এবার গোলানে ইসরাইলের দখলদারির স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরাইল দখলদারিত্বের একের পর এক স্বীকৃতি পাচ্ছে।

এরই মধ্যে ফিলিস্তিনের রাজধানী পবিত্র জেরুজালেম শহরকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

গত ১৪ মে তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করা হয়েছে।

এর পর বুধবার ইসরাইলের গোয়েন্দাবিষয়ক মন্ত্রী কার্টজ দাবি করেছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মালভূমিতেও তার সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

সিরিয়ার কাছ থেকে অবৈধভাবে দখল করা গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের দখলদাবি আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই স্বীকৃতি পাবে বলে দাবি করেন তিনি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কার্টজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক আলোচনার আলোচ্যসূচিতে শীর্ষে রয়েছে ৫১ বছর ধরে ইসরাইলের দখলে থাকা গোলান মালভূমির স্বীকৃতির বিষয়টি।

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাপকভিত্তিক ইস্যু নিয়ে আমরা ইসরাইলের সঙ্গে আলোচনায় যাচ্ছি। তবে গোলান নিয়ে কার্টজের তথ্যের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেননি।

ইসরাইল ও সিরিয়ার মধ্যে কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে ১২০০ বর্গফুটের গোলান মালভূমি। দখলদার ইহুদি অধিবাসীদের সেখানে স্থানান্তর করেছে ইসরাইল।

১৯৬৭ সালে মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের আগে এটা সিরিয়ার অংশ ছিল। ১৯৮১ সালে ইসরাইল মালভূমিটিকে দখল করে নিলেও এখন পর্যন্ত কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের প্রভাবশালী কার্টজ বলেন, এমন উদ্যোগের এটিই উপযুক্ত সময়। গোলানে ইসরাইলের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি আসলে ইরানকে সবচেয়ে বেদনাদায়ক জবাব দেয়া হবে। কারণ সিরিয়ায় ইরানের সেনাঘাঁটি রয়েছে। মার্কিন বিবৃতি ও একজন প্রেসিডেন্টের ঘোষণা এটিকে আইনে পরিণত করবে।

কার্টজ বলেন, এতে তেহরানকে এই বার্তা দেয়া হবে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরাইলকে ধ্বংস করতে চায়, ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামলা করছে, তা হলে দেখুক, তারা এর সঠিক প্রতিফল পাচ্ছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহুর প্রথম বৈঠকে বিষয়টি উত্তাপন করা হয়েছিল। এখন তা যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন ও কংগ্রেসের বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনার মধ্যে রয়েছে।

চলতি বছরেই এ স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত আসছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ইসরাইলের এ মন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি, এখানে বিশাল সুযোগ তৈরি হয়েছে। এমন কিছু ঘটনার সর্বোচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, চলতি বছরই এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে কিংবা কয়েক মাস লাগতে পারে।

এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে ইসরাইলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কূটনৈতিক যোগাযোগের বিষয়ে আলোচনা করার নীতি নেই।

দামেস্কোর সবচেয়ে বড় মিত্র রাশিয়া জোর দিয়ে বলেছে, সিরিয়ার অখণ্ডতা পুনরুদ্ধার করা উচিত।

এতে বোঝা যাচ্ছে, ইসরাইলের দখলে নেয়া গোলান হাইটস সিরিয়ার ফিরে পাওয়া উচিত বলে মনে করে রাশিয়া।

১৯৭৩ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে সিরিয়া ইসরাইলের হাত থেকে গোলান হাইটস পুনরুদ্ধার করতে চেয়েছে। কিন্তু তারা তখন ব্যর্থ হয়। ১৯৭৪ সালে দুই দেশ একটা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করে।

১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর প্রায় ২০ হাজার ইসরাইলি দখলদার সেখানে বসতি গড়ে তুলেছে। গোলান হাইটসের সঙ্গে জর্ডানের সীমান্ত রয়েছে।

এ ছাড়া সেখানে ২০ হাজার দ্রুজ মুসলিম বসবাস করেন। ইসরাইল তাদের নাগরিকত্বের সুযোগ দিলেও তারা তা প্রত্যাখ্যান করেন।

গোলান মালভূমি ফিরে পেতে তুরস্কের মধ্যস্থতায় ২০০০ সালে ইসরাইলের সঙ্গে সিরিয়ার উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়, যা পরবর্তী সময়ে ব্যর্থ হয়ে যায়।