একটা প্রেম করতে পারা বা কারো শরীরে চিহ্ন এঁকে দেয়া কি জীবনের সফলতা?

এদেশের মানুষ এত বেশী ফেসবুক ব্যবহার করে কেনো ? সারা দিন- রাত ফেসবুকে পড়ে থাকে। কি মেডিক্যাল স্টুডেন্ট, কি ভবিষ্যৎ ইঞ্জিনিয়ার, কি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কি শ্রমিক, কি চাকুরীজীবি, প্রায় সবাই সুযোগ পেলেই ফেসবুকে বসে যায়। অনেকে আবার ফেসবুক কে জীবনের একটি বড় অংশ বানিয়ে ফেলেছে। ফেসবুক কি মানুষের এই পারষ্পরিক যোগাযোগ কে মূখ্য ভেবেই ফেসবুকের জন্য কোটি কোটি ডলার খরচ করছে? না, তাদের মূল উদ্দেশ্য ব্যাবসা করা। তবে ফেসবুকের অনেক ভালো ব্যবহারও আছে। কিন্তু, আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের জন্য ফেসবুক ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এখনকার ছেলে মেয়েরা ফেসবুকে পড়ে থাকে কেনো? একটি ছেলে এক বা একাধিক মেয়ের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য বা একটি মেয়ে এক বা একাধিক ছেলের সামনে নিজেকে আকর্ষনীয়রুপে তুলে ধরার জন্য। এটাই মূল উদ্দেশ্য অধিকাংশের। একটা প্রেম না করতে পারলে মান সম্মান থাকে না, বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড না থাকলে কি হতাশা, হীনমন্যতায় ভোগে সবাই। এদের কাছে জীবনের উদ্দেশ্যই এক বা একাধিক প্রেম করা, শরীর নিয়ে খেলা।

যখন একটি ছেলের কোন মেয়েকে ভাল লাগে , বা যখন কোন ছেলের প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড এর একটিভিটি যখন কোন মেয়ে কে দেখলে বেড়ে যায় , মেয়েটিকে পাবার জন্য কত কিছুই না করে ছেলেটি। ফেসবুকে হাহাকার মারা পোস্ট , একে ধরা তাকে ধরা। মেয়েটির প্রিয় মানুষদের ভাল না লাগলেও পটানো , মেয়েটিকে নিয়ে গান কবিতা কত কি ! মেয়েরাও সেইম করে ।

এরপর পায় মেয়েটিকে । শুরু হয় এটা সেটা দেয়া। উদ্দেশ্য ক্লোজ হওয়া । ফেসবুকে কারো লেখা পড়ে , পোস্ট দেখে বা সামনাসামনি কাউকে ২/৩ ঘণ্টা দেখেইবা কি কাউকে চেনা যায়? না। ফেসবুকে পশুপ্রেম দেখানো ব্যক্তিটি হয়তো বা বাস্তব জীবনে নিজেও এক পশু, কে জানে? ফেসবুকে মানুষকে ইন্সপায়ার করা ব্যক্তিটি হতে পারে খুব দুঃখী এক মানুষ? যাকে খনিক দেখে ভালবেসে ফেলেছেন, আপনি কি জানেন মেক-আপের আড়ালে তার চেহারা কেমন? জানেন তার সুন্দর চোখে ফলস আইলেশ আর কন্টাক্ট লেন্স পরা? জানেন তার মানসিকতা কতো নিচু? তাকে নিয়ে জীবন পার করতে পারবেন? আপনারা সব ই জানেন। এসব শুধুই অর্থহীন খেলা আপনাদের।

শরীরের প্রেম শেষ হলো, লেনদেন হলো, এক পক্ষ অখুশি , সম্পর্ক শেষ। আপনাদের ভাষায় ব্রেক-আপ। এখন মেয়েটি হয়ে যায় ছেলেটির কাছে নষ্টা মেয়ে। ছেলেটি হয়ে যায় মেয়েটির কাছে হ্যাংলা, অচেনা। প্রেম শেষ হতেই পারে, কিন্ত সম্পর্ক শেষ হলেই তাকে নষ্টা বলতে হবে? আর যে ছেলের কাছ থেকে এতকিছু পেলেন, সম্পর্ক শেষ হলেই মেয়েটিরও তার সম্পর্কে বাজে কথা বলতে হবে ? একদিন যার সবই প্রিয় ছিল আজ সে খারাপ! তাহলে করেছেন কি আপনারা ? নেই কারো প্রতি কারো শ্রদ্ধা। এই ফেসবুকীয় প্রেম আপনাদের জন্য এক প্রকার খেলা। একটি কষ্ট পেয়ে, ছ্যাকা খেয়ে লাইভে এসে কাঁদবেন, অপরজনকে কাঁঠগড়ায় দাঁড় করাবেন। উলো-পাল্টা কথা লিখে স্ট্যাটাস দিবেন। অন্যজনই তাই করবে। ব্যক্তিগত জীবনটাকে আপনারা পাবলিক করে দিবেন!

আপনাদের নষ্টামির জন্য সোস্যাল মিডিয়ার সুস্থ পরিবেশটা ধ্বংস হচ্ছে। ফেসবুকেও রিয়েল প্রেম করে মানুষ সুখি হয়েছে আমি জানি, তবে তাদের মাঝে লেনদেন এর নজির দেখিনি। ভালবেসে শধুমাত্র ভালোবাসার অধিকারই আদায় করা যায়, অন্য কিছু আদায় করতে চাইলে সেটাকে আর ভালোবাসা নাম দিবেন না। আপনারা ভালোবাসা কে নষ্ট করে ফেলেছেন। আপনারা নষ্ট মানুষ ।

[কিছু অংশের জন্য কৃতজ্ঞতাঃ শ্রেয়া’র কথা]

[আর এক গ্রুপ আছে ফেসবুকে তাদের কাজ অপ্রাসাঙ্গিকভাবে ধর্ম ও রাজনৈতিক কথা টেনে নিয়ে আসা। আপনি যদি মহাকাশ নিয়েও লেখেন সেখানেও তারা ধর্ম, রাজনীতি, আওয়ামীলীগ, বি এন পি, জামায়াত, ভারত, পাকিস্তান টেনে নিয়ে এসে অকারনে বিতর্ক সৃষ্টি করবে। মূল লেখাটা পড়ে বুঝতেও চাইবে না। গালিগালাজ করবে। আমি এসব বিষয়ে তেমন বুঝি না বলে এসব নিয়ে লিখিও না, এসব ক্যাচাল করতে চাইলে নিজের ওয়ালে করবেন দয়া করে। আমার কমেন্ট বক্সে নয়।]

-এস এম সাইফ রহমান এর ফেসবুক থেকে নেওয়া