এক তরুণী মায়ের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার গল্প

উম্মে হাবিবা ফারজানা, একজন মা এবং একজন বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা। পাহাড়সম প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তিনি আজ সফল। তার এ সফলতার পেছনে অনুপ্রেরণা তিনি নিজেই। প্রায় চার বছর পড়ালেখা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার পরও শুধু দৃঢ় মনোবল আর পরিশ্রমের কারণেই সফল এই তরুণী।

৩৭তম বিসিএসের মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ফারজানা। এস এম মাহবুবুর রহমান ও বিলকিস খানম দম্পতির বড় সন্তান ফারজানা ছোট থেকেই ছিলেন দৃঢ়চেতা ও আত্মবিশ্বাসী। বরিশালের পিরোজপুরে পৈত্রিক বাড়ি হলেও বাবার চাকরিসূত্রে বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। সেখানে নৌবাহিনী স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২০০৫ সালে এসএসসি ও ২০০৭ সালে এইচএসসি সম্পন্ন করেছেন তিনি।

এইচএসসি পাশের পর ভর্তি হন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। ক্যাম্পাসের রঙিন দিনগুলোর স্বাদ বুঝে উঠতে না উঠতেই অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াকালেই মা-বাবার ইচ্ছায় বেসরকারী কর্মকর্তা মো: মনিরুল ইসলামের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মাত্র উনিশ বছর বয়সে বিয়ের পরে সাংসারিক বাস্তবতায় রঙিন জীবন কিছুটা ফ্যাকাসে লাগতে থাকে পড়াশোনা, সংসার, শ্বশুরবাড়ির সবকিছু সামলে হাপিয়ে উঠতে উঠতে। তবে একসময় আত্মবিশ্বাস দিয়ে জয় করেন সবকিছু।

মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষার সময় আট মাসের গর্ভবতী ছিলেন হাবিবা। কন্যার জন্মের পরই শুরু হয় তার প্রকৃত জীবন সংগ্রাম। সন্তান হবার পরে প্রায় কারো সাহায্য ছাড়াই একা বড় করে তুলতে থাকেন মেয়ে মানহা ইসলাম শাইরাকে। সেসময়টা সবকিছু সামলে প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্য দিয়েও সন্তানের উপর প্রভাব পড়তে দেননি তিনি।

ফারজানার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেবার পেছনে অনুপ্রেরণা তিনি নিজেই। রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা সর্বোপরি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবেই তার সিভিল সার্ভিসে যোগ দেয়ার ইচ্ছা। সেজন্য চলমান জীবন সংগ্রামের মধ্যেই নিজেকে নতুন করে গুছিয়ে চার বছর পর শুরু করেন পরীক্ষার প্রস্তুতি।

বিসিএসের প্রস্তুতির সময় স্বামী মো: মনিরুল ইসলামের অবদানকে স্মরণ করেছেন বার বার। সংসার সামলে ফারজানার পড়ার সময় ছিলো খুব কম। তাই রাত সাড়ে এগারোটা থেকে শুরু করে অনেক রাত পর্যন্ত চলতো তার প্রস্তুতি। এভাবেই অংশ নেন ৩৭তম বিসিএসে। এটাই ছিলো তার প্রথম বিসিএস। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সময় চিকেন পক্সে আক্রান্ত হন ফারজানা ও তার মেয়ে। অসুস্থ অবস্থায়ই পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। মেধাবী ফারজানা সফল হন বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায়।

লিখিত পরীক্ষার অাগে পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র দেড় মাস। সেসময় স্বামী-মা ও বোনের কাছ থেকে বেশ সহযোগিতা পেয়েছেন তিনি। লিখিত পরীক্ষায় সফলতার পর ভাইভাতেও সফল হন ফারজানা। সুপারিশপ্রাপ্ত হন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে। তার এ সফলতায় আপ্লুত তার পরিবার ও স্বজনরা। আর নিজস্ব পরিচিতি তৈরি হওয়ায় আপ্লুত ফারজানাও।

নারীদের উদ্দেশ্যে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত উম্মে হাবিবা ফারজানা বলেন, ‘সফলতার জন্য নারীদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস। আমি মানুষ, আমি একটা আলাদা সত্ত্বা। আমাকে আমার লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে। আর এজন্য যা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হলো পরিশ্রম। সে বিষয়ে কখনোই পিছপা হওয়া যাবে না।’

আত্মবিশ্বাসই সফলতার মূলমন্ত্র উল্লেখ করে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন: ‘থেমে গেলে চলবে না। ধৈর্য্য ধরে এগিয়ে যেতে হবে, বিশ্বাস রাখতে হবে। যে সময়টা পাওয়া যায় তার পুরোটা সঠিক ব্যবহার করতে হবে। কাজে লাগাতে হবে। আর পড়াশোনা চলাকালে সব রকম ডিভাইস থেকে দূরে থেকে একাগ্রচিত্তে যতটুকু সময় পড়ার, সে সময়টা পুরোপুরি পড়লে সফলতা আসবেই।’