একাদশ নির্বাচন : সংলাপে আপত্তি নেই ক্ষমতাসীনদের

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংলাপে আপত্তি নেই সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের। বিএনপির সঙ্গে সংলাপ বা আলোচনার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে নাকচ করে এলেও ভেতরের চিত্র ভিন্ন বলে জানা গেছে। আগামী নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে ইতিবাচক আলোচনা আছে। তারা প্রতিপক্ষ বিএনপির সঙ্গে সম্ভাব্য সংলাপের পথ খোলা রাখতে চায়। সরকার ও আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলকে সন্তুষ্ট করতে সংলাপ প্রয়োজন বলে মনে করেন সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের কোনো কোনো নীতিনির্ধারক। তবে সরকার যাতে সংলাপে বসে এর অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি এবং আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির জন্য বিএনপিকে অব্যাহতভাবে কাজ করতে হবে বলে ওই নীতিনির্ধারকরা মনে করেন। অবশ্য নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারে বিএনপিকে না রাখার বিষয়ে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা পুরোপুরি একমত। অক্টোবর মাস নাগাদ এই সরকার গঠন করা হতে পারে।

সংলাপের সম্ভাবনার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘আমরাই যে সব কিছু করব সেটা বাস্তবসম্মত নয়। এক হাতে তালি বাজে না। আমরা আশা করব, শর্ত না দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য তারা এগিয়ে আসবে। আর নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি এগিয়ে এলে আমরাও এগিয়ে যাব।’ তিনি বলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। আমার দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কাজেই অবাস্তব দাবি না করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তাদের (বিএনপি) এগিয়ে আসতে হবে। আমরা আশা করব, শর্ত না দিয়ে তারা এগিয়ে আসবে।’

নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন জোট ১৪ দলের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখার জন্য যা যা করা দরকার, সরকার তাই করবে।

সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। সে সময় বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের মধ্যে অন্তত তিনটি বৈঠক হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি।

এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজা পেয়ে কারাগারে আছেন। এ নিয়ে কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি বিএনপি।

সে ক্ষেত্রে সরকার গত জাতীয় নির্বাচনের আগের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। তা সত্ত্বেও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চায় না ক্ষমতাসীনরা।

সরকার ও আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার ব্যাপারে ‘লোক-দেখানো’ উদ্যোগ হলেও নেবে সরকার।

সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবেই বিএনপির সংলাপের দাবির প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেবে ক্ষমতাসীনরা। তবে সংলাপ কবে হবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিরোধী দল বিএনপিকে ‘নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারে’ অংশ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি বিএনপি। এমনকি টেলিফোন কথোপকথনসহ নানাভাবে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়েছিল তখন বিএনপির পক্ষ থেকে। সেসব ঘটনার কারণে সরকারি দলের একটি অংশ এবার বিএনপির সঙ্গে যেকোনো ধরনের আলোচনার বিরোধী। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম কালের কণ্ঠকে বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি যার যার দলের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির আগের পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতি এক নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।সূত্র : কালের কণ্ঠ