এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নৌমন্ত্রীর শোডাউন

পরিবহন ও পোশাক খাতের পর এবার ব্যাংকিং খাতে প্রভাব বিস্তার করছেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। এরই অংশ হিসেবে তিনি বিভিন্ন ব্যাংকে সভা-সমাবেশ করছেন। এবার ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে শো-ডাউন করলেন নৌমন্ত্রী।

বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মচারী পরিষদের (সিবিএ) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় অংশ নেয়া উপলক্ষে তিনি এ শো-ডাউন করেন। তবে এ সময় তিনি ব্যাংকিং খাত নিয়ে কোনো কথা বলেননি।

জানা গেছে, বুধবার বেলা দেড়টার দিকে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করেন। প্রথমে যান গভর্নর ভবনে। তবে গভর্নর ফজলে কবির সিঙ্গাপুর সফরে থাকায় তাকে রিসিভ করেন ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান, এস কে সুর চৌধুরী ও এস এম মনিরুজ্জামান।

সেখান থেকে চলে যান বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩০ তলা ভবনের তৃতীয় তলায় অবস্থিত সিবিএর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। প্রায় ১ ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে বিকেল ৩টার দিকে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ তহবিল সংগ্রহের লক্ষে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় শুধু ভাত খাওয়ার দাওয়াতে এসেছি। বাংলাদেশ ব্যাংকে আমি নতুন নয়, মন্ত্রী হওয়ার পর তিনবার এলাম। মন্ত্রী হওয়ার আগে এসেছিলাম চারবার।

তিনি বলেন, আমাকে নিয়ে গণমাধ্যম অনেক খবর ছেপেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যা বললেন তা সঠিক নয়। তার আমলেও সিবিএ নেতা-কর্মীদের বৈঠক ভাতা দেয়া হত। তখন এটা বৈধ ছিল। কিন্তু, এখন অবৈধ হলো কী করে? মন্ত্রী বলেন, ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সারাদেশে ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনগুলোকে সংঘটিত করছি। তারই অংশ হিসেবে আজকের এই মতবিনিময় সভা। ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ সময় তার সঙ্গে প্রায় শতাধিক সিবিএ নেতা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, গত সোমবার একটি অভ্যন্তরীণ আদেশ জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে বলা হয়, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে যাচ্ছেন। ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিবিএ নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন। এ সভায় যোগ দিতে বিভিন্ন শাখা কার্যালয়ের ১৮ নেতাকে যাতায়াত ও দৈনিক ভাতা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের বুধ ও বৃহস্পতিবারের সভায় অংশগ্রহণকে অফিসের কর্মসময় হিসেবেও গণ্য করা হবে।

বিষয়টি জানাজানি হলে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ গণমাধ্যমে বিষয়টির তীব্র সমালোচনা করেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই আদেশে বলা হয়, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিবিএ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের উপস্থিতিতে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশগ্রহণের জন্য সিবিএ কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতাদের আসা-যাওয়াসহ ১৪-১৭ নভেম্বর অফিসের কাজ থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো। এ সময় তাদের কর্তব্যকাল হিসেবে গণ্য হবে এবং বিধি-মোতাবেক তারা যাতায়াত ও দৈনিক ভাতা পাবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসে কর্মরত সিবিএর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মোস্তফাসহ চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বগুড়া, সিলেট, বরিশাল ও রংপুর অফিসের কর্মচারী নেতাদের এ সুযোগ দেয়া হয়েছে। তারা সবাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিবিএ আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি-সম্পাদক।

ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়, এসব বিষয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১৫ অক্টোবর রূপালী ব্যাংকে একটি মতবিনিময় সভা করেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী। সে সময় তিনি চাকরিচ্যুত আটজন সিবিএ নেতার চাকরি পুনর্বহালের দাবি জানান। চাকরি ফেরত না দেয়া হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের গোপন তথ্য ফাঁসেরও হুমকি দেন তিনি।