এক বছর বিরতি শেষে বর্ষবরণে আ.লীগের মিছিল

‘জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে’ আগের বছর শোভযাত্রা না করলেও ১৪২৫ সালকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ। বরাবরের মতো পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে এই শোভাযাত্রা বের করা হয়।

বাঙালির বর্ষবরণ উৎসব পয়লা বৈশাখ বরাবর ঘটা করে পালন করে আওয়ামী লীগ। রাখে নানা আয়োজন। তবে এবার বর্ষবরণ উৎসব নিজ নিজ এলাকায় পালনে নেতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। তাই ঢাকায় দলের আনন্দ মিছিলে নেতাদের উপস্থিতি ছিল কম।

শনিবার সকালে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে বের হয়ে শোভযাত্রাটি নগরীর বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।

এর আগে দেয়া সংক্ষিপ্ত ভাষণে নতুন বছরে দেশবিরোধী সব অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করার আহ্বান জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘নতুন বছরে যেন কোন অশুভশক্তি ষড়যন্ত্র করতে না পারে সে লক্ষ্যে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

‘তারুণ্যের যে উচ্ছ্বাস আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের বিশ্বাস এই তারুণ্য সাম্প্রদায়িক অশুভশক্তির মোকাবেলা করে বিপন্ন মানবতার প্রতীক শেখ হাসিনাকে আগামী নির্বাচনে বিজয় এনে দিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

কাদের বলেন, ‘বাঙালি জাতির বীরত্বের গাঁথা ইতিহাসে ভরপুর যেমন রয়েছে তেমনই বিশ্বাসঘাতকের ইতিহাসও রয়েছে। বিশ্বাসঘাতক চক্র বারবার বাঙালির বীরত্বগাঁথার ইতিহাস কেড়ে নিতে চেয়েছে।’

‘এখনও একটি চক্র বীরত্বগাঁথা ইতিহাস মুছে ফেলার নানামুখী চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র করছে। তাদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে।’

‘বাংলাদেশ বিরোধী একটি চক্র এখনও ষড়যন্ত্র করছে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে।’

শোভাযাত্রায় ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান।

২০১৭ সালে ১০ এপ্রিল কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারাসিল আবারিয়াসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে গণভবনে মত বিনিময়ে কওমি মাদ্রসার সর্বোচ্চ সনদ দাওরায়ে হাদিসকে মাদ্রাসার সমমান দেয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর ওই বছরের শুক্রবার উদযাপিত নববর্ষের আগের দিন আওয়ামী লীগ তার বর্ষবরণের শোভযাত্রা বাতিল ঘোষণা করে।

আহমেদ শাহ শফি হেফাজতে ইসলাম নামে ধর্মভিত্তিক একটি সংগঠনেরও সভাপতি। আর এই সংগঠনটি পয়লা বৈশাখ বর্ষবরণের উৎসবের বিরোধী। আর সে সময় বর্ষবরণের আয়োজন বাদ দেয়ার পেছনে ধর্মভিত্তিক এই সংগঠনটির ‘হুমকি’ কার কি না, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। যদিও ওবায়দুল কাদের বর্ষবরণের দিন বলেন, শোভাযাত্রায় জনভোগান্তি হয় বলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

কাদের সেদিন বলেন, ‘মঙ্গলশোভাযাত্রা কিংবা পয়লা বৈশাখের সাথে ধর্মের কোন বিরোধ নেই। সুতরাং এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নেই। জনস্বার্থের কথা চিন্তা করেই সব কর্মসূচি স্থগিত করেছি।’

এবারও বর্ষবরণের দুই দিন আগে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে মঙ্গল শোভযাত্রার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল হেফাজত। একে হারাম ঘোষণা করে এই শোভাযাত্রা চালিয়ে গেলে হেফাজত বসে থাকবে না বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

এই হুমকির পর এবার মঙ্গল শোভযাত্রাকে ঘিরে নিরাপত্তাও ছিল নজিরবিহীন।