এই খবর পড়ার পর কতটুক আস্থা রাখবেন ফেসবুক বন্ধুত্বে?

ইন্টারনেটের যুগে সামাজিক যোগাযোগে রীতিমতো বিপ্লব সৃষ্টি করেছে সোশ্যাল সাইট ফেসবুক। মার্ক জাকারবার্গের মস্তিষ্কপ্রসূত এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যেমন সামাজিক কাজ থেকে রাষ্ট্রীয় বিপ্লব পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে; তেমনই ফেসবুককে ব্যবহার করে অপরাধের জাল বিস্তার করে যাচ্ছে অপরাধীরা। এবারের প্রতারণার ঘটনার শিকার ওপার বাংলার হিন্দুস্থান কেবলের সাবেক কর্মী ভাস্কর ঘোষ। এই প্রতিবেদন পড়ার পর ফেসবুকে সহসা কাউকে বিশ্বাস করতে নিশ্চয়ই দুইবার চিন্তা করবেন।

গত এপ্রিলের শুরুর দিকে সদ্য ফেসবুক ব্যবহার করা শুরু করেছেন ভাস্কর ঘোষ। হঠাৎ অ্যানে এলিজাবেথ নামে এক শ্বেতাঙ্গ সুন্দরীর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট। সেই তরুণী নিজেকে মার্কিন সেনাবাহিনীর অফিসার হিসেবে পরিচয় দেয়। বন্ধুত্বের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে পারেননি ভাস্কর। তার পর থেকেই শুরু হয় চ্যাট। আর সেখান থেকেই জানতে পারেন, অ্যানে মার্কিন সেনা অফিসার। কিন্তু বেশিদিন আর চাকরি করতে চাননা। আর সেখান থেকেই ব্যবসার প্রসঙ্গ ওঠে।

ভারতের ভেষজ ওষুধের নাকি আমেরিকায় ব্যাপক চাহিদা। আর সেই সূ্ত্রেই অ্যানে ভেষজের বীজের ব্যবসার প্রস্তাব দেয় ভাস্করকে।এই নারীই ভাস্করকে বিনিতা শর্মা নামে একজনের খোঁজ দেন। বিনিতাই নাকি ভারতে ওই বিশেষ ভেষজ বীজের সরবরাহকারী। এপ্রিলেই বিনিতার অ্যাকাউন্টে ১৯ হাজার রুপি পাঠান ভাস্কর। তার পরিবর্তে কুরিয়ারে আসে কয়েকটি বীজ। এরপর অ্যানের পাঠানো মার্কিন কম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে বেঙ্গালুরুতে বৈঠক হয় ভাস্করের। তার কাছ থেকে ওই একটি বীজ ১০০ ডলারে কিনে নেন কথিত সেই কর্মকর্তা। কেনার পর তিনি ভাস্করকে বলেন, বীজ আমেরিকার পরীক্ষাগারে পরীক্ষার পর পরবর্তী অর্ডার দেওয়া হবে।

এর কয়েকদিন পর ভাস্কর ১০০ প্যাকেট বীজের অর্ডার পান। চুক্তি হয়, প্রতি প্যাকেট ৮১ হাজার রুপিতে কিনবে ওই মার্কিন প্রতিষ্ঠান।ভাস্কর অর্ডার পেয়েই বিনিতাকে ১০০প্যাকেটের অর্ডার দিয়ে দেন এবং দাম হিসেবে ১৮ লাখ রুপি বিনিতার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দেন। এরপর সপ্তাহ চলে যায়। কেউ আর সেই অর্ডারের বীজ নিতে যোগাযোগ করে না। এদিকে অ্যানে, বিনিতা বা সেই মার্কিন কম্পানির কথিত কর্মকর্তা- কারও সঙ্গেই যখন যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন ভাস্কর; তখন তার টনক নড়ে।

পুরো বিষয়টি তিনি বিধাননগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানাতে জানান। পুলিশের তদন্তে জানা যায় এতদিন ভাস্করের সঙ্গে যা কিছু হয়েছে, তার সবটুকুই সাজনো নাটক। আগাছার বীজ প্যাকেটবন্দি করে ভেষজর বীজ বলে প্রায় ১৯লাখ রুপি হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে ভাস্করের কাছ থেকে। আর পুরো পরিকল্পনার মূলে কোনো আমেরিকান সেনাবাহিনীর কেউ নয়; ছিলেন সঞ্চিতা দে নামে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর বাসিন্দা এক বাঙালি তরুণী!

ব্যাঙ্গালুরুক বেজ ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে ঘানা, নাইজেরিয়া এবং গিনির কয়েকজন যুবকের সঙ্গে পরিকল্পনা করে এই প্রতারণার ফাঁদ পাতে সঞ্চিতা। এই ঘটনার পর বিধাননগর পুলিশ অভিযান চালিয়ে সঞ্চিতাসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এরপর জানা যায়, ব্যাঙ্গালুরুতে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পড়তে গিয়ে ২ বছর আগে ঘানার যুবক জনসনকে বিয়ে করে সঞ্চিতা। তাদের ৭ মাসের একটি কন্যাসন্তানও আছে। শনিবার সঞ্চিতাকে তার শিশুসন্তানসহ আদালতে তোলা হয়। এসময় তার স্বামী জনসন ও আরও দুই অভিযুক্তকেও আদালতে তোলা হয়েছে। শুরু হয়েছ বিচারিক প্রক্রিয়া।

-তথ্যসূত্র : আনন্দবাজার