একটি প্রেমের গল্প || আইরিন আক্তার

‌অদ্রিতা সেই কখন থেকে একা একা লেকের পাশে বসে আছে। লেকটি পার্কের মধ্যেই। বেশ সাজানো গোছানো। আরও অনেকেই আছে চারপাশে। কেউ কেউ রহস্যের দৃষ্টিতে দেখছে। এভাবে আরও প্রায় ঘন্টা খানেক পার হয়ে গেলো। কিছুটা অপ্রস্তুত লাগছে এখন। বারবার পার্কের গেইটের দিকে তাকাচ্ছে। আজ প্রতীক্ষার পালা যেনো শেষই হতে চাইছে না। আরও কিছুক্ষণ পার হলো। এবার লাল টি-শার্ট পরা একজনকে আবিষ্কার করলো অদ্রিতা। তার বিস্ময়ের দৃষ্টি এড়িয়ে লাল টি-শার্টের লোকটি অদ্রিতার বসে থাকা বেঞ্চের পাশের জায়গাটুকুতে বসলো।

ভাবলেশহীন যেনো। লোকটি বলতে একটু ভারি ভারি লাগছে। তারচেয়ে ছেলে বলাই ভালো। অদ্রিতা তাকিয়ে আছে। ছেলেটি ফিরছেই না। আদ্রিতা মুখ বাড়িয়ে সামনে এনে স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো। ছেলেটি এবারও ফিরলো না। অদ্রিতার হাসি পেলো। সাথে আনা ছোট্ট “টুইটি বার্ড” বলে দিচ্ছে ছেলেটির নাম রাফিন। পাখি আনার কথা ছিলো। কিন্তু টুইটি বার্ড?

অদ্রিতা খিলখিলিয়ে হেসে দিলো। ছেলেটি এবার তাকালো। আজ তাদের প্রথম দেখা। প্রথম চোখে চোখ পড়লো।

হলুদ পাখি অদ্রিতার খুব প্রিয়। টুইটি বার্ডটি হাতে নিয়ে আদ্রিতা বাচ্চাদের মতো লাফাতে লাগলো। বয়স বেশি একটা হয়নি।
সবে কৈশোর পেড়িয়ে যৌবনে। কাকতালীয় হলেও আদ্রিতার ড্রেসের সাথে রাফিনের ড্রেসের কালার মিলে গেছে।

মুঠোফোনে লজ্জার আবরণ থেকে বের হতে পারলেও বাস্তবে অতোটা তাড়াতাড়ি হলো না। বেশ খানেক সময় কেটে গেলো। এরপর হাতে হাতে স্পর্শে জেগে উঠলো দু’জন। লেকের পাড়ের সবুজ ঘাসে পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো তারা। দু’জনের মনেই এক অন্যরকম অনুভূতি। প্রেম প্রেম ভালোলাগা। তাদের দুজনের আনন্দের অন্ত নেই। সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো, সূর্যের উত্তাপ বাড়ছে। আলো ঝলমল করছিলো অদ্রিতার মুখে।

হঠাৎ করেই রাফিন বলে উঠলো, ‘খুব খিদে পেয়েছে।’ প্রিয়োর খিদে প্রিয়ার কি আর সহ্য হয়। তাড়াতাড়ি উঠে পড়লো অদ্রিতা। কিন্তু রাফিন এ কোন জায়গায় নিয়ে আসলো তাকে। একোন ক্ষুদা পেয়ে বসেছে রাফিনের? অদ্রিতা তো ভালোবাসে রাফিনকে। সব দিতেও চায়। কিন্তু এভাবে? ভাবতে থাকে অদ্রিতা।
আচমকা প্রশ্ন করলো রাফিনকে,
– আমরা কোথায় এসেছি রাফিন?
– কেনো! রুমে বসে দুজনে মিলে আড্ডা দেবো আর লাঞ্চ করবো।
– রাফিন চলো অন্য কোথাও যাই। জায়গাটা আমার পছন্দ না।

রাফিন শুনছেই না। জেদ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। অদ্রিতাকে নিয়ে রুমে বসে খাবে।
তার ভালোবাসার প্রিয় মানুষের জন্য তাকে এমন পরিস্থিতির স্বীকার হতে হবে- ভাবেনি কখনো। অদ্রিতার প্রথম দেখার দিনটির সব আশা ভালোবাসা যেনো উবে (উড়ে) যেতে বসলো। রোমান্টিক একটা ছায়া পাশে পাবে ভেবেছিলো। কিন্তু অদ্রিতা ক্রমেই বুঝে গেলো রাফিনের ইচ্ছে। সে তো কামক্ষুধার্ত অন্যকিছু। ভালোবাসার কোনো টুইটি বার্ড, সে নয়।

অদ্রিতা লনের সোফায় বসে বিষ্ময় চোখে রাফিনের কার্যকলাপ দেখছিলো। কিছুক্ষণ পর আদ্রিতাকে ডেকে পাঠানো হলো। আদ্রি রিসেপশনের দিকে গেলো। রিসেপশনের মেয়েটি বললো, ‘ম্যাম এখানে আপনার নাম, ফোন নম্বরটি লিখে স্বাক্ষর করুন প্লিজ।’

এবার অদ্রির আকাশ থেকে পাড়ার পালা। রিসেপশনে আবাসিক হোটেলটির নাম দেখলো সে। রিসেপশনিস্টের কাছে জানতে পারলো, ‘স্বামী-স্ত্রী হলেও রুম বুকিংয়ের জন্য দুজনের স্বাক্ষর লাগে। তাই এই ফরমালিটিস।’

অদ্রিতার বুঝতে আর কিছুই বাকি রইলো না। যতোটুকু ভালোবাসা জেগেছিলো সব উবে গেলো। অদ্রিতার বিবেক জেগে উঠল। হাতের কাগজটি নিয়ে রাফিনের মুখে ছুঁড়ে দিলো। পরে লন জুড়ে ‘ঠাস’ শব্দ ঘুরে বেড়াতে লাগলো। আর অদ্রিতার মনে কে যেনো সেই শব্দের পাঁচ আঙুল রক্তিম রঙে সাজাতে থাকলো।