াও উড়োজাহাজে চড়ার পর যা করা উচিৎ:

হাত ব্যাগে লিকুইড রাখবেন না: হাত লাগেজে পণ্য বহনে কিছু বিধিনিষেধ আছে। এতে কোনোভাবেই পানির বোতল, ড্রিংকস, শ্যাম্পু, বডি স্প্রে, পারফিউম বা অন্য কোনো তরল রাখা যাবে না।

সিট হেলানোর আগে সতর্ক থাকুন: আপনার সিটটিকে আরামদায়ক করতে পেছনের দিকে যখন ধাক্কা দেবেন তখন খুব ধীরে কাজটি করবেন। যেন পেছনের আসনের কোনো ব্যক্তির আঘাত না লাগে।

যেকোনো পরিস্থিতিতে মাথা ঠাণ্ডা রাখুন: আকাশে উড়ার পর যদি উড়োজাহাজে কোনো সমস্যা দেখা দেয় তাহলে মাথা ঠাণ্ডা রাখুন। কারণ আপনি আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করলে সবাই আরো আতঙ্কিত হয়ে যাবে। সেই অবস্থায় উড়োজাহাজে উল্টাপাল্টা দৌড়াদৌড়ি করলে বিপদের পরিমাণ আরো বেড়ে যেতে পারে। তাই মাথা ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করুন।

সোনামনির প্রথম উড়োজাহাজ ভ্রমণ: সাধারণত শিশুর বয়স ২ সপ্তাহের বেশি হলেই উড়োজাহাজে ভ্রমণ করা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রে শিশুর ঘুমের অথবা রাতের সময়টাকে বেছে নিতে পারেন, যাতে উড়োজাহাজে ভ্রমণকালীন আপনার শিশু ঘুমের মধ্যে থাকে।

উড়োজাহাজ কর্তৃপক্ষ এবং পরিবহন নিরাপত্তা প্রশাসনের কাছ থেকে উড্ডয়নপূর্ব, বহন করা ব্যাগ এবং শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো সম্পর্কিত বিধি-নিষেধগুলো জেনে নিন।

শিশুর জন্য ছোট একটি ব্যাগে অতিরিক্ত জামা-কাপড়, মোছানোর জন্য টিস্যু, খাদ্য, চুষণি, খেলনা এবং কম্বল আছে কিনা তা নিশ্চিত হন।

উড়োজাহাজ উড্ডয়ন এবং অবতরণের সময় বোতল থেকে পানি পান করান অথবা মুখে একটি চুষনি দিন যাতে অতিরিক্ত শব্দে শিশু অস্বস্তি বোধ না করে। শিশুকে ভ্রমণকালীন সময়ে আনন্দে রাখার চেষ্টা করুন।

এয়ারহোস্টেস এর সাহায্য নিন: উড়োজাহাজে কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে এয়ারহোস্টেসকে ডাকুন। তিনিই উড়োজাহাজ ভ্রমণে আপনার সবচেয়ে কাছের মানুষ। তাই নির্দ্বিধায় যেকোনো সমস্যায় এয়ারহোস্টেসের শরণাপন্ন হোন।