এবার বাজেট ৫ লাখ কোটি টাকার উপরে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আসন্ন অর্থবছরে এবার বাজেট ৫ লাখ কোটি টাকার উপরে হবে। আগামী ১৩ জুন আমরা পার্লামেন্টে এ বাজেট উপস্থাপন করব।

শনিবার (২৫ মে) গণভবনে পবিত্র রমজান উপলক্ষে রাজনীতিকদের সম্মানে ইফতার মাহফিলের শুরুতে তিনি একথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন আমাদের বাজেট ছিল মাত্র ৬১ হাজার কোটি টাকা। গতবার আমরা ৪ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিলাম। ইনশাল্লাহ, এবারের আমরা নতুন বাজেট দিতে যাচ্ছি আগামী জুন মাসে। জুন মাসে ঈদ পড়ে গেছে। যে কারণে আমরা ১৩ জুন পার্লামেন্টে বাজেট উপস্থাপন করব। এবারের ৫ লাখ কোটি টাকার ওপরে আমাদের এই বাজেট হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন বাজেট; সে উন্নয়ন বাজেট পেয়ছিলাম মাত্র ১৮ থেকে ১৯ হাজার কোটি টাকা। আজকে আমরা ২ লাখ কোটি টাকার ওপরে উন্নয়ন বাজেট প্রণয়ন করছি। অখ্যাত বাংলাদেশের উন্নয়নটটা আজকে সমগ্র দেশব্যাপী। উন্নয়ন তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। প্রতিটি গ্রামের মানুষ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, তাদের অন্ন বস্ত্র বাসস্থান, শিক্ষা চিকিৎসা; সব ব্যবস্থাগুলো করে দিচ্ছি এবং একটা মানুষও গৃহহারা থাকবে না। কেউ বিনা চিকিৎসায় থাকবে না, কেউ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে না। প্রত্যেকটি মানুষ তার মৌলিক অধিকার পূর্ণ করবে। যে মৌলিক অধিকারের কথা জাতির পিতা সংবিধানে বর্ণনা করে গেছেন। আমরা তারই আলোকে এদেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি।’

জনগণ ভোট দিয়ে সরকার গঠন করে দেশবাসীর সেবা করার সুযোগ প্রদানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ক্ষমতা আমার কাছে ভোগের বস্তু নয়, ক্ষমতা হচ্ছে মানুষের সেবা করার একটা সুযোগ। আর সেই কথা চিন্তা করেই দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। যার শুভ ফলটা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য এই স্বাধীনতার সুফল বাংলাদেশেরর প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছানো। প্রতিটি মানুষ যেন উন্নত জীবন পায়। আজকে শতকরা ৯৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। মানুষের জীবন মান উন্নত হচ্ছে। দারিদ্রের হার ২০০৯ সালে পেয়েছিলাম ৪১ ভাগ। আজকে আমরা তা ২১ ভাগে নামিয়ে এনেছি। ইনশাল্লাহ, এই বাংলাদেশে হত দরিদ্র বলে কিছু থাকবে না। দারিদ্রের হার আরও কমিয়ে ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুুর জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২০ থেকে ২০২১ আমরা মুজিববর্ষ ঘোষণা দিয়েছি। ইনশাল্লাহ, বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্র্যমুক্ত করব। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত সমৃদ্ধ দেশ।২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবার্ষিকী উদযাপন করব। আমি জানি, তখন আমরা বেঁচে থাকব না। কিন্তু আমাদের আগামী প্রজন্ম তারা বেঁচে থাকবে। তারা একটি দেশ পাবে, যে দেশটি হবে উন্নত সমৃদ্ধ একটি দেশ।’

দেশবাসী ও নেতাকর্মীদের আগাম ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী ঈদ আপনারা ভালোভাবে উদযাপন করবেন। আমি দুঃখিত। এই ঈদে দেশে থাকতে পারব না। আমার জাপান সফর আছে। সেখান থেকে সৌদি আরব যাব। সেখান থেকে ফেরার পথে আমি আমার একটা নাতনি হয়েছে, শেখ রেহানার মেয়ের মেয়ে (টিউলিপ সিদ্দিক) হয়েছে। তাকে একটু দেখত যাব। এখন পর্যন্ত তাকে দেখিনি। সে জন্য হয়ত এবার দেশে থাকতে পারছি না।’

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিরোধী দলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মেসবাউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

আগত রাজনীতিবিদ ও অতিথিদের মধ্যে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, হুইপ ইকবালুর রহিম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। গণভবনে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানটি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগ, তাঁতী লীগ, ছাত্রলীগ ছাড়াও বিভিন্নস্তরের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে মিলনমেলায় পরিণত হয়ে ওঠে। গণভবনের বিশাল সবুজ লনের খোলা মাঠে ইফতার প্যান্ডেল করা হয়। ইফতার মাহফিলে দোয়া মোনাজাত করান বায়তুল মোকাররম মসজিদের সিবিয়র পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান।